ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৭ জুন ২০২৫, ৪ আষাঢ় ১৪৩২
বাজারের অবস্থা জানালেন ডিএসই প্রধান, আনিসুজ্জামানের সমাধানের আশ্বাস

ডুয়া নিউজ: দেশের শেয়ারবাজারের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের মাধ্যমে এটি শক্তিশালী ও সুদৃঢ় অবস্থানে পৌঁছানোর লক্ষ্য নিয়ে সরকার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেছে।
সোমবার (১৮ মে) ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) পরিদর্শনে এসে অংশীজনদের সঙ্গে এক সভায় প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ও শেয়ারবাজার উন্নয়ন কমিটির সভাপতি ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরী এ প্রতিশ্রুতি দেন।
সভায় উপস্থিত ছিলেন বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ, কমিশনার মো: মহসিন চৌধুরী, মো: আলী আকবর, শেয়ারবাজার সংস্কার বিষয়ক টাস্কফোর্সের সদস্যবৃন্দ, ডিএসইর পরিচালনা পর্ষদ ও ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ, ডিবিএ, সিডিবিএল, সিসিবিএল এর প্রতিনিধিবৃন্দ।
শেয়ারবাজারের বর্তমান অবস্থা ও সমস্যা: ডিএসইর চেয়ারম্যান মমিনুল ইসলাম দেশের শেয়ারবাজারের সামগ্রিক অবস্থা, কার্যক্রম ও কাঠামোগত চ্যালেঞ্জগুলো তুলে ধরেন। তিনি বলেন, মূল সমস্যা হলো অর্থনীতির সঙ্গে শেয়ারবাজারের মুখোমুখি অবস্থান, নিয়ন্ত্রক সংস্থার স্বাধীনতা, আইপিও প্রক্রিয়ার ডিজিটালাইজেশন, মূল্যায়ন ও নীতিমালা সহজীকরণ, উপযুক্ত রিপোর্টিং ও ডিসক্লোজার, মধ্যস্থতাকারীদের সক্ষমতা, ইনসাইডার ট্রেডিং, সার্ভেইল্যান্স ও নীতি সহায়তা। বর্তমানে শেয়ারবাজার পতনের বেশ কিছু কারণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, সরকারি সিকিউরিটিজের উচ্চ সুদের হার, করপোরেট প্রফিটের হ্রাস, নেগেটিভ ইক্যুইটি, টাকার অবমূল্যায়ন ও ম্যানিপুলেটরদের ভূমিকা এর জন্য দায়ী।
আস্থা বৃদ্ধির জন্য করণীয়: শেয়ারবাজারে আস্থা ফেরাতে বিভিন্ন সুপারিশ উপস্থাপন করেন। এর মধ্যে রয়েছে বিও হিসাবের ফি ছাড়, ব্যক্তিগত বিনিয়োগকারীদের ক্যাপিটাল গেইন ট্যাক্স মওকুফ, ব্রোকারেজ কমিশন হ্রাস, লভ্যাংশের উপর কর কমানো, নেগেটিভ ইক্যুইটির বোঝা কমানো, অগ্রিম আয়কর হ্রাস, ইনভেস্টর প্রটেকশন ফান্ডে লভ্যাংশ জমা, নেগেটিভ ইক্যুইটির প্রভিশনিং, মাসিক যৌথ সভার আয়োজন, কর ব্যবধান কমানো, বহুজাতিক ও শক্তিশালী কোম্পানি তালিকাভুক্তি, শেয়ারবাজারের ডিজিটালাইজেশন, কর মুক্ত অ্যাসেট ব্যাকড সিকিউরিটিজ এবং বড় ঋণের ক্ষেত্রে আইপিও/বন্ডের বাধ্যতামূলক মাধ্যমে মূলধন উত্তোলন।
ম্যাক্রো অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা: সরকারের বিভিন্ন সরকারি কোম্পানি বেসরকারীকরণ, ব্যাংক, বিমা, বিমানসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের তালিকাভুক্তি, সম্পদ সিকিউরিটাইজেশন ও সরকারি জমিতে আবাসন প্রকল্পের মাধ্যমে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও শেয়ারবাজারের শক্তিশালী ভিত্তি গড়ে তোলার পরিকল্পনা তুলে ধরা হয়। সরকার এসব উদ্যোগের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিকে আরও গতিশীল করতে চায়।
নীতি ও আইনের সংস্কার: শেয়ারবাজারের কার্যকারিতা বাড়াতে বিএসইসির জন্য স্টক এক্সচেঞ্জের প্রতিনিধি রাখার অনুরোধ জানানো হয়। ড. আনিসুজ্জামান বলেন, সরকার শেয়ারবাজারের উন্নয়ন ও সংস্কার নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। দেশের অর্থনীতি এখন ঘুরে দাঁড়াচ্ছে, বিদেশি ঋণ পরিশোধের ইতিবাচক প্রভাব পড়ছে। ২০২৬ সালে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ হবে। এ উত্তরণের জন্য শেয়ারবাজারের শক্ত ভিত্তি জরুরি। তিনি দক্ষিণ কোরিয়া ও ফিলিপাইনের উদাহরণ উল্লেখ করেন।
আইনি সংস্কার ও বাজার সম্প্রসারণ: বিএসইসির উদ্যোগে দ্রুত শেয়ারবাজারের আইন সংস্কার, পাবলিক ইস্যু রুলসের সংশোধন ও বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা দূরীকরণে অংশীদারদের সহযোগিতা চাওয়া হয়। একই সঙ্গে, বাজারের সমন্বয়, ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের সম্পৃক্ততা ও নতুন কোম্পানি তালিকাভুক্তির জন্য বিভিন্ন উদ্যোগের উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়।
অন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়: ক্যাপিটাল মার্কেট স্ট্রাকচার, এসএমই ও এটিবি মার্কেটের উন্নয়ন, বিও অ্যাকাউন্ট বৃদ্ধি, অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা বৃদ্ধি, ব্যাংকের উপর নির্ভরশীলতা কমানো, ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠির বাজারে সম্পৃক্ততা, সিসিবিএল বাস্তবায়ন, আইন সংস্কার, কর সুবিধা, সরকারি শেয়ারের বাজারে আনা, ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের ঋণ সহায়তা, ব্রোকারেজ কমিশন, ফিনান্সিয়াল লিটারেসি, মার্কেট পলিসি, নেগেটিভ ইক্যুইটি, সিসি একাউন্ট ও অন্যান্য বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়।
অতীত সমস্যা কাটিয়ে উঠতে ও ভবিষ্যতে দেশের অর্থনীতিকে আরও শক্তিশালী করতে সরকারের শেয়ারবাজারে ব্যাপক সংস্কার ও উন্নয়নের অঙ্গীকার ব্যক্ত হয়। অংশীদারদের সঙ্গে সমন্বয় ও সহযোগিতার মাধ্যমে এই লক্ষ্য অর্জনে একসঙ্গে কাজ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরী বলেন, সরকার দেশের শেয়ারবাজারকে আধুনিক, স্বচ্ছ ও শক্তিশালী করে তুলতে বিভিন্ন পরিকল্পনা ও উদ্যোগ বাস্তবায়নের জন্য দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। তিনি বলেন, শেয়ারবাজার উন্নয়নে আমার পক্ষ থেকে শতভাগ প্রয়াস থাকবে। তিনি এক্ষেত্রে সমন্বিত উদ্যোগ প্রত্যাশা করেন।
পাঠকের মতামত:
সর্বোচ্চ পঠিত
- শেয়ারবাজারে বিস্ময়: এক লাখ টাকার শেয়ার ৮০ কোটি!
- ডিভিডেন্ডের উপর উচ্চ কর: শেয়ারবাজারের স্থিতিশীলতা নিয়ে উদ্বেগ
- বদলে গেছে ধারণা, বিস্মিত ইসরায়েল
- শেয়ারবাজারের শর্ত পূরণে ৬০ কোম্পানিকে বিএসইসির আল্টিমেটাম
- মুনাফা থেকে লোকসানে তথ্য প্রযুক্তির দুই কোম্পানি
- মূলধন বাড়ানোর সিদ্ধান্ত শেয়ারবাজারের ১৩ ব্যাংকের
- শেয়ারবাজারের ১০ ব্যাংকে আমানত বেড়েছে ৩২ হাজার কোটি টাকা
- নীলক্ষেত হোস্টেল থেকে ঢাবির সাবেক শিক্ষার্থীর ম’রদেহ উদ্ধার
- ইরানকে হা-ম-লা বন্ধে প্রস্তাব
- ঢাবিতে হটাৎ ছাত্রলীগের বিক্ষোভ, ককটেল বি-স্ফো-র-ণ
- কারাগারে ফাঁসিতে ঝুললেন সেই অস্ত্রধারী আ’লীগ নেতা
- দুই বড় খবরের মধ্যে আজ খুলছে দেশের শেয়ারবাজার
- ডিভিডেন্ড বেড়েছে শেয়ারবাজারের সাত ব্যাংকের
- মূলধনের বেশি রিজার্ভ জ্বালানি খাতের ১৪ কোম্পানির
- মুনাফা বেড়েছে ১৮ জেনারেল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির