ঢাকা, শনিবার, ৪ অক্টোবর ২০২৫, ১৯ আশ্বিন ১৪৩২

একমি পেস্টিসাইডের শেয়ার কেলেঙ্কারি: তদন্তে নতুন মোড়

২০২৫ অক্টোবর ০৪ ১৭:২১:১০

একমি পেস্টিসাইডের শেয়ার কেলেঙ্কারি: তদন্তে নতুন মোড়

হাসান মাহমুদ ফারাবী: শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত একমি পেস্টিসাইড লিমিটেডের প্লেসমেন্ট শেয়ার ইস্যু নিয়ে বড় ধরনের অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। বিষয়টি তদন্ত করে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। তবে দুদকে পাঠানোর আগে অভিযুক্ত চার বিনিয়োগকারী নিজেদের অবস্থান ব্যাখ্যা করার সুযোগ চেয়ে বিএসইসিকে চিঠি দিয়েছেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, প্লেসমেন্ট শেয়ার ইস্যুতে একমি পেস্টিসাইডের পরিচালনা পর্ষদের ছয়জনসহ মোট ১৫ ব্যক্তি ও ছয় প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বিএসইসি সিদ্ধান্ত নেয়। অভিযোগ রয়েছে—কোনো অর্থ জমা না দিয়েই তাদের নামে শেয়ার বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

চিঠি দেওয়া চার বিনিয়োগকারীর মধ্যে তিনজন প্রাতিষ্ঠানিক ও একজন ব্যক্তি বিনিয়োগকারী। তারা হলেন—বেঙ্গল অ্যাসেট হোল্ডিংস লিমিটেড, চট্টগ্রাম প্লাস্টিক অ্যান্ড ফিশারিজ লিমিটেড, হেরিটেজ ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট লিমিটেড এবং ব্যক্তি বিনিয়োগকারী রুহুল আজাদ। তাদের দাবি, তারা নির্ধারিত অর্থের চেয়েও বেশি মূল্যে শেয়ার কিনেছেন, অথচ কমিশন তাদের ব্যাখ্যা না নিয়েই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

এর আগে গত ২৬ সেপ্টেম্বর বিএসইসি চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ বরাবর পাঠানো ওই চিঠিতে সংস্থার এনফোর্সমেন্ট বিভাগের যুগ্ম পরিচালক মাহমুদা শিরীনের বিশেষ দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়। সেখানে বিষয়টি পরিষ্কার করতে ব্যাখ্যা তলব করার এবং তদন্ত প্রতিবেদন ও কমিশন সভার প্রেস বিজ্ঞপ্তি সরবরাহের অনুরোধ জানানো হয়েছে।

অভিযোগ অনুযায়ী, একমি পেস্টিসাইড তালিকাভুক্ত হওয়ার আগে ওই তিন প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীর কাছ থেকে ১৪ কোটি টাকা নেয় কোম্পানি সংশ্লিষ্টরা। বিভিন্ন সময়ে কোম্পানির ব্যাংক হিসাব, ব্যবস্থাপনা পরিচালক রেজা-উর-রহমান সিনহা ও প্রধান অর্থ কর্মকর্তা সেলিম রেজার নামে বা তাদের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের নামে ওই অর্থ লেনদেন করা হয়।

এই অর্থের বিপরীতে তাদের নামে মোট ১ কোটি ১৩ লাখ ৯৪ হাজার ৩২৯টি শেয়ার (বোনাসসহ) ইস্যু করা হয়, যার মূল্য নির্ধারণ করা হয় ১১ কোটি ৩৯ লাখ ৪৩ হাজার টাকা। অর্থাৎ বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ২ কোটি ৬০ লাখ টাকার বেশি নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

এ বিষয়ে বিএসইসির মুখপাত্র আবুল কালাম বলেছেন, “আমাদের তদন্তে প্রমাণ পাওয়া গেছে, কেউ কেউ ভুয়া ব্যাংক ডকুমেন্টস জমা দিয়েছে, কেউ আংশিক টাকা পরিশোধ করেছে, আবার কেউ এক টাকাও না দিয়ে শেয়ার বরাদ্দ নিয়েছে। আমরা বিষয়টি দুদকে তদন্তের জন্য পাঠিয়েছি, তবে যারা টাকা দিয়েছে তাদের রিভিউয়ের সুযোগ রয়েছে।”

বিএসইসির ৯৭৩তম কমিশন সভায় গৃহীত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, শুধু ওই চার বিনিয়োগকারী নয়—কোম্পানি সংশ্লিষ্ট আরও ৬ জন পরিচালক ও কর্মকর্তা এবং আলোচিত ‘ছাগলকাণ্ডের’ মতিউর রহমানসহ ১১ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিতে দুদকে প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে।

অভিযুক্তদের মধ্যে রয়েছেন কোম্পানির চেয়ারম্যান শান্তা সিনহা, এমডি রেজা-উর-রহমান সিনহা, পরিচালক আহসান হাবিব সিনহা, কে এম হেলুয়ার, কোম্পানি সচিব সবুজ কুমার ঘোষ এবং সিএফও সেলিম রেজা।

অন্যদিকে, ব্যক্তি বিনিয়োগকারীদের মধ্যে রয়েছেন—মতিউর রহমান, মো. আফজাল হোসাইন, তোফাজ্জল হোসাইন ফরহাদ, জাবেদ এম মতিন, আঞ্জুমান আরা বেগম, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শেখ মোহাম্মদ সরোয়ার, তৌহিদা আক্তার ও রানা ইসলাম।

প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের মধ্যে রয়েছে এসকে টিমস অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, বিক্রমপুর পটেটো ফ্লেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড ও এনআরবি ইক্যুইটি ম্যানেজমেন্ট লিমিটেড।

প্রসঙ্গত, ১৫০ কোটি টাকার অনুমোদিত মূলধন নিয়ে গঠিত একমি পেস্টিসাইডের পরিশোধিত মূলধন ১৩৫ কোটি টাকা। ‘বি’ ক্যাটাগরির এ কোম্পানি ২০২১ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয়, যেখানে ৩ কোটি শেয়ার ইস্যু করে ৩০ কোটি টাকা সংগ্রহ করা হয়। পরবর্তীতে ওই অর্থ ব্যবহারে বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগও উঠে আসে।

এএসএম/

শেয়ারবাজারের বিশ্লেষণ ও ইনসাইড স্টোরি পেতে আমাদের পেজ ফলো করুন।

পাঠকের মতামত:

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

সর্বোচ্চ পঠিত