ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৯ আগস্ট ২০২৫, ৩ ভাদ্র ১৪৩২
বনের স্কুলের গল্পে শিক্ষা ব্যবস্থার প্রতিচ্ছবি

বনের রাজা সিংহ মহাধুমধামে ঘোষণা করলেন এক নতুন রাজকীয় ফরমান: আর কোনো শিশু নিরক্ষর থাকবে না! প্রতিটি শিশুর জন্য নিশ্চিত করা হবে সঠিক শিক্ষা, আর এর জন্য বনের প্রতিটি ছেলেমেয়েকে বাধ্যতামূলকভাবে স্কুলে পাঠাতে হবে। পড়াশোনা শেষে সবাইকে হাতে তুলে দেওয়া হবে গর্বের সার্টিফিকেট। এটাই ছিল রাজার অটল প্রতিজ্ঞা।
শুরু হলো শিক্ষা অভিযান! হাতির বাচ্চা, বাঁদর, কচ্ছপ, উট, হরিণ, মাছ, জিরাফ—সবাই স্কুলে ভর্তি হলো। ধুমধাম করে চলতে লাগল পড়ালেখা।
প্রথম ক্লাস টেস্টের রেজাল্ট বের হতেই দেখা গেল হাতির বাচ্চা ফেল! "কোন সাবজেক্টে ফেল?" হাতি এসে উদ্বিগ্ন হয়ে প্রশ্ন করে। স্কুল কর্তৃপক্ষের জবাব, "গাছে ওঠা সাবজেক্টে।"
হাতি পড়ল মহা চিন্তায়। তার ছেলে ফেল? এটা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। সন্তানের শিক্ষার ব্যাপারে কোনো রকম আপস করা যাবে না, তাই ভালো টিউটর নিয়োগ করতে হবে। হাতির এখন একটাই টেনশন: যেভাবেই হোক, ছেলেকে গাছে চড়া শেখাতে হবে! 'গাছে ওঠা' সাবজেক্টে তাকে টপার করে তুলতে হবে।
এরপর ফার্স্ট ইয়ার ফাইনালের রেজাল্ট বের হলো। দেখা গেল হাতি, উট, জিরাফ, মাছ—সবার বাচ্চাই ফেল। শুধু বাঁদরের বাচ্চা টপার হয়েছে। প্রকাশ্য মঞ্চে বিভিন্ন অতিথিদের আমন্ত্রণ করে বিশাল অনুষ্ঠান আয়োজন করা হলো এবং সেখানে টপার হিসাবে বাঁদরের বাচ্চার গলায় মেডেল পরিয়ে দেওয়া হলো।
চূড়ান্ত অপমানিত হয়ে হাতি, উট, জিরাফ নিজ নিজ সন্তানকে বেদম পিটুনি দিল। "এত টিউশন, এত খরচ, এর পরেও এই রেজাল্ট!" হাতি তার ছেলেকে ধমক দেয়, "ফাঁকিবাজ, এত চেষ্টা করেও তোর দ্বারা গাছে চড়া সম্ভব হলো না? অপদার্থ কোথাকার। বাঁদরের বাচ্চার কাছ থেকে শিক্ষা নে, কিভাবে গাছে চড়তে হয়!"
ফেল কিন্তু মাছের ছেলেও হয়ে গেছে। সে আবার প্রত্যেক সাবজেক্টে ফেল, কেবলমাত্র সাঁতার কাটা ছাড়া। প্রিন্সিপাল বলল, "আপনার সন্তানের অ্যাটেন্ডেন্স প্রবলেম। পাঁচ মিনিটের বেশি ক্লাসে থাকতে পারে না।" মাছ নিজের সন্তানের দিকে ক্রোধান্বিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। ছেলে বলে, "মা, দম নিতে পারি না, ভীষণ কষ্ট হয়। আমার জন্য জলের মধ্যে কোনো স্কুল দেখলে হতো না?" মা রেগে গিয়ে বলে, "চুপ কর বেয়াদব। এত ভালো স্কুল আর কোথাও পাবি? পড়াশোনায় মন দে, স্কুল নিয়ে তোকে ভাবতে হবে না!"
হাতি, উট, জিরাফ, নিজের নিজের ফেল করা বাচ্চাকে ধোলাই দিতে দিতে বাড়ি ফিরে চলেছে। পথের মধ্যে শিয়ালের সঙ্গে দেখা।
শিয়াল বলে, "কি হয়েছে সেটা তো বলো!"
হাতি বলে, "এত বড় শরীর নিয়ে গাছে চড়তে পারল না। বাঁদরের ছেলে টপার হলো, মান-ইজ্জত কিছুই অবশিষ্ট থাকল না!"
শিয়াল অট্টহাসিতে ফেটে পড়ে। কোনোমতে হাসি থামিয়ে সে বলে, "তোমাদের গাছে চড়ার কী প্রয়োজন সেটাই তো বুঝতে পারলাম না। শোনো হাতি ভায়া, তুমি নিজের বিশালাকার শুঁড় উঠিয়ে ধরো, গাছের সবচেয়ে বড় ফলটি পেড়ে খাও। তোমার গাছে ওঠার কী দরকার?"
"উট ভাই, তোমার অনেক উঁচু ঘাড় রয়েছে। ঘাড় বাড়িয়ে দাও, গাছের সেরা ফলপাতাগুলো পেড়ে খাও।"
"আর শোনো বোন মাছ, তোমার সন্তানকে নদীর স্কুলে ভর্তি করে দাও। ওকে মন ভরে সাঁতার কাটতে শেখাও। দেখবে একদিন তোমার ছেলে নদী অতিক্রম করে সমুদ্রে পাড়ি দেবে। সাত সমুদ্র পার করে তোমার নাম উজ্জ্বল করবে। ওকে রাজার স্কুলে মোটেও পাঠিও না। ও মারা যাবে।"
এই গল্প আমাদের একটি মূল্যবান বার্তা দেয়। সেটি হলো-শিক্ষা আমাদের সন্তানদের ভবিষ্যতের জন্য, শিক্ষার মাপকাঠিতে তাদের আবদ্ধ রাখার জন্য নয়। প্রতিটি শিশুর ভেতরেই লুকিয়ে আছে নিজস্ব প্রতিভা আর বিশেষত্ব। অভিভাবক হিসেবে আমাদের আসল কাজ হলো, সেই অনন্য গুণটিকে খুঁজে বের করা, তাকে লালন করা এবং সঠিক পথে পরিচালিত করা। যখন আমরা এই কাজটি করতে পারব, তখন দেখব শিশুরা নিজেরাই তাদের নিজস্ব পথ খুঁজে নেবে এবং সেখানে তারা সফলতার শিখরে আরোহণ করবে।
পাঠকের মতামত:
সর্বোচ্চ পঠিত
- হলে ঢাবি ছাত্রীর হঠাৎ অসুস্থতা, হাসপাতালে মৃত্যু
- মার্জিন ঋণে মিউচুয়াল ফান্ড ও বন্ডে বিনিয়োগ করা যাবে না
- ‘পদত্যাগ করতে পারেন ড. ইউনূস’
- বিদেশি বিনিয়োগকারীদের পছন্দের শীর্ষে পাঁচ শেয়ার
- শেয়ারবাজারের ৬ ব্যাংকের রেকর্ড মুনাফা, ৫ ব্যাংকের লোকসান
- ঢাবির হলে 'গাঁ’জার আসর', চার শিক্ষার্থীকে আটক
- ১২ আগস্ট : শেয়ারবাজারের সেরা ৯ খবর
- মার্জিন ঋণ নিয়ে গুজব: ফের অস্থির শেয়ারবাজার
- বাংলাদেশ ব্যাংকের ‘লাল তালিকা’য় ২০ আর্থিক প্রতিষ্ঠান
- দুই কোম্পানির অস্বাভাবিক শেয়ারদর: ডিএসইর সতর্কবার্তা জারি
- অস্বাভাবিক শেয়ার দাম: ডিএসইর সতর্কবার্তা জারি
- ভালুকায় প্রথম পাঁচতারা হোটেল চালু করছে বেস্ট হোল্ডিংস
- বেক্সিমকো-বেক্সিমকো ফার্মাসহ চার ব্যক্তি-এক প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা-সতর্ক
- সামিটের বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র কিনছে আরব আমিরাতের কোম্পানি
- বেসরকারি হাসপাতাল মালিকদের নতুন কমিটির অভিষেক শনিবার