ঢাকা, বুধবার, ১৬ জুলাই ২০২৫, ১ শ্রাবণ ১৪৩২

ট্রাম্পকে উপেক্ষা করেই যুদ্ধ চালিয়ে যাবেন পুতিন : রয়টার্স

ডুয়া নিউজ- আন্তর্জাতিক
২০২৫ জুলাই ১৬ ১০:২৬:২৮
ট্রাম্পকে উপেক্ষা করেই যুদ্ধ চালিয়ে যাবেন পুতিন : রয়টার্স

পশ্চিমা বিশ্বের চাপ কিংবা সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের হুঁশিয়ারি- কোনোটিই আমলে নিচ্ছেন না রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। বরং ইউক্রেন যুদ্ধে আরও আগ্রাসী মনোভাব নিয়ে এগোচ্ছেন তিনি। যতক্ষণ না পশ্চিম তার শর্ত মেনে শান্তি আলোচনায় বসে ততক্ষণ যুদ্ধ বন্ধ হবে না- এমন অবস্থানেই অনড় রয়েছেন তিনি।

রয়টার্স-এর এক বিশেষ প্রতিবেদনে ক্রেমলিন ঘনিষ্ঠ তিনটি সূত্রের বরাতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

পুতিনের কৌশল: শর্ত না মানলে যুদ্ধ চলবে

রয়টার্সকে দেওয়া এক সূত্র জানায়, পুতিন মনে করেন এখনো কেউ ইউক্রেন সংকট নিয়ে তার সঙ্গে গঠনমূলক আলোচনায় বসেনি—এমনকি যুক্তরাষ্ট্রও নয়। ফলে তিনি তার দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার পক্ষেই আছেন।

সূত্রটি আরও জানায়, রাশিয়ার অর্থনীতি ও সেনাবাহিনী এখন এতটাই শক্তিশালী যে অতিরিক্ত নিষেধাজ্ঞাও তাদের থামাতে পারবে না।

ট্রাম্পের হুঁশিয়ারি তবুও নিরুত্তাপ মস্কো:

সাম্প্রতিক এক ঘোষণায় ডোনাল্ড ট্রাম্প ইউক্রেনকে প্যাট্রিয়ট ক্ষেপণাস্ত্রসহ নতুন অস্ত্র সহায়তা দেওয়ার কথা বলেন এবং পুতিনকে সতর্ক করে বলেন, ৫০ দিনের মধ্যে যুদ্ধ না থামলে রাশিয়ার ওপর আরও কঠোর নিষেধাজ্ঞা ও শুল্ক আরোপ করা হবে।

তবে ট্রাম্পের এই ঘোষণাতেও বিচলিত নয় ক্রেমলিন। বরং পুতিন ও ট্রাম্পের মধ্যকার একাধিক ফোনালাপ এবং মার্কিন দূত স্টিভ উইটকফের মস্কো সফরের পরেও রাশিয়া বলছে এখনো প্রকৃত কোনো শান্তি পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা হয়নি।

পুতিনের শান্তির শর্ত:

ক্রেমলিন জানায় পুতিন শান্তির জন্য চারটি প্রধান শর্ত দিয়েছেন:

ন্যাটো আর পূর্বদিকে সম্প্রসারিত হবে না এমন আইনি নিশ্চয়তা

ইউক্রেন থাকবে নিরপেক্ষ, সামরিক শক্তির সীমাবদ্ধতায়

রুশভাষীদের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে

দখলকৃত অঞ্চলকে স্বীকৃতি দিতে হবে রাশিয়াকে

এছাড়াও আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা গ্যারান্টির বিষয়েও আলোচনায় আগ্রহী পুতিন। তবে তা কীভাবে কার্যকর হবে তা এখনো স্পষ্ট নয়।

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছেন, রাশিয়ার দখলকৃত অঞ্চল কখনোই স্বীকৃত হবে না এবং ন্যাটোতে যোগ দেওয়ার অধিকার তাদের সার্বভৌম সিদ্ধান্ত।

রুশ বাহিনী বর্তমানে নিম্নোক্ত এলাকাগুলোয় দখল ধরে রেখেছে:

ক্রিমিয়া (২০১৪ সাল থেকে)

লুহানস্ক পুরোটা

দোনেৎস্ক, খেরসন ও জাপোরিঝিয়ার ৭০%-এর বেশি অংশ

খারকিভ, সুমি ও ডিনিপ্রোপেট্রোভস্কের অংশবিশেষ

পুতিন বলছেন, এসব অঞ্চল এখন রাশিয়ার অংশ এবং কিয়েভ যদি তা মেনে না নেয় তাহলে শান্তির প্রশ্নই ওঠে না।

হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র আনা কেলি এক বিবৃতিতে বলেন, “বাইডেন ব্যর্থ হলেও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যুদ্ধ বন্ধে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। পুতিন যদি না থামেন তাহলে তাকে আরও কড়া শুল্ক ও নিষেধাজ্ঞার মুখোমুখি হতে হবে।”

রয়টার্সের এক সূত্র জানায়, “পুতিন এখন ট্রাম্পকে বিরক্ত না করে নিজের পরিকল্পনা অনুসারে এগোচ্ছেন। তিনি জানেন ট্রাম্প অপ্রত্যাশিত সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। তাই রাশিয়া তার সামরিক লক্ষ্য অর্জনের আগেই যুদ্ধ থামাবে না।”

আরেক সূত্র জানায়, ইউক্রেন প্রতিরোধে ব্যর্থ হলে রাশিয়া সুমি, খারকিভ ও ডিনিপ্রোপেট্রোভস্ক পর্যন্ত অগ্রসর হতে পারে।

সব নিষেধাজ্ঞা ও যুদ্ধসঙ্কটের পরও রাশিয়ার অর্থনীতি স্থিতিশীল রয়েছে। ২০২৪ সালে দেশটির প্রবৃদ্ধি ছিল ৪.৩%, আর ২০২৫ সালের জন্য পূর্বাভাস ২.৫%। ফলে অর্থনৈতিক চাপ দিয়েও রাশিয়াকে থামানো কঠিন হয়ে পড়েছে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ইউক্রেন যুদ্ধ এখন আর শুধু সামরিক সংঘাত নয়—এটি রাশিয়া ও পশ্চিমা বিশ্বের মধ্যকার প্রভাব বিস্তারের লড়াই। আর এই যুদ্ধে সমাধানের পথ যতদিন পুতিনের শর্তে না হয় ততদিন সংঘর্ষ চলতেই থাকবে।

পাঠকের মতামত:

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

সর্বোচ্চ পঠিত