ঢাকা, রবিবার, ৬ জুলাই ২০২৫, ২২ আষাঢ় ১৪৩২

ব্যাংকের ৫০ ভাগ স্বতন্ত্র পরিচালক বাধ্যতামূলক: গভর্নর

ডুয়া নিউজ- জাতীয়
২০২৫ জুলাই ০৬ ১৭:০৭:৪৬
ব্যাংকের ৫০ ভাগ স্বতন্ত্র পরিচালক বাধ্যতামূলক: গভর্নর

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর জানিয়েছেন ব্যাংক কোম্পানি আইন সংশোধন করে পরিচালনা পর্ষদে এক পরিবার থেকে সদস্য সংখ্যা কমানো এবং পর্ষদের অন্তত ৫০ শতাংশ স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে।

সম্প্রতি দ্য ডেইলি স্টারকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি ব্যাংকিং ও আর্থিক খাত সংস্কারে অন্তর্বর্তী সরকারের কর্মপরিকল্পনার কথা তুলে ধরেন।

বিদ্যমান ব্যাংক কোম্পানি (সংশোধন) আইন, ২০২৩ অনুযায়ী, এখন একটি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে এক পরিবার থেকে সর্বোচ্চ তিনজন পরিচালক থাকতে পারবেন, যা আগের সংখ্যার চেয়ে কম।

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর জানান, পরিচালনা পর্ষদে স্বতন্ত্র পরিচালকের সংখ্যা ৫০ শতাংশের বেশি হতে পারে। এদের নিয়োগের জন্য একটি প্যানেল গঠন করা হবে। প্যানেলের বাইরে থেকে কাউকে নিয়োগ দিতে হলে তাকে অত্যন্ত বিশিষ্ট ব্যক্তি হতে হবে এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন প্রয়োজন হবে।

পরিচালক নিয়োগের ক্ষেত্রে শিক্ষাগত যোগ্যতা, অভিজ্ঞতা ও ব্যাংকিং খাতের জ্ঞানকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে অর্থাৎ, পেশাদার ব্যক্তিকেই দায়িত্ব দেওয়া হবে।

দুর্বল অবস্থায় থাকা পাঁচটি বেসরকারি ব্যাংককে একীভূত করার প্রাথমিক পরিকল্পনা রয়েছে। এছাড়া, রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোকেও একীভূতকরণ প্রক্রিয়ায় অন্তর্ভুক্ত করা হবে। কিছু রাষ্ট্রীয় ব্যাংক প্রায় দেউলিয়া অবস্থায় রয়েছে, তাদেরও অন্তর্ভুক্ত করা হবে, অন্যদিকে কিছু ব্যাংক তুলনামূলক ভালো অবস্থায় থাকা দুর্বল ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হবে।

গভর্নর জোর দিয়ে বলেন, এই প্রক্রিয়া চলমান এবং সরকার পরিবর্তন বা ক্ষমতার সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক নেই। কোনো ব্যাংক সমস্যায় পড়লে কেন্দ্রীয় ব্যাংক হস্তক্ষেপ করবে।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সাবেক অর্থনীতিবিদ হিসেবে তিনি বলেন, ব্যাংকের উদ্যোক্তা-পরিচালকদের বোঝা উচিত যে ব্যর্থ হলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক তাদের সরিয়ে দিতে পারে। মালিকানা বলে তারা যা ইচ্ছা করতে পারবে না, কারণ ব্যাংক পরিচালনা হয় জনগণের টাকায়। দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এজন্য একটি বিশেষ বিভাগও গঠন করা হয়েছে।

ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান (এনবিএফআই) নিয়ে তিনি বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সমীক্ষায় অন্তত ১৫টি প্রতিষ্ঠান সম্পূর্ণ অকার্যকর অবস্থায় রয়েছে, যার খেলাপি ঋণ ৮০ থেকে ১০০ শতাংশের মধ্যে হতে পারে। মাত্র ১০টি প্রতিষ্ঠান ভালো অবস্থায় আছে। বাকি ২০টির বিরুদ্ধে লাইসেন্স স্থগিত না করার কারণ জানতে নোটিশ দেওয়া হয়েছে। তাদের অবসায়ন বা একীভূতকরণের মাধ্যমে সমাধান আনার পরিকল্পনা রয়েছে, যার জন্য প্রায় ৯ হাজার কোটি টাকা প্রয়োজন হতে পারে।

খেলাপি ঋণ আদায় দ্রুততর করতে অর্থঋণ আদালত আইনে সংশোধন ও বেঞ্চ সংখ্যা বৃদ্ধির পরিকল্পনা আছে, যাতে ৩ থেকে ৬ মাসের মধ্যে মামলার নিষ্পত্তি সম্ভব হয়। তবে বিষয়টি বিচার বিভাগীয় স্বাধীনতার কারণে প্রধান বিচারপতি ও সুপ্রিম কোর্টের সম্মতির ওপর নির্ভরশীল।

তিনি আর্থিক খাতের জন্য বিশেষায়িত 'জুডিশিয়াল ক্যাডার' গঠনের ওপরও জোর দিয়েছেন, যাতে খেলাপিরা রিট আবেদন করে মামলা দীর্ঘায়িত করতে না পারে।

পাঠকের মতামত:

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

সর্বোচ্চ পঠিত