ঢাকা, সোমবার, ১৬ জুন ২০২৫, ২ আষাঢ় ১৪৩২

এক দশক আগের অবস্থানে দেশের শেয়ারবাজার

ডুয়া নিউজ- শেয়ারবাজার
২০২৫ মে ২৬ ১৫:৫১:১৫
এক দশক আগের অবস্থানে দেশের শেয়ারবাজার

দেশের শেয়ারবাজারে চলমান দরপতনের ফলে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স নেমে এসেছে সোয়া দশ বছর আগের অবস্থানে। এই অবস্থান বাজার সংশ্লিষ্টদের জন্য যেমন অস্বস্তির, তেমনি বিনিয়োগকারীদের মধ্যে নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।

সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী, আজ (২৬ মে) ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স সূচক দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৭১৯.৩৮ পয়েন্টে। দীর্ঘ প্রায় এক দশক আগে ২০১৫ সালের ২ মার্চে সূচক ছিল ৪ হাজার ৭১৯.৪০ পয়েন্ট। এই বিপর্যয়ের ফলে একদিকে যেমন বাজারে বিনিয়োগকারীদের আস্থা আরও দুর্বল হয়েছে, অন্যদিকে নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর সাম্প্রতিক পদক্ষেপের কার্যকারিতা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।

বাজার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) এবং সংশ্লিষ্ট অন্যান্য নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। এর মধ্যে রয়েছে— বিভিন্ন নীতি ও প্রণোদনার ঘোষণা, বাজারে তারল্য বাড়াতে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে আলোচনা, মূল্য সংবেদনশীল তথ্য প্রকাশে নজরদারি বৃদ্ধি এবং বিনিয়োগকারী সংগঠনগুলোর সঙ্গে একাধিক সভা আয়োজন।

তবে এসব উদ্যোগ বাস্তবায়নের পরও বাজারে কাঙ্ক্ষিত ইতিবাচক পরিবর্তন আসছে না। বরং সূচক ও লেনদেন উভয়ই নিম্নমুখী রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাজারে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা, পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের নিষ্ক্রিয়তা—সব মিলিয়ে নেতিবাচক প্রবণতা আরও গভীর হয়েছে।

আগামী ২৯ মে বিএসইসি’র পক্ষ থেকে বিনিয়োগকারী সংগঠনগুলোর সঙ্গে একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক আহ্বান করা হয়েছে। বৈঠকে বাজার স্থিতিশীল করতে সম্ভাব্য করণীয় নিয়ে আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে। তবে তার আগেই সূচকের এমন ভয়াবহ পতন বিনিয়োগকারীদের মনে আরও হতাশা সৃষ্টি করেছে।

বিনিয়োগকারীরা বলছেন, “আমরা প্রতিদিনই ক্ষতির মুখে পড়ছি। সূচক দিনের পর দিন নামছে, অথচ কেউ সুনির্দিষ্ট করে বলতে পারছে না এর শেষ কোথায়।” অনেকে আবার বলছেন, শুধু আলোচনা-সভার চেয়ে জরুরি হলো বাস্তবায়নযোগ্য সিদ্ধান্ত, যাতে বাজারে আস্থা ফিরে আসে।

বাজার বিশ্লেষকদের মতে, এই ধরণের দরপতন শুধু শেয়ারবাজারেই নয়, বরং দেশের সামগ্রিক বিনিয়োগ পরিবেশ এবং অর্থনীতির দিকেও নেতিবাচক বার্তা দেয়। তারা মনে করেন, বাজারে আস্থা ফিরিয়ে আনতে স্বল্পমেয়াদী, দ্রুত, কার্যকর ও দৃশ্যমান পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি, যা দীর্ঘমেয়াদে একটি স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক বাজার কাঠামো গঠনে সহায়ক হবে।

বাজার পর্যালোচনা

গত ৪ কার্যদিবসের মত আজও (২৬ মে) দরপতন হয়েছে শেয়ার বাজারে। এদিন দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সবগুলো সূচকের পতন হলেও টাকার অংকে লেনদেন বেড়েছে। অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সবগুলো সূচকের পতন হলেও টাকার অংকে লেনদেন বেড়ে।

বাজার পর্যালোচনায় দেখা যায়, আজ ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ১৬.৯৫ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৭১৯.৩৮ পয়েন্টে।

অন্যদিকে, ডিএসইএস সূচক ০.৭৬ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৩৩.৩২ পয়েন্টে। আর ডিএসই-৩০ সূচক ৪.৬১ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ১ হাজার ৭৪১.৯১ পয়েন্টে।

আজ ডিএসইতে মোট ৩৯৩টি প্রতিষ্ঠান লেনদেনে অংশ নেয়। এর মধ্যে ১৪৮টির দর বেড়েছে, ১৬৮টির দর কমেছে এবং ৭৭টির দর অপরিবর্তিত রয়েছে।

ডিএসইতে আজ মোট ২৮২ কোটি ৬১ লাখ ৬২ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ২৩৫ কোটি ৫১ লাখ ১৬ হাজার টাকার। আগের দিনের তুলনায় লেনদেন বেড়েছে ৪৭ কোটি ১০ লাখ ৪৬ হাজার টাকা।

অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) আজ ১১ কোটি ১৩ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। আগেরদিন সিএসইতে ৮ কোটি ৬৮ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছিল।

এদিন সিএসইতে লেনদেন হওয়া ১৭৪টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে শেয়ার ও ইউনিট দর বেড়েছে ৭৩টির, কমেছে ৮৩টির এবং পরিবর্তন হয়নি ১৮টির।

এদিন সিএসইর সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ৫২.৭৯ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১৩ হাজার ২১৪.২৪ পয়েন্টে। আগেরদিন সূচক সিএএসপিআই ২৬.৮৫ পয়েন্ট কমেছিল।

পাঠকের মতামত:

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

সর্বোচ্চ পঠিত