ঢাকা, সোমবার, ২ জুন ২০২৫, ১৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

বাজেটের প্রাক্কালে শেয়ারবাজারে আশার ঢেউ: সূচক ঊর্ধ্বমুখী

ডুয়া নিউজ- শেয়ারবাজার
২০২৫ জুন ০১ ১৫:০১:০৫
বাজেটের প্রাক্কালে শেয়ারবাজারে আশার ঢেউ: সূচক ঊর্ধ্বমুখী

টানা ছয় কার্যদিবস পতনের পর দেশের শেয়ারবাজারে গত সপ্তাহের শেষ কর্মদিবস বৃহস্পতিবার কিছুটা স্বস্তি ফিরে আসে। দিনটিতে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স বেড়েছিল সাড়ে ২২ পয়েন্ট। সূচকের এই উত্থান বাজারে আশার সঞ্চার করলেও তা স্থায়ী হবে কি না, সেই প্রশ্ন থেকেই গিয়েছিল।

নতুন সপ্তাহের শুরুতে আজ রোববার সূচক দিনের শুরুতে কিছুটা নিম্নমুখী হলেও পরবর্তীতে ঘুরে দাঁড়ায় এবং দিনশেষে বেড়ে যায় সাড়ে ৩০ পয়েন্টের বেশি। এ উত্থান বাজারে সম্ভাব্য বাজেট প্রণোদনা নিয়ে বিনিয়োগকারীদের প্রত্যাশারই প্রতিফলন।

রবিবার ডিএসইতে লেনদেনের পরিমাণ বৃহস্পতিবারের তুলনায় কিছুটা কমলেও বাজারে দুই শতাধিক প্রতিষ্ঠানের দাম বেড়েছে। এটি স্পষ্টভাবে নির্দেশ করে, বিনিয়োগকারীরা বাজারে সক্রিয় হয়েছেন এবং তাঁরা আশাবাদী মনোভাব পোষণ করছেন।

বাজেট ঘিরে প্রত্যাশা

আগামীকাল সোমবার (০২ জুন) ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট উপস্থাপন করা হবে। বাজেট কেমন হবে এবং তাতে শেয়ারবাজারের জন্য কী ধরনের প্রণোদনা থাকবে—এ নিয়ে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ব্যাপক কৌতূহল রয়েছে।

বাজার বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বাজেটে যেসব বিষয়গুলো থাকলে বাজারে ইতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে, তার মধ্যে অন্যতম হলো—তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর জন্য করহার হ্রাস ও করছাড় অব্যাহত রাখা, শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের ওপর কর রেয়াতের সীমা বাড়ানো, শেয়ারবাজার উন্নয়নে বিশেষ রিফাইন্যান্সিং তহবিল গঠন, দীর্ঘমেয়াদি ও স্থিতিশীল বিনিয়োগ উৎসাহিত করতে কর প্রণোদনা, রাইট শেয়ার ও আইপিওর প্রক্রিয়া সহজীকরণ, কোম্পানির লাভ না হলে ডিভিডেন্ড না দেওয়ার বাধ্যবাধকতা তুলে দেওয়া এবং শেয়ারবাজারে ব্যাংক ও ইনস্টিটিউশনের সক্রিয় অংশগ্রহণে উৎসাহ প্রদান।

বিশ্লেষকরা বলছেন, বাজেটে এ ধরণের প্রণোদনা অন্তর্ভুক্ত হলে বাজারে দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীলতা ফেরানো সম্ভব হবে। বর্তমানে বাজারে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা অনেকটাই নিষ্ক্রিয়। সঞ্চয়পত্র ও ব্যাংক আমানতের তুলনায় শেয়ারবাজার ধারাবাহিকভাবে আকর্ষণ হারাচ্ছে। তাই কর কাঠামো সহজ ও শেয়ারবাজারবান্ধব না হলে বাজারে নতুন বিনিয়োগকারী টানা কঠিন হয়ে যাবে।

বাজারের চ্যালেঞ্জ ও বাস্তবতা

বাজেটকে ঘিরে এ আশাবাদের মধ্যেও বাজারে একাধিক ঝুঁকি রয়ে গেছে। ব্যাংক খাতের লিকুইডিটি সংকট, ঋণ আদায়ে দুর্বলতা, বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ কমে যাওয়া, ডলার সংকট, বিদেশি বিনিয়োগকারীদের অনাগ্রহ এবং আইপিওতে দীর্ঘসূত্রতা বাজারে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। এছাড়া রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও মূল্যস্ফীতি শেয়ারবাজারের ওপর অনির্দেশ্য চাপ সৃষ্টি করছে।

বিনিয়োগকারীদের একাংশ মনে করছেন, শুধু প্রণোদনা ঘোষণাই যথেষ্ট নয়—প্রয়োজন সেগুলোর কার্যকর বাস্তবায়ন ও নিয়ন্ত্রক সংস্থার তদারকি শক্তিশালী করা। ইতিপূর্বে অনেক বাজেটে শেয়ারবাজারবান্ধব ভাষা ব্যবহার করা হলেও বাস্তবে তার প্রতিফলন দেখা যায়নি।

বর্তমানে দেশের শেয়ারবাজার এক ধরনের সন্ধিক্ষণে অবস্থান করছে। একদিকে রয়েছে পতনের ধকল ও বিনিয়োগকারীদের হতাশা, অন্যদিকে বাজেটকে কেন্দ্র করে আশা ও প্রত্যাশার দোলাচল। বাজেট যদি বাস্তবভিত্তিক ও বাজারবান্ধব হয়, তবে তা শেয়ারবাজারকে দীর্ঘমেয়াদে স্থিতিশীল ও গতিশীল করতে সহায়ক হতে পারে। এখন দেখার বিষয়, আগামীকাল বাজেট ঘোষণায় সেই আশার প্রতিফলন কতটা ঘটে।

বাজার পর্যালোচনায় দেখা যায়, আজ (০১ জুন) ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৩০.৪৮ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৬৬৮ পয়েন্টে। অন্য দুই সূচকের মধ্যে ডিএসইএস ৬.৪২ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ১৭ পয়েন্টে। আর ডিএসই-৩০ সূচক ১৭.৯৫ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করছে ১ হাজার ৭৪৭ পয়েন্টে।

আজ ডিএসইতে মোট ৪০২টি প্রতিষ্ঠান লেনদেনে অংশ নেয়। এর মধ্যে ২০৩টির দর বেড়েছে, ১১২টির দর কমেছে এবং ৮৭টির দর অপরিবর্তিত রয়েছে।

ডিএসইতে আজ মোট ২৩৬ কোটি ১৮ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ২৪৭ কোটি ৪২ লাখ টাকার। আগের দিনের তুলনায় লেনদেন কমেছে ১১ কোটি ২৪ লাখ টাকা।

অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) আজ ১০ কোটি ৫৬ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। আগেরদিন সিএসইতে ৮ কোটি ৮ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছিল।

আজ সিএসইতে লেনদেন হওয়া ১৬৪টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে শেয়ার ও ইউনিট দর বেড়েছে ৭৪টির, কমেছে ৬৩টির এবং পরিবর্তন হয়নি ২৭টির।

এদিন সিএসইর সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ৬৪.৭৭ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৩ হাজার ১১৬ পয়েন্টে। আগেরদিন সূচক সিএএসপিআই ২৬.২৩ পয়েন্ট বেড়েছিল।

পাঠকের মতামত:

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

সর্বোচ্চ পঠিত