ঢাকা, শুক্রবার, ৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২১ ভাদ্র ১৪৩২

ইসরায়েলের বো'মাবর্ষণে একদিনে আরও ৭৩ ফিলিস্তিনি নি'হত

২০২৫ সেপ্টেম্বর ০৪ ০৮:১৭:৫৩

ইসরায়েলের বো'মাবর্ষণে একদিনে আরও ৭৩ ফিলিস্তিনি নি'হত

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: গাজার আকাশে দিনরাত ইসরায়েলের বোমাবর্ষণ চলতে থাকায় পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। শুধু বুধবারের হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ৭৩ জন ফিলিস্তিনি, যার মধ্যে গাজা সিটিতেই নিহত হয়েছেন ৪৩ জন। আশ্রয়কেন্দ্র থেকে শুরু করে পুরো পরিবারকে টার্গেট করে হত্যা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, এ ঘটনায় হামাস এটিকে “গণহত্যা” আখ্যা দিয়ে জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি অবিলম্বে হস্তক্ষেপের আহ্বান জানিয়েছে। গাজা সিটি ও এর আশপাশে তীব্র বোমাবর্ষণে নিহতদের মধ্যে অনেকেই শিশু ও নারী।

বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিরা বলছেন, আশ্রয়কেন্দ্রও আর নিরাপদ নয়। সাবরিন আল-মাবহুহ আল জাজিরাকে জানান, “আমার ভাইকে ঘরেই হত্যা করা হয়েছে, স্ত্রী-সন্তানসহ কেউ বেঁচে নেই।” একইভাবে শেখ রাদওয়ান এলাকার এক বাসিন্দা বলেন, “পুরো মহল্লা জ্বলছে, আমরা মরছি—আর বিশ্ব চুপ করে দেখছে।”

গাজার গণমাধ্যম দপ্তর জানিয়েছে, গত তিন সপ্তাহে শুধু গাজা সিটিতেই ইসরায়েল শতাধিক রোবট বিস্ফোরণ ঘটিয়ে পুরো আবাসিক ব্লক ধ্বংস করেছে। ১৩ আগস্ট থেকে শুরু হওয়া অভিযানে প্রাণ হারিয়েছেন প্রায় ১ হাজার ১০০ মানুষ।

আল জাজিরার সাংবাদিক হানি মাহমুদ পরিস্থিতিকে “প্রলয়ংকরী” বলে উল্লেখ করেছেন। তাঁর ভাষায়, “একটির পর একটি মহল্লা নিশ্চিহ্ন হচ্ছে। মানুষ কয়েক দশকে যা গড়ে তুলেছিল, মুহূর্তেই সব হারাচ্ছে।”

এদিকে হামাস ঘোষণা করেছে, তারা একটি সর্বাত্মক যুদ্ধবিরতি ও বন্দি বিনিময়ের ভিত্তিতে সব ইসরায়েলি বন্দিকে মুক্তি দিতে প্রস্তুত। সংগঠনটি উত্তর গাজায় আল-জারিসি পরিবারের বাড়িতে হামলায় অন্তত ১০ জন নিহত হওয়ার ঘটনাকে “ভয়াবহ যুদ্ধাপরাধ” বলে দাবি করেছে।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুসারে, অবরোধ ও খাদ্যঘাটতির কারণে গত ২৪ ঘণ্টায় এক শিশুসহ আরও ছয়জন অনাহারে মারা গেছে। এখন পর্যন্ত ক্ষুধাজনিত কারণে প্রাণ গেছে ৩৬৭ জনের, এর মধ্যে ১৩১ শিশু।

জাতিসংঘ জানিয়েছে, চলমান অভিযান প্রায় ১০ লাখ ফিলিস্তিনিকে বাস্তুচ্যুত করতে পারে। শুধু আগস্টের শেষ দুই সপ্তাহেই নতুন করে ৮২ হাজার মানুষ বাড়িঘর হারিয়েছে।

ইউনিসেফ সতর্ক করেছে, ২০২৬ সালের মাঝামাঝি পাঁচ বছরের নিচের অন্তত ১ লাখ ৩২ হাজার শিশু তীব্র অপুষ্টির ঝুঁকিতে পড়বে। বর্তমানে ৩ লাখ ২০ হাজার শিশু ভয়াবহ ক্ষুধার মুখে। খাদ্য নিরাপত্তা পর্যবেক্ষক আইপিসি নিশ্চিত করেছে, উত্তর গাজায় দুর্ভিক্ষ শুরু হয়ে দ্রুত দক্ষিণে ছড়িয়ে পড়ছে। সহায়তাকর্মীদের মতে, ইসরায়েলের সর্বাত্মক অবরোধে প্রতিদিন টিকে থাকাই হয়ে উঠেছে ফিলিস্তিনিদের জন্য এক নির্মম সংগ্রাম।

এমজে

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

পাঠকের মতামত:

সর্বোচ্চ পঠিত