ঢাকা, রবিবার, ৬ জুলাই ২০২৫, ২২ আষাঢ় ১৪৩২
সংস্কার প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নিতে আমরা সহযোগিতা করছি: ফখরুল

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কার্যক্রম নিয়ে যেমন জনগণের মধ্যে আগ্রহ ও প্রত্যাশা রয়েছে, তেমনি রয়েছে হতাশা ও উদ্বেগও। বিএনপির পক্ষ থেকে ৬টি সংস্কার কমিশনের কার্যক্রমে সক্রিয় অংশগ্রহণের পাশাপাশি ঐকমত্য কমিশনের প্রতিদিনের আলোচনায় দলের প্রতিনিধিরা নিয়মিতভাবে অংশ নিচ্ছেন বলে জানান তিনি।
রোববার (৬ জুলাই) দুপুরে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। কমিশন ও সংস্কার প্রক্রিয়া নিয়ে দলের অবস্থান স্পষ্ট করতে গিয়ে তিনি বলেন, বিভিন্ন বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছাতে আমাদের প্রতিনিধিরা অন্যান্য রাজনৈতিক দলের সঙ্গে গঠনমূলক আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন। অনেক ক্ষেত্রেই ছাড় দিয়ে হলেও ঐকমত্য প্রতিষ্ঠায় সহযোগিতা করছেন।
তবে দীর্ঘ আলোচনার পর সংস্কার কমিশনগুলো যে প্রস্তাব দিয়েছে, তার বিপরীতে নতুন নতুন প্রস্তাব উত্থাপন ও তাতে অচলাবস্থা তৈরির কারণে প্রক্রিয়াটি ধীরগতিতে চলছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
মির্জা ফখরুল আরও বলেন, রাষ্ট্র পরিচালনায় গুরুত্বপূর্ণ কিছু প্রতিষ্ঠানকে শক্তিশালী করার আড়ালে জনগণের নির্বাচিত সংসদ, সরকার এবং সামগ্রিক রাষ্ট্র কাঠামোকে দুর্বল করার কিছু প্রস্তাব সংস্কারের উদ্দেশ্যের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। বিএনপি এমন কোনো উদ্যোগের সঙ্গে একমত নয়, বরং প্রকৃত অর্থে সংস্কার প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নিতে আমরা গঠনমূলক সহযোগিতা করে যাচ্ছি।
প্রতিটি কমিশনে বিএনপির অবস্থান-
পুলিশ সংস্কার কমিশন:
র্যাব বিলুপ্তিসহ অধিকাংশ প্রস্তাবে ঐকমত্য হয়েছে, তবে কমিশনের আলোচনায় বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে ওঠেনি।
দুদক সংস্কার কমিশন:
৪৭টি সুপারিশের মধ্যে ৪৬টিতে বিএনপি একমত হয়েছে। কেবল ২৯ নম্বর সুপারিশে ভিন্নমত, যেখানে তারা আদালতের অনুমতি ছাড়াই তদন্তের প্রস্তাবের বিরোধিতা করেছে।
জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন:
২০৮টি সুপারিশের মধ্যে ১৮৭টিতে একমত, ৫টিতে আংশিক একমত, এবং ১১টিতে ভিন্নমত।
বিচার বিভাগীয় সংস্কার কমিশন:
৮৯টি সুপারিশের মধ্যে ৬২টিতে একমত, ৯টিতে আংশিক এবং ১৮টিতে যুক্তিসহ ভিন্নমত। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা সংক্রান্ত সব প্রস্তাবে বিএনপি একমত।
নির্বাচনি ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন:
২৪৩টি সুপারিশের মধ্যে ১৪১টিতে একমত, ১৪টিতে আংশিক একমত, এবং ৬৪টিতে সংশোধনীসহ একমত। ২৪টি সুপারিশে একমত হয়নি।
সংবিধান সংস্কার কমিশন:
১৩১টি সুপারিশে দফাওয়ারি মতামত দিয়েছে বিএনপি। ৭০ অনুচ্ছেদ ও প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ নির্ধারণে তারা ছাড় দিয়েছে। এ ছাড়া রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা (আর্টিকেল ৪৯), তত্ত্বাবধায়ক সরকার, ন্যায়পাল আইন, সংসদীয় আসন সীমানা সংশোধন ও হাইকোর্ট বেঞ্চ নিয়েও বিএনপি সম্মত হয়েছে।
বৃহত্তর প্রেক্ষাপট:
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নিতে আমরা অনেক বাস্তবায়ন-জটিল প্রস্তাবেও সম্মতি জানিয়েছি। তবে সাম্প্রতিক সময়ে যে নতুন প্রস্তাবগুলো উঠছে, সেগুলোর প্রভাব রাষ্ট্র, রাজনীতি ও সংসদীয় কাঠামোর ওপর গভীর ও সুদূরপ্রসারী হতে পারে। জনগণের মতামত ছাড়াই এমন বড় পরিবর্তন কীভাবে আনা যায় সে প্রশ্ন এখন বিবেচনার দাবি রাখে।
তিনি আরও বলেন, বিএনপি একদিকে স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে সংগঠিত লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে শক্তিশালী রাজনৈতিক দল হয়ে উঠেছে, অপরদিকে ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের ছাত্র-শ্রমিক-জনতার গণঅভ্যুত্থানের চেতনা ধারণ করে আমরা একটি বৈষম্যহীন, মানবিক ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গঠনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে ফখরুল বলেন, যেমন অতিরিক্ত ক্ষমতা ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের হাতে কেন্দ্রীভূত হলে ফ্যাসিবাদের জন্ম হয়, তেমনি জনগণের নির্বাচিত সরকার ও সংসদকে ক্ষমতাহীন করলে গোটা রাষ্ট্র কাঠামো দুর্বল হয়ে পড়ে। এই গুরুত্বপূর্ণ সময় যেন আমরা দলীয় হিসাব-নিকাশ নয়, বরং জনগণের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নের দিকেই নজর দিই।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ ও নজরুল ইসলাম খান উপস্থিত ছিলেন।
পাঠকের মতামত:
সর্বোচ্চ পঠিত
- আট কোম্পানির উদ্যোক্তাদের নিয়ন্ত্রণে ৮০ শতাংশের বেশি শেয়ার
- ঢাবি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের বৃত্তি : সাক্ষাৎকার যেদিন শুরু
- ফার্স্ট সিকিউরিটি ব্যাংকের ১১০ কোটি টাকার খেলাপি গ্রাহক গ্রেপ্তার
- ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে ১২ কোম্পানি
- এক কোম্পানির যাদুতেই শেয়ারবাজারে উত্থান!
- প্রথম প্রান্তিকের ইপিএস প্রকাশ করেছে পাঁচ কোম্পানি
- ২১ বস্ত্র কোম্পানিতে প্রাতিষ্ঠানিক মালিকানা নজরকাড়া তলানিতে
- ‘শেয়ারবাজারের মাঠ খেলার জন্য পুরোদমে প্রস্তুত’
- হিরোশিমার চেয়ে ৬ গুণ শক্তিশালী বোমা ফেললো ইসরাইল
- ঢাবি অ্যালামনাইয়ের বৃত্তির সাক্ষাৎকার নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য
- ১৭ কোম্পানি শেয়ারে সফল বিনিয়োগ, ২০ শতাংশের বেশি মুনাফা
- শেয়ারবাজারের ৯ ব্যাংকের সম্পদ যাচাই করবে বাংলাদেশ ব্যাংক
- নভেম্বর-ডিসেম্বরে হতে পারে ঢাবির ৫৪তম সমাবর্তন
- ১৩ বীমায় প্রাতিষ্ঠানিক মালিকানা তলানিতে, ১০% শতাংশের নিচে শেয়ার
- পদোন্নতি পাবেন না যেসব সরকারি কর্মকর্তারা