ঢাকা, শনিবার, ২৮ জুন ২০২৫, ১৪ আষাঢ় ১৪৩২

বাংলাদেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিতে  ইইউর দ্বারে ইউক্রেন

ডুয়া নিউজ- আন্তর্জাতিক
২০২৫ জুন ২৭ ১৬:০৩:২৬
বাংলাদেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিতে  ইইউর দ্বারে ইউক্রেন

রাশিয়া অধিকৃত ইউক্রেনীয় অঞ্চল থেকে গম আমদানি করছে বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠানগুলো—এমন অভিযোগে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) কাছে নিষেধাজ্ঞার অনুরোধ করতে যাচ্ছে ইউক্রেন। বার্তাসংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এমন তথ্য।

ইউক্রেনের দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক এক সিনিয়র কূটনীতিক জানান, বহুবার সতর্ক করার পরও বাংলাদেশ এ ধরনের আমদানি কার্যক্রম বন্ধ না করায় বিষয়টি ইইউতে উত্থাপন করা হবে। তার ভাষায়, “এটা আমাদের জন্য বাধ্যতামূলক পদক্ষেপ হয়ে দাঁড়িয়েছে।”

২০১৪ সাল থেকেই রাশিয়া ইউক্রেনের দক্ষিণাঞ্চলের বিস্তীর্ণ কৃষিভূমি দখলে রেখেছে। ২০২২ সালের আগ্রাসনের আগেই ইউক্রেন অভিযোগ করেছিল, রাশিয়া এসব দখলকৃত অঞ্চল থেকে গম চুরি করে রপ্তানি করছে। তবে রাশিয়ার দাবি এখন এসব অঞ্চল তাদের নিয়ন্ত্রণে এবং সেখানকার গম নিজেদের সম্পদ।

রয়টার্সের হাতে থাকা নথি অনুযায়ী, ইউক্রেনের নয়াদিল্লি দূতাবাস চলতি বছর বাংলাদেশ সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে একাধিক চিঠি পাঠিয়েছে। এসব চিঠিতে কফকাজ বন্দর থেকে আমদানি হওয়া দেড় লাখ টনের বেশি গম প্রত্যাখ্যান করার আহ্বান জানানো হয়েছে যেগুলো ইউক্রেনের মতে চুরি করা।

ভারতে নিযুক্ত ইউক্রেনীয় রাষ্ট্রদূত ওলেক্সান্ডার পোলিশচুক বলেন, “চিঠিগুলোর কোনো জবাব ঢাকা দেয়নি। তাই এখন আমরা ইইউকে অনুরোধ করবো যাতে তারা ব্যবস্থা নেয়। আমাদের গোয়েন্দা তথ্যমতে, রাশিয়া তাদের গমের সঙ্গে অধিকৃত অঞ্চল থেকে সংগৃহীত গম মিশিয়ে রপ্তানি করছে।”

তিনি বলেন, “এটি আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন, এটি অপরাধ। আমরা তদন্ত প্রতিবেদন ইইউর সঙ্গে শেয়ার করবো এবং নিষেধাজ্ঞার অনুরোধ জানাবো।”

বাংলাদেশ ও রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় রয়টার্সের কোনো প্রশ্নের জবাব দেয়নি। তবে বাংলাদেশের খাদ্য মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেছেন, “ঢাকা কখনো রাশিয়া অধিকৃত অঞ্চল থেকে গম আমদানি করে না। বাংলাদেশ চুরি করা গম গ্রহণ করে না।”

প্রসঙ্গত, যুদ্ধবিধ্বস্ত হলেও ইউক্রেনের প্রধান রপ্তানি পণ্যের একটি হলো কৃষিপণ্য, বিশেষত গম। ২০২৪ সালের এপ্রিল মাসে ইউক্রেন একটি বিদেশি জাহাজ আটক করেছিল যেখানে তাদের অভিযোগ অনুযায়ী, চুরি করা গম ছিল। আগের বছরেও একই ধরনের ঘটনায় একটি জাহাজ জব্দ ও এর ক্যাপ্টেনকে আটক করা হয়েছিল।

ইইউ ইতোমধ্যে রাশিয়ার ‘ছায়া নৌবহরের’ ৩৪২টি জাহাজের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যেগুলো পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা এড়িয়ে তেল, অস্ত্র ও শস্য পরিবহন করে। রাশিয়া এসব নিষেধাজ্ঞাকে অবৈধ বলে মনে করে।

রয়টার্স জানায়, ইউক্রেনের দূতাবাস বাংলাদেশ সরকারকে চারটি চিঠি পাঠিয়েছে যাতে গম পরিবহণে ব্যবহৃত জাহাজগুলোর নাম, নিবন্ধন নম্বর, যাত্রার তারিখ এবং কফকাজ বন্দর থেকে বাংলাদেশের উদ্দেশ্যে ছাড়ার সময় উল্লেখ রয়েছে।

২০২৪ সালের নভেম্বর থেকে ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত যেসব জাহাজ কফকাজ বন্দর থেকে যাত্রা করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে সেগুলোর সম্ভাব্য আগমনের তারিখও জানানো হয়েছে।

১১ জুন পাঠানো সর্বশেষ চিঠিতে ইউক্রেন হুঁশিয়ারি দিয়েছে—‘চুরি করা গম আমদানি করলে বাংলাদেশকে কঠোর নিষেধাজ্ঞার মুখোমুখি হতে হতে পারে।’ এমনকি নিষেধাজ্ঞার আওতায় কেবল আমদানিকারক নয়, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও সরকারি কর্মকর্তারাও পড়তে পারেন বলে সতর্ক করা হয়।

ইইউর পররাষ্ট্র ও নিরাপত্তা নীতির মুখপাত্র আনিতা হিপার এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, “এই মুহূর্তে অভিযুক্ত জাহাজগুলো নিষেধাজ্ঞার আওতায় নেই। তবে তদন্তে যদি সত্যতা পাওয়া যায় তাহলে ভবিষ্যতে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।”

রাশিয়ার সূত্রমতে, ক্রিমিয়া বাদে রাশিয়ার নিয়ন্ত্রিত অন্য অঞ্চলগুলো ২০২৪ সালে দেশটির মোট গম উৎপাদনের প্রায় তিন শতাংশ সরবরাহ করেছে। রুশ কোম্পানি রুসঅ্যাগ্রোট্রান্স জানায়, মে মাসে বাংলাদেশ ছিল রাশিয়ার গমের চতুর্থ বৃহত্তম ক্রেতা।

রুশ এক ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “বন্দরে লোড করা গমের উৎপত্তি কোথায় তা নির্ধারণ করা খুব কঠিন। গম তো হীরা বা স্বর্ণ নয়!”

পাঠকের মতামত:

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

সর্বোচ্চ পঠিত

প্রধান উপদেষ্টাকে হ-ত্যার হুমকি দেওয়া ব্যক্তি গ্রেপ্তার

প্রধান উপদেষ্টাকে হ-ত্যার হুমকি দেওয়া ব্যক্তি গ্রেপ্তার

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে রক্তমাখা ছুরি প্রদর্শন করে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা, দেশের প্রধান বিচারপতি ও সেনাপ্রধানকে হত্যার হুমকি দেওয়ার অভিযোগে... বিস্তারিত

আইএসপিএবি'র ৭ দফা দাবি

আইএসপিএবি'র ৭ দফা দাবি

দেশীয় উদ্যোক্তাদের সুরক্ষাসহ ৭ দফা দাবি জানিয়েছে দেশের ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন আইএসপিএবি (ISPAB)। শনিবার (২৮ জুন) টেলিকম বিটে কর্মরত সাংবাদিকদের... বিস্তারিত