ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ জুন ২০২৫, ৩০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
বাংলাদেশি বাংশোদ্ভূত বিজ্ঞানীর যুগান্তকারী উদ্ভাবন

প্রাকৃতিক দুর্যোগে ভেঙে পড়া যোগাযোগ ব্যবস্থাই হয়ে দাঁড়ায় সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় অসংখ্য প্রাণ রক্ষায় যুগান্তকারী একটি প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত বিজ্ঞানী ড. এ এফ এম শাহেন শাহ। তুরস্কের ইলদিজ টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটির সহযোগী অধ্যাপক এবং ‘এআই অ্যান্ড নেক্সট জেনারেশন ওয়্যারলেস কমিউনিকেশন ল্যাব’-এর পরিচালক হিসেবে তিনি মাল্টি-ড্রোনভিত্তিক একটি ভ্রাম্যমাণ নেটওয়ার্ক তৈরি করেছেন। এটি ভূমিকম্প, বন্যা বা ঘূর্ণিঝড়ের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময়ও মোবাইল সংযোগ সচল রাখতে সক্ষম।
২০২৩ সালের কাহরামানমারাস ভূমিকম্পের অভিজ্ঞতা থেকেই এ প্রযুক্তির জন্ম বলে জানান ড. শাহেন শাহ। তিনি বলেন, "দুর্যোগে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ায় তুরস্কে হাজারো প্রাণ ঝরে যায়। বাংলাদেশেও একই অবস্থা দেখেছি। তখনই ভাবলাম, প্রযুক্তিকে মানবিক প্রয়োজনে কাজে লাগাতে হবে।"
এই প্রযুক্তির প্রধান আকর্ষণ হলো—আকাশে উড়তে থাকা ড্রোনগুলো মোবাইল বেস স্টেশনের মত কাজ করে। যখন নিচের সব মোবাইল টাওয়ার বন্ধ বা অচল থাকে, তখন এই বুদ্ধিমান ড্রোন নেটওয়ার্ক আকাশ থেকে মোবাইল ফোনের সাথে সংযোগ স্থাপন করে। এর ফলে দুর্গতরা তাদের অবস্থান জানাতে এবং সাহায্যের জন্য আবেদন পাঠাতে পারে।
শুধু তাই নয়, এই ড্রোন সিস্টেমে রয়েছে ফাইভ-জি ও ভবিষ্যতের প্রজন্মের প্রযুক্তির সমন্বয়। ড্রোনগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিজেদের অবস্থান পরিবর্তন করে নেটওয়ার্ক কাভারেজ নিশ্চিত করতে পারে। এটি একটি স্বচালিত ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় সমৃদ্ধ নেটওয়ার্ক ব্যবস্থা।
ড. শাহেন শাহের এই গবেষণাটি ইতিমধ্যেই আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান সাময়িকী ‘ড্রোনস জার্নাল’-এ প্রকাশ পেয়েছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংস্থাগুলো থেকে শুরু করে জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থাও এই প্রযুক্তিতে গভীর আগ্রহ দেখিয়েছে।
তিনি বলেন, "এটি এখন আর পরীক্ষাগারে সীমাবদ্ধ নয়—বাস্তবায়নের দ্বোরগোড়ায়।"
বাংলাদেশে প্রতি বছরই বন্যা, ঘূর্ণিঝড়সহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঘটে থাকে। এই প্রযুক্তি যদি সফলভাবে বাস্তবায়িত করা যায় তাহলে অসংখ্য প্রাণ রক্ষা করা সম্ভব হবে বলে জানান ড. শাহেন শাহ। তিনি চান বাংলাদেশ সরকার, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ এবং প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো যেন এই উদ্যোগে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে।
শিক্ষক, গবেষক ও উদ্ভাবক হিসেবে একযোগে কাজ করা এই বিজ্ঞানী বলেন, প্রযুক্তি কেবল বাণিজ্যিক বা সামরিক কাজে নয়, মানবিক প্রয়োজনে ব্যবহৃত হলে তার প্রকৃত মূল্য ফুটে ওঠে। তার নেতৃত্বে পরিচালিত গবেষণাগারে আন্তর্জাতিক একটি দল কাজ করছে যেখানে বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের গবেষক ও শিক্ষার্থীরা একসঙ্গে এই মানবিক উদ্যোগকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।
ড. শাহেন শাহ ২০২১ সালে আইটেক্স প্রতিযোগিতায় আন্তর্জাতিক স্বর্ণপদক লাভ করেন। তিনি বিশ্বের শীর্ষ ২ শতাংশ গবেষকের মধ্যে আছেন। এছাড়া আইইইই-এর সিনিয়র সদস্য এবং বাংলাদেশ ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটের আজীবন সদস্য হিসেবেও তিনি সুপরিচিত। যদিও তিনি তুরস্কে কর্মরত, তবে তার মন ও চিন্তা সর্বদা বাংলাদেশের কল্যাণে নিবেদিত।
তিনি বলেন, "আমি চাই আমার গবেষণা দেশের মানুষের কল্যাণে ব্যবহৃত হোক। বাংলাদেশ আমার শিকড়, আমার পরিচয়।"
দুর্যোগ যেন মৃত্যু নয়—এই বিশ্বাস থেকেই জন্ম নিয়েছে ড. শাহেন শাহের গবেষণা। তার ড্রোন প্রযুক্তি কেবল উদ্ধার নয়, জীবনের স্বপ্ন, আশ্রয় ও আশা ফিরিয়ে দিতে পারে। একদিন এই ড্রোন উড়বে বাংলাদেশের দুর্যোগাক্রান্ত আকাশে, আর আমরা গর্বের সঙ্গে বলব— ‘একজন বাংলাদেশিই এই নতুন আলো দিয়েছে।’
পাঠকের মতামত:
সর্বোচ্চ পঠিত
- ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণ: এক কোম্পানির শেয়ার কিনলেন উদ্যোক্তারা
- শেয়ারবাজারে বিস্ময়: এক লাখ টাকার শেয়ার ৮০ কোটি!
- বিনিয়োগকারীদের সর্বনাশ করেছে তালিকাভুক্ত দুই কোম্পানি
- বাংলাদেশের শেয়ারবাজারে দ্যুতি ছড়াচ্ছে ১৩ ‘বনেদি’ কোম্পানি
- মুনাফা থেকে লোকসানে তথ্য প্রযুক্তির দুই কোম্পানি
- শেয়ারবাজারের ১০ ব্যাংকে আমানত বেড়েছে ৩২ হাজার কোটি টাকা
- ডিভিডেন্ডের উপর উচ্চ কর: শেয়ারবাজারের স্থিতিশীলতা নিয়ে উদ্বেগ
- বড় আন্দোলনে নামছে ৩ 'দল'
- সত্যিই কি স্ট্রোক করেছেন মির্জা ফখরুল? যা জানা গেল
- মুনাফা বেড়েছে বিবিধ খাতের ৬ কোম্পানির
- ডিভিডেন্ড বেড়েছে শেয়ারবাজারের সাত ব্যাংকের
- ২৪ ঘণ্টায় করোনায় মৃ'ত্যু ৬
- ক্যাশ ফ্লো বেড়েছে ওষুধ খাতের ১৩ কোম্পানির
- মূলধনের বেশি রিজার্ভ জ্বালানি খাতের ১৪ কোম্পানির
- ফেসবুক কমেন্টকে কেন্দ্র করে ঢাবি ছাত্রের আ-ত্ম-হ-ত্যা