ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১০ আশ্বিন ১৪৩২

হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর পূর্ণাঙ্গ জীবন ও সিরাতের প্রাসঙ্গিকতা

২০২৫ সেপ্টেম্বর ২৩ ১৩:১৫:৪২

হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর পূর্ণাঙ্গ জীবন ও সিরাতের প্রাসঙ্গিকতা

মো: আবু তাহের নয়ন : দোজাহানের সরদার, বিশ্বনবী মুহাম্মদ (সা.) ছিলেন এমন এক পূর্ণাঙ্গ, সর্বশ্রেষ্ঠ ও অনন্য ব্যক্তিত্ব, যার ব্যক্তিত্বের সর্বাঙ্গীণতা, পরিপূর্ণতা ও সর্বজনীনতা মানবজীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রভাব বিস্তার করেছে। ইবাদত হোক বা লেনদেন, নৈতিকতা হোক বা সামাজিকতা, বিচারব্যবস্থা হোক বা রাজনীতি, রাষ্ট্রীয় নির্দেশনা হোক বা কূটনৈতিক সম্পর্ক, যুদ্ধ কৌশল হোক বা পারিবারিক সমস্যা—সবক্ষেত্রেই রহমতের মহানবী (সা.)-এর মহৎ চরিত্র পূর্ণাঙ্গ ও আদর্শ হিসেবে প্রকাশিত হয়। তাই সিরাতের অধ্যয়ন মানবজীবনের প্রতিটি দিককে আলোকিত ও সংরক্ষিত করেছে।

রাসুল (সা.)-এর নবুয়তের পূর্ববর্তী জীবনে আমরা তাঁকে দেখি এক বিশ্বস্ত ব্যবসায়ী, উত্তম স্বামী, প্রিয় বন্ধু, অনাথদের অভিভাবক, বিধবা ও অভাবগ্রস্তদের সহানুভূতিশীল সঙ্গী এবং সত্যবাদিতার ও আমানতের প্রতীক হিসেবে। নবুয়তপ্রাপ্তির পর তিনি হয়ে ওঠেন মহৎ দাঈ (আহ্বানকারী), গাজওয়াত ও অভিযানে মহান সেনাপতি, মদিনা রাষ্ট্রের প্রধান, সফল হজের পরিচালক, দক্ষ শিক্ষক, অদ্বিতীয় পথপ্রদর্শক এবং সফল রাজনৈতিক নেতা।

সিরাতের একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো এটি পরিবর্তনশীল বিশ্বের প্রতিটি যুগে সমানভাবে প্রাসঙ্গিক। প্রতিটি স্থান ও সময়ে এটি মানবজাতির জন্য শুধু পথপ্রদর্শক নয়, বরং চিরস্থায়ী গন্তব্যও। আজ পর্যন্ত মানবজাতি মহানবী (সা.)-এর মহিমাময় জীবনকে যত্ন ও ভালোবাসা দিয়ে সংরক্ষণ করেছে। তাঁর মুখের প্রতিটি শব্দ, আচরণ ও চলাফেরার প্রতিটি ভঙ্গি আজও অক্ষতভাবে সিরাতগ্রন্থে সংরক্ষিত।

বর্তমান যুগে সিরাতের দিকনির্দেশনার গুরুত্ব বিশেষভাবে বেড়ে গেছে। বিশ্ব দ্রুতগতিতে বৈশ্বিক ব্যবস্থার দিকে অগ্রসর হচ্ছে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি আকাশ ছুঁইছুঁই করছে, বস্তুবাদ ও ভোগবিলাসের প্রসার বৃদ্ধি পেয়েছে, কিন্তু সহনশীলতা, ভ্রাতৃত্ববোধ ও নৈতিকতা প্রায় নিঃশেষ। জাহিলিয়াতের যুগের কুসংস্কার ও অন্যায়ের প্রতিচ্ছবি আজও প্রতিস্থাপিত হচ্ছে। এমন অশান্ত ও ধর্মহীন পরিবেশে মানবজাতি সত্যিকার পথপ্রদর্শকের সন্ধানে। এই আলোকবর্তিকা শুধুমাত্র দুনিয়ার শান্তি ও সমৃদ্ধিই দেয় না, বরং আখিরাতের মুক্তিও নিশ্চিত করে।

মুসলিম উম্মাহর করণীয়১. মুসলিম উম্মাহ এবং বিশেষ করে আলেমসমাজকে নবুয়তের পরিপূর্ণ দায়িত্বের আলোকে বিশ্ব নেতৃত্বের দায়িত্ব পালন করতে হবে। যুগের ধর্মীয়, সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ বিশ্লেষণ করে সিরাতের আলোকে সমাধান নির্ধারণ করতে হবে।

২. রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর ফজিলত, শামায়েল ও বৈশিষ্ট্য অধ্যয়ন এবং সমসাময়িক দৃষ্টিকোণ থেকে গভীরভাবে বিশ্লেষণ অপরিহার্য। তাঁর দয়া, করুণা, শ্রম, মমতা, সাহসিকতা, সত্যবাদিতা, ন্যায়পরায়ণতা, উদারতা, প্রজ্ঞা, সংযম, আত্মত্যাগ, দায়িত্বশীলতা, বিনয় ও আল্লাহর ওপর ভরসা—এসব গুণাবলির সঙ্গে আমরা পরিচিত না হয়ে থাকলে, ইসলামের প্রকৃত মূল্য বোঝা সম্ভব নয়।

৩. অমুসলিমদের কাছে সিরাতের নৈতিক, আত্মিক ও সর্বজনীন দিক উপস্থাপন করতে হবে যুগোপযোগী ও ভাষানুগ উপায়ে।

৪. রাসুল (সা.)-এর বাস্তব জীবনের নমুনা শুধু ইবাদতে নয়, সামাজিক জীবন, রাজনৈতিক কৌশল ও অন্যান্য জাতির সঙ্গে আচরণের ক্ষেত্রে অনুসরণ করতে হবে। শান্তিপূর্ণ ও সমৃদ্ধ জীবন চাইলে আজও সিরাতের দিকে ফিরে তাকাতে হবে।

৫. সিরাতের মৌলিক ও আধুনিক সব ধরনের গ্রন্থ ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে দিতে হবে।

৬. সিরাতের প্রকৃত রুহ বোঝা এবং তা জীবনে অন্তর্ভুক্ত করা জরুরি। যতক্ষণ না আমাদের জীবন সিরাতের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হবে, ততক্ষণ বস্তুগত উন্নতির পরও আমরা সঠিকভাবে উন্নতি অর্জন করতে পারব না।

ডুয়া/নয়ন

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

পাঠকের মতামত:

সর্বোচ্চ পঠিত