ঢাকা, সোমবার, ১৮ আগস্ট ২০২৫, ৩ ভাদ্র ১৪৩২
বাতিল করা হচ্ছে নাগরিকত্ব, ভারতে মুসলমানরা অস্তিত্ব সংকটে

প্রতি বছর আগস্টে ভারত ও পাকিস্তানের স্বাধীনতা দিবস ইতিহাসের দেওয়া প্রতিশ্রুতিগুলো নতুন করে মনে করিয়ে দেয়। ১৯৪৭ সালের ভয়াবহ ও রক্তাক্ত বিভাজনের পরও প্রায় সাড়ে তিন কোটি মুসলমান পাকিস্তানে না গিয়ে ভারতে থেকে গিয়েছিলেন এই আস্থায় যে, স্বাধীন ভারতের নাগরিক হিসেবে তারা সমান অধিকার, ন্যায্য সুযোগ-সুবিধা এবং সাংস্কৃতিক স্বাধীনতা ভোগ করবেন। টিআরটি ওয়ার্ল্ডের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে সেই প্রত্যাশার কথা।
বর্তমানে ভারতের মুসলিম জনগোষ্ঠীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে প্রায় ২০ কোটিতে। পাকিস্তান ও ইন্দোনেশিয়ার পর এটিই বিশ্বের তৃতীয় বৃহৎ মুসলিম জনসংখ্যা। ধারণা করা হচ্ছে, ২০৬০ সালের মধ্যে ভারতেই হবে বিশ্বের সবচেয়ে বড় মুসলিম জনগোষ্ঠীর আবাস।
কিন্তু সংখ্যায় বিশাল হলেও রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিকভাবে মুসলমানরা ক্রমেই প্রান্তিক হয়ে পড়ছে। চল্লিশের দশকে মুসলিম লীগ যে আশঙ্কা প্রকাশ করেছিল—‘হিন্দু কংগ্রেস’-এর শাসনে মুসলমানরা বৈষম্য, সাংস্কৃতিক অবক্ষয় ও টার্গেটেড সহিংসতার শিকার হবে—আজ সেই সতর্কবার্তা যেন বাস্তবে রূপ নিচ্ছে।
ভারতের জন্মলগ্নে ধর্মনিরপেক্ষতার যে প্রতিশ্রুতি ছিল, তা ভেঙে পড়ে ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (সিএএ) পাশ হওয়ার পর। প্রথমবারের মতো ধর্মভিত্তিক নাগরিকত্বের মানদণ্ড চালু হয় এবং এরপর থেকেই দেশজুড়ে ধর্মীয় বিভাজন স্পষ্ট হতে থাকে।
কাশ্মীরের পেহেলগাম হামলার পর ‘অবৈধ বাংলাদেশি অভিবাসী’ বিরোধী অভিযান আরও জোরদার হয়। গুজরাট, দিল্লি, মহারাষ্ট্রসহ বিভিন্ন রাজ্যে বাংলাভাষী দরিদ্র মুসলমানদের আটক করা হচ্ছে। অনেক সময় বিচারকের সামনে হাজির করার নিয়মও উপেক্ষা করা হচ্ছে।
মুসলিমদের ক্ষেত্রে নাগরিকত্ব প্রমাণে কাগজপত্র বাধ্যতামূলক করা হলেও অমুসলিমদের জন্য শিথিল রাখা হয়েছে। ফলে কোটি কোটি দরিদ্র মুসলমান ভোটাধিকার হারানোর ঝুঁকিতে পড়েছে। অন্যদিকে, অমুসলিমদের কাগজপত্র না থাকলেও তারা নাগরিকত্বের জন্য যোগ্য বিবেচিত হচ্ছে।
এ পরিস্থিতিতে বিহারে আট কোটি ভোটারের নাগরিকত্ব যাচাইয়ের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। প্রশাসনের ইঙ্গিত—এর ফলে বিপুলসংখ্যক মুসলমান ভোটারকে ‘অবৈধ’ হিসেবে বাদ দেওয়া হতে পারে।
ধর্মীয় বিদ্বেষও প্রতিদিনের জীবনে প্রভাব ফেলছে। কর্ণাটকে হিন্দুত্ববাদী একটি গোষ্ঠীর নেতাদের গ্রেপ্তার করা হয় মুসলিম প্রধান শিক্ষককে ফাঁসাতে স্কুলের পানির ট্যাংকে বিষ মেশানোর অভিযোগে। এমনকি উবার চালক বা ডেলিভারি কর্মীরাও ধর্মীয় স্লোগান না দিলে কাজ হারানোর ঝুঁকিতে পড়ছেন।
১৯৪৫ সালের ডিসেম্বরে মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ সতর্ক করেছিলেন, ঐক্যবদ্ধ ভারত মানে মুসলমানদের জন্য দাসত্ব ও হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ শাসনের আধিপত্য। অন্যদিকে, জওহরলাল নেহেরু তার প্রধানমন্ত্রিত্বে প্রায় ৪০০টি চিঠিতে মুখ্যমন্ত্রীদের উদ্দেশে লিখেছিলেন যে, মুসলিমদের ভাষা ও সংস্কৃতি ভারতের ঐতিহ্যকে সমৃদ্ধ করেছে।
তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে রাজনৈতিক বক্তব্যে মুসলমানরা সরাসরি আক্রমণের শিকার হচ্ছেন। ২০২৪ সালের নির্বাচনী প্রচারে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি মুসলমানদের ‘অনুপ্রবেশকারী’ আখ্যা দিয়ে দাবি করেছিলেন, কংগ্রেস তাদেরই সুবিধাভোগী বানাতে চায়। এমনকি হিন্দু নারীদের ‘মঙ্গলসূত্র কেড়ে নেওয়ার’ কথাও বলেন তিনি। কিন্তু সেই প্রচারণা সত্ত্বেও বিজেপি হেরে যায় ফয়েজাবাদ-অযোধ্যার আসনসহ একাধিক গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে।
আজ ভারতের মুসলমানরা নিজেদের দেশেই বহিরাগত হওয়ার আশঙ্কায় দিন কাটাচ্ছেন। নাগরিকত্বের নিশ্চয়তা, সাংস্কৃতিক অধিকার ও রাজনৈতিক অংশগ্রহণ—সব ক্ষেত্রেই সংকুচিত হয়ে যাচ্ছে তাদের পরিসর। বহু মুসলমানের কাছে এটি আর কোনো তাত্ত্বিক ভয় নয়, বরং প্রতিদিনের বাস্তব অভিজ্ঞতা। ধীরে ধীরে মুছে যাচ্ছে সেই প্রতিশ্রুতি, যা স্বাধীন ভারতের ভিত্তি ছিল।
পাঠকের মতামত:
সর্বোচ্চ পঠিত
- হলে ঢাবি ছাত্রীর হঠাৎ অসুস্থতা, হাসপাতালে মৃত্যু
- মার্জিন ঋণে মিউচুয়াল ফান্ড ও বন্ডে বিনিয়োগ করা যাবে না
- ‘পদত্যাগ করতে পারেন ড. ইউনূস’
- বিদেশি বিনিয়োগকারীদের পছন্দের শীর্ষে পাঁচ শেয়ার
- শেয়ারবাজারের ৬ ব্যাংকের রেকর্ড মুনাফা, ৫ ব্যাংকের লোকসান
- ঢাবির হলে 'গাঁ’জার আসর', চার শিক্ষার্থীকে আটক
- ১২ আগস্ট : শেয়ারবাজারের সেরা ৯ খবর
- মার্জিন ঋণ নিয়ে গুজব: ফের অস্থির শেয়ারবাজার
- দুই কোম্পানির অস্বাভাবিক শেয়ারদর: ডিএসইর সতর্কবার্তা জারি
- বাংলাদেশ ব্যাংকের ‘লাল তালিকা’য় ২০ আর্থিক প্রতিষ্ঠান
- অস্বাভাবিক শেয়ার দাম: ডিএসইর সতর্কবার্তা জারি
- বেক্সিমকো-বেক্সিমকো ফার্মাসহ চার ব্যক্তি-এক প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা-সতর্ক
- সামিটের বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র কিনছে আরব আমিরাতের কোম্পানি
- বেসরকারি হাসপাতাল মালিকদের নতুন কমিটির অভিষেক শনিবার
- বিসিএসে স্বতন্ত্র বিভাগে অন্য বিভাগ অন্তর্ভুক্তির প্রতিবাদে ঢাবিতে বিক্ষোভ