ঢাকা, রবিবার, ৬ জুলাই ২০২৫, ২২ আষাঢ় ১৪৩২
বিএনপিতে নতুন উত্তেজনা: তারেক রহমানের ফেরা নিয়ে গুঞ্জন

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আ’লীগ সরকারের পতন হয়। তখন থেকেই বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) নেতাকর্মীদের মনে জেগে ওঠে নতুন আশা, এবার তাদের প্রিয় নেতা তারেক রহমান বীরের বেশে দেশে ফিরবেন।
প্রায় এক বছর হতে চললেও সেই প্রত্যাশিত প্রত্যাবর্তন ঘটেনি। ২০২৫ সালের জুলাই মাসে আবারও রাজনৈতিক অঙ্গনে জোরালো গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়েছে, তারেক রহমান শিগগিরই দেশে ফিরছেন। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে সেটা কবে? কোন তারিখে?
তারেক রহমানের দেশে ফেরার নির্দিষ্ট তারিখ এখনো বিএনপির নেতারা জানাতে পারছেন না। তাঁরা এখনো বারবার একই বক্তব্যই দিচ্ছেন শিগগিরই ফিরছেন তারেক রহমান।
দেশে ফেরা নিয়ে তারেক রহমানের বক্তব্য
গত ৩০ জুন পটুয়াখালী জেলা বিএনপির সম্মেলনে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তারেক রহমান ঘোষণা দেন, আমি খুব শিগগিরই দেশে ফিরছি। দেশের মানুষের অধিকার আদায়ে প্রয়োজন হলে যেকোনো ত্যাগ স্বীকারে আমি প্রস্তুত।
তার এই ঘোষণার পর বিএনপির রাজনীতিতে নতুন গতি সৃষ্টির সম্ভাবনা নিয়ে অনেকেই আশাবাদ প্রকাশ করছেন।
দেশে প্রত্যাবর্তনের চারটি সম্ভাব্য তারিখ
তারেক রহমানের দেশে প্রত্যাবর্তনের বিষয়ে বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারেক রহমানের দেশে ফেরার সম্ভাব্য সময়সূচি হিসেবে চারটি দিন আলোচিত হচ্ছে।
এর মধ্যে প্রথম দিন হচ্ছে আগামী ২৮ জুলাই। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের বর্ষপূর্তির ঠিক এক সপ্তাহ আগে তারেক রহমান দেশে ফিরতে পারেন।
দ্বিতীয় দিনটি হচ্ছে ৫ আগস্ট। দিনটিকে জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস ঘোষণা করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে গত বছরের এই দিনে শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন। এই দিনে তারেক রহমান দেশে ফিরতে পারেন বলে গুঞ্জন রয়েছে।
তৃতীয় দিনটি হতে পারে ডিসেম্বর থেকে আগামী বছরের জানুয়ারিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে বা পরে। তখন দেশে ফিরতে পারেন তারেক রহমান।
চতুর্থ দিনটি হতে পারে ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ঠিক আগে বা পরে। তারেক রহমান তখন বীরের বেশে দেশে ফিরতে পারেন।
তারেক রহমান থাকবেন কোথায়?
তারেক রহমান দেশে ফিরলে তিনি কোথায় থাকবেন এ নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে জোর আলোচনা চলছে। গুঞ্জন রয়েছে, রাজধানীর চারটি বাড়ির যেকোনো একটিতে থাকতে পারেন তিনি।
১৯৬ নম্বরের বাসায় চলছে সংস্কারকাজ
চারটি বাড়ির মধ্যে গুলশান-২ অ্যাভিনিউ রোডের ১৯৬ নম্বর বাড়ি নিয়ে আলোচনা হচ্ছে বেশি। বাড়ির ভেতরে-বাইরে রং করাসহ প্রয়োজনীয় সংস্কারকাজ চলছে।
১৯৮১ সালের ৩০ মে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের শাহাদাত বরণের পরে তার স্ত্রী খালেদা জিয়ার নামে গুলশানের ১৯৬ নম্বর বাসা এবং ঢাকা সেনানিবাসে শহীদ মইনুল হোসেন সড়কে একটি বাসা বরাদ্দ দিয়েছিল রাষ্ট্রপতি আবদুস সাত্তার সরকার।
১৯৬ নম্বরের বাসাটি এত বছর নামজারি করা ছিল না। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গত ৪ জুন বাড়িটির নামজারির কাগজ খালেদা জিয়ার হাতে তুলে দেয়।
বাড়িটিতে আগে ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো কোম্পানির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ভাড়া থাকতেন। ছয় মাস আগে তিনি বাড়িটি ছেড়ে দেন। এরপরই তারেক রহমানের থাকার উপযোগী করতে প্রয়োজনীয় সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়।
ফিরোজায় আছেন খালেদা জিয়া
এদিকে ঢাকা সেনানিবাসের যে বাড়িতে আগে খালেদা জিয়া থাকতেন, সেই বাসার বরাদ্দ শেখ হাসিনার সরকারের সময় বাতিল করা হয়। এরপর তিনি গুলশানের ফিরোজা নামের ভাড়া বাসায় উঠেন। ফিরোজার পাশেই ১৯৬ নম্বর একটি বাড়ি রয়েছে সেখানে মায়ের সঙ্গে থাকতে পারেন তারেক রহমান, এমন সম্ভাবনার কথাও শোনা যাচ্ছে।
এছাড়া বারিধারা ডিওএইচএস ও ধানমণ্ডিতে তার স্ত্রী ডা. জুবাইদা রহমানের পৈতৃক বাড়ি রয়েছে। রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনা চলছে, দেশে ফিরলে সেখানেও থাকতে পারেন তারেক রহমান।
বিএনপির শীর্ষ নেতাদের বক্তব্য
তারেক রহমানের দেশে ফেরা নিয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গত বছরের আগস্টে বলেন, তারেক রহমান আমাদের দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে দেশে ফিরে এসে দলের নেতৃত্ব দেবেন। আমরা তার প্রত্যাবর্তনকে গুরুত্ব দিয়ে দেখছি এবং আশা করছি শিগগিরই তিনি দেশে আসবেন।
গত ১০ জুন গুলশানে একই বক্তব্যে মির্জা ফখরুল যোগ করেন, তারেক রহমান অবশ্যই দেশে ফিরবেন। তিনি খুব শিগগিরই ফিরছেন।
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি গত ২৬ জুন ঢাকায় মিট দ্য প্রেস অনুষ্ঠানে বলেন, তারেক রহমান খুব শিগগিরই দেশে ফিরবেন। আমরা শুধু দলের মধ্যে নয়, জাতীয় পর্যায়েও প্রস্তুতি নিচ্ছি।
এরপর ৫ জুলাই বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন আহমেদ বলেন, তারেক রহমানের দেশে ফেরার দিনক্ষণ নিয়ে প্রচারিত তথ্যের কোনো সত্যতা নেই। তবে শিগগিরই তিনি দেশে ফিরবেন। নির্বাচনের প্রক্রিয়া শুরু না হলে দেশে ফিরবেন না।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, তারেক রহমানের দেশে ফেরার প্রস্তুতি চলছে। দেশে ফিরতে আইনগত বা রাজনৈতিক কোনো বাধা নেই। চ্যালেঞ্জ হচ্ছে উনার নিজের সিদ্ধান্ত নেওয়া, সময় ঠিক করা। কারণ এত বছর বিদেশে থাকার সুবিধা-অসুবিধা, পারিবারিক ও রাজনৈতিক বিষয় আছে, যা উনি ভালোভাবে বুঝবেন। আমি বলতে পারি, উনি আসার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন, যেদিন তিনি দিন ডিক্লেয়ার করবেন সবাই জানবেন।
তারেক রহমানের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্নের জবাবে আমীর খসরু বলেন, শঙ্কার কথা না থাকলেও তারেক রহমানের মতো লেভেলের নেতার নিরাপত্তা বিষয়ে বিবেচনা রাখা স্বাভাবিক। উনি ফ্যাসিস্টদের বিরুদ্ধে সারাদেশে আন্দোলন চালিয়েছেন।
দেশে ফিরতে বাধা নেই
ওয়ান-ইলেভেন সরকারের সময় ২০০৭ সালের ৭ মার্চ গ্রেপ্তার হন তারেক রহমান। এরপর ২০০৮ সালের ৩ সেপ্টেম্বর জামিনে মুক্তি পেয়ে ১১ সেপ্টেম্বর সপরিবারে চিকিৎসার জন্য লন্ডনে যান এবং তখন থেকেই তিনি সেখানেই বসবাস করছেন। লন্ডনে অবস্থানকালে ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়া কারাবন্দি হওয়ার পর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পান তিনি।
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পদত্যাগ করার পর তারেক রহমান সব মামলায় খালাস ও অব্যাহতি লাভ করেন। বর্তমানে তার দেশে ফেরার পথে কোনো আইনি জটিলতা নেই বলে সরকার জানিয়েছে।
সম্প্রতি স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী জানিয়েছেন, তারেক রহমানের দেশে ফেরায় এখন কোনো বিধিবদ্ধ বাধা নেই।
পাঠকের মতামত:
সর্বোচ্চ পঠিত
- আট কোম্পানির উদ্যোক্তাদের নিয়ন্ত্রণে ৮০ শতাংশের বেশি শেয়ার
- ঢাবি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের বৃত্তি : সাক্ষাৎকার যেদিন শুরু
- ফার্স্ট সিকিউরিটি ব্যাংকের ১১০ কোটি টাকার খেলাপি গ্রাহক গ্রেপ্তার
- ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে ১২ কোম্পানি
- এক কোম্পানির যাদুতেই শেয়ারবাজারে উত্থান!
- প্রথম প্রান্তিকের ইপিএস প্রকাশ করেছে পাঁচ কোম্পানি
- ২১ বস্ত্র কোম্পানিতে প্রাতিষ্ঠানিক মালিকানা নজরকাড়া তলানিতে
- ‘শেয়ারবাজারের মাঠ খেলার জন্য পুরোদমে প্রস্তুত’
- নভেম্বর-ডিসেম্বরে হতে পারে ঢাবির ৫৪তম সমাবর্তন
- হিরোশিমার চেয়ে ৬ গুণ শক্তিশালী বোমা ফেললো ইসরাইল
- ঢাবি অ্যালামনাইয়ের বৃত্তির সাক্ষাৎকার নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য
- ১৭ কোম্পানি শেয়ারে সফল বিনিয়োগ, ২০ শতাংশের বেশি মুনাফা
- শেয়ারবাজারের ৯ ব্যাংকের সম্পদ যাচাই করবে বাংলাদেশ ব্যাংক
- ১৩ বীমায় প্রাতিষ্ঠানিক মালিকানা তলানিতে, ১০% শতাংশের নিচে শেয়ার
- পদোন্নতি পাবেন না যেসব সরকারি কর্মকর্তারা