ঢাকা, সোমবার, ১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৭ ভাদ্র ১৪৩২

তদন্তের খবরে থামছে দুই কোম্পানির ঘোড়দৌড়

২০২৫ সেপ্টেম্বর ০১ ০৬:৪৩:৩২

তদন্তের খবরে থামছে দুই কোম্পানির ঘোড়দৌড়

নিজস্ব প্রতিবেদক: শেয়ারবাজারে লোকসানি দুই কোম্পানি— ইনফরমেশন সার্ভিসেস নেটওয়ার্ক লিমিটেড (আইএসএন) ও জিকিউ বলপেন ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড—এর শেয়ারদর গত এক মাসে অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে। দুর্বল আর্থিক অবস্থার পরও শেয়ারদরের লাগামহীন উত্থান বিনিয়োগকারীদের মধ্যে কৌতূহল তৈরি করেছে। তবে বাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থার তদন্তে নামার খবরে শেয়ারদরের দৌড় থামতে শুরু করেছে।

বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) লাগামহীন উত্থানের ঘটনায় তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জকে (ডিএসই)। একই সঙ্গে বিনিয়োগকারীদের সতর্ক থাকতে একাধিকবার বার্তা দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা।

বাজার বিশ্লেষকদের মতে, লোকসানি কোম্পানির শেয়ারদর এভাবে বাড়া গুজব কিংবা ভেতরের তথ্য ফাঁসের ইঙ্গিত বহন করে। তাদের ধারণা, শেষ পর্যন্ত সাধারণ বিনিয়োগকারীরাই ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।

তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, মাত্র ১১ কোটি টাকা মূলধনের আইএসএন দীর্ঘদিন ধরেই আর্থিক সংকটে। কোম্পানির রিজার্ভ ঘাটতি প্রায় ৮ কোটি টাকা। ২০২০-২১ অর্থবছরে তাদের লোকসান হয় ৯ কোটির বেশি। যদিও পরের বছর কিছুটা মুনাফা আসে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে আবারও লোকসান হয়েছে প্রায় ১৯ লাখ টাকা।

অন্যদিকে, জিকিউ বলপেন গত ছয় বছরের বেশি সময় ধরে ধারাবাহিক লোকসানে আছে। ২০১৯ থেকে ২০২৫ সালের মার্চ পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটির নিট লোকসান দাঁড়িয়েছে ২৩ কোটির বেশি। মাত্র ৯ কোটি টাকার মূলধনের এই কোম্পানি চলতি অর্থবছরের প্রথম নয় মাসেই প্রায় ৩ কোটি টাকা লোকসান দেখিয়েছে। কোম্পানি সংশ্লিষ্টদের দাবি, বিক্রি কমে যাওয়া এবং আধুনিকায়ন প্রক্রিয়া থমকে যাওয়ায় ক্ষতি বাড়ছে।

দুই কোম্পানির বেশিরভাগ শেয়ারই সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে। জিকিউ বলপেনের ৫৫ শতাংশ এবং আইএসএনের প্রায় ৬৯ শতাংশ শেয়ার তাদের নিয়ন্ত্রণে। উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের মালিকানা কম থাকায় ঝুঁকি আরও বেড়েছে।

ডিভেডেন্ডও তেমন আকর্ষণীয় নয়। জিকিউ বলপেন ২০২৩-২৪ অর্থবছরে দিয়েছে মাত্র ৩ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড। আইএসএন দিয়েছে আরও কম—শুধু ০.৫০ শতাংশ। আগের ঘোষিত ডিভিডেন্ডের কিছু অংশ বিনিয়োগকারীরা এখনো পায়নি বলে অভিযোগ রয়েছে।

তবে লোকসান সত্ত্বেও কোম্পানি দুটির শেয়ার দাম বেড়েছে অস্বাভাবিক হারে। এক মাসে আইএসএনের শেয়ার ৪২ টাকা ৭০ পয়সা থেকে বেড়ে দাঁড়ায় ১০৫ টাকা ৭০ পয়সায়—বৃদ্ধি ১৪৭ শতাংশ।

অন্যদিকে জিকিউ বলপেনের শেয়ার ২৯ জুনের ১৭০ টাকা ৮০ পয়সা থেকে ২৮ আগস্টে বেড়ে দাঁড়ায় ৪০০ টাকা ৭০ পয়সায়—দুই মাসে ১৩৪ শতাংশ বৃদ্ধি।

এমন পরিস্থিতিতে ডিএসই কারণ অনুসন্ধান শুরু করেছে। ডিএসই কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তদন্তে অনিয়ম ধরা পড়লে তা বিএসইসিকে জানানো হবে।

বিএসইসির মুখপাত্র মো. আবুল কালাম সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছেন, ‘কোম্পানি দুটির অস্বাভাবিক দর বৃদ্ধির বিষয়টি ক্ষতি দেখতে এরই মধ্যে ডিএসইকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ডিএসই বিষয়টি খতিয়ে দেখে কমিশনে রিপোর্ট জমা দিলে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

তদন্তের খবরে কোম্পানি দুটির শেয়ার দাম রবিবার কমেছে। আইএসএনের শেয়ার এদিনও দিনের প্রথম ভাগে সর্বোচ্চ দামে হল্টেড হয়। তবে তদন্তের খবরে পড়তে শুরু করে। শেষ বেলায় আগের দিনের চেয়ে ১ টাকা ১০ পয়সা কমে ১০৪ টাকা ৬০ পয়সায় ক্লোজিং হয়।

অন্যদিকে, জিকিউ বলপেনের শেয়ার আগের দিনের চেয়ে বাড়তি দামে লেনদেন শুরু হলেও তদন্তের খবরে পিছু হটে যায়। দিনশেষে আগের কোম্পানিটির শেয়ার আগের দিনের চেয়ে ২ টাকা ৫০ পয়সা কমে ৩৯৮ টাকা ২০ পয়সায় ক্লোজিং হয়।

এএসএম/

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

পাঠকের মতামত:

সর্বোচ্চ পঠিত