প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় প্রধান একই ব্যক্তি চায় বিএনপি

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে মঙ্গলবার (২২ জুলাই) রাজনৈতিক দলগুলোর ১৭তম দিনের আলোচনা শেষে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন আহমেদ জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা এক ব্যক্তি হতে পারবেন, এ বিষয়ে সব দল মোটামুটি একমত। তবে একই ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় প্রধান হতে পারবেন কিনা, তা নিয়ে কিছুটা মতানৈক্য রয়েছে।

সালাহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, বিএনপি মনে করে সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদে (সংসদ সদস্য কর্তৃক দলের বিরুদ্ধে ভোটদান) একটি 'ডিসেন্ট নোট' (ভিন্নমত) থাকা উচিত। এর মাধ্যমে সংখ্যাগরিষ্ঠ দলই সিদ্ধান্ত নেবে কে প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় প্রধান হবেন। তার মতে, প্রধানমন্ত্রী হওয়ার কারণে কাউকে দলীয় প্রধান হতে না দেওয়া গণতান্ত্রিক অধিকার খর্ব করার শামিল।

তিনি উল্লেখ করেন, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন গণতান্ত্রিক দেশে প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় প্রধান এক ব্যক্তি হতে কোনো বাধা নেই এবং এটি সংসদীয় পার্টি বা জোটের সংখ্যাগরিষ্ঠতার ওপর নির্ভরশীল। এছাড়া, একজন প্রধানমন্ত্রী যদি স্বল্প সময়ের জন্য পদে থাকেন, তিনি দলীয় প্রধান হিসেবে থেকে যেতে পারেন এবং অন্য কেউ প্রধানমন্ত্রী হতে পারেন, তাই এই বিষয়ে বাধ্যবাধকতা না থাকাই ভালো।

পাঁচ সদস্যের সার্চ কমিটি: প্রস্তাবিত কমিটিতে সরকারি দলের প্রধানমন্ত্রী ও স্পিকার, বিরোধী দলের নেতা ও ডেপুটি স্পিকার (বিরোধী দলের), এবং সংসদের তৃতীয় বৃহত্তম দলের একজন সদস্য থাকবেন। এই কমিটি সংসদের প্রতিনিধিত্বকারী দলগুলোর কাছ থেকে নাম আহ্বান করবে, যার মধ্যে সরকারি দল, বিরোধী দল এবং স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যরাও নাম দিতে পারবেন।

দ্বিতীয় পদ্ধতি: যদি সার্চ কমিটি প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগে ঐকমত্যে আসতে না পারে, তাহলে দ্বিতীয় পদ্ধতিতে যাওয়া হবে। এই পদ্ধতিতে সার্চ কমিটির কাছে সরকারি দল ও বিরোধী দল পাঁচজন করে দশজনের নাম এবং তৃতীয় দল দুজনের নাম প্রস্তাব করবে। এই বারোজন ব্যক্তির মধ্য থেকে বাছাই কমিটি যদি ঐকমত্যে প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচন করতে পারে, তবে তা ভালো। তবে এই বিষয়ে আজকের বৈঠকে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য হয়নি।

র‍্যাঙ্ক চয়েজ ভোটিং: এই পদ্ধতিতেও ঐকমত্য না হলে ঐকমত্য কমিশন থেকে র‍্যাঙ্ক চয়েজ ভোটিংয়ের মাধ্যমে উপদেষ্টা নিয়োগের প্রস্তাব এসেছে, যদিও এই বিষয়েও বৈঠকে ঐকমত্য হয়নি।

ত্রয়োদশ সংশোধনী: সালাহ উদ্দিন আহমেদ আরও বলেন, যদি বাছাই কমিটির মাধ্যমে ঐকমত্যে আসা না যায়, তাহলে বিএনপির প্রস্তাবে সর্বশেষ পদ্ধতি হিসেবে ত্রয়োদশ সংশোধনীতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের যে বিধান আছে, তা অনুসরণ করা হবে। তবে রাষ্ট্রপতিকে অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব গ্রহণের বিধানটি বাতিল করার কথা বলা হয়েছে। ঐকমত্য কমিশন বাছাই কমিটি ও ত্রয়োদশ সংশোধনীর মধ্যবর্তী অন্য কোনো বিধান খুঁজে দেখছে।

বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার কার্যকর হলে সংবিধানের ১২৩(৩) ধারা (সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই নির্বাচন হলে আগের সংসদের সদস্যদের বহাল থাকার বিতর্কিত বিধান) এবং ৭২(১) ধারা (অধিবেশন আহ্বান নিয়ে ৬০ দিনের সময়সীমা) সংশোধনের প্রয়োজন হবে। বিএনপির মতে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার কার্যকর হলে এই অনুচ্ছেদগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংশোধিত হবে এবং এতে কোনো রাজনৈতিক বিতর্ক নেই।

সাংবিধানিক ও সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানগুলোর নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে একটি কমিটি গঠনের প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা শুরু হলেও, বিএনপি আজ এতে অংশ নেয়নি। সালাহ উদ্দিন আহমেদ জানিয়েছেন, তারা আগামীকালের আলোচনায় এ বিষয়ে মতামত দেবেন।

সর্বসম্মতির ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিষয়ে সালাহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, "আমাদের রাজনৈতিক ইতিহাসে সর্বসম্মতি সবসময় সহজ হয় না। তবে ১৯৯৬ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের সময় যেভাবে তিনদলীয় ঐকমত্য হয়েছিল, তা সফল হয়েছিল।" তিনি আশা প্রকাশ করেন, আলোচনা ও রাজনৈতিক সমঝোতার মাধ্যমে আবারও একমত হওয়া সম্ভব।