ঢাকা, বুধবার, ২৮ মে ২০২৫, ১৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

বাংলাদেশকে ঘিরে ভারতের তৎপরতা! এস-৪০০ ও রাফাল মোতায়েন

ডুয়া নিউজ- আন্তর্জাতিক
২০২৫ মে ২৫ ২১:৪৮:৫৯
বাংলাদেশকে ঘিরে ভারতের তৎপরতা! এস-৪০০ ও রাফাল মোতায়েন

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের চীনে গিয়ে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় সেভেন সিস্টার্স রাজ্যগুলো নিয়ে দেওয়া বক্তব্যের পর থেকেই নড়েচড়ে বসেছে ভারত। এর পর থেকে শিলিগুড়ি করিডরে ভারতের সামরিক কার্যক্রম ব্যাপক মাত্রায় বৃদ্ধি পেয়েছে। বাংলাদেশের লাগোয়া ভারতের পূর্বাঞ্চলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর ‘চিকেনস নেক’ করিডরকে ঘিরে নয়াদিল্লি যে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাপনা তৈরি করছে। এটি চীন ও বাংলাদেশের সঙ্গে ক্রমবর্ধমান সামরিক ঘনিষ্ঠতার জবাবে নেওয়া হয়েছে।

সম্প্রতি শিলিগুড়িতে রাশিয়ার তৈরি অত্যাধুনিক এস-৪০০ ট্রায়াম্ফ আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা স্থাপন করেছে ভারত। এই দূরপাল্লার মিসাইল সিস্টেম ৪০০ কিলোমিটার পর্যন্ত দূরত্বে একাধিক আকাশ লক্ষ্যবস্তু শনাক্ত এবং ধ্বংস করতে সক্ষম।

এর পাশাপাশি পশ্চিমবঙ্গের আলিপুরদুয়ার জেলার হাশিমারা বিমানঘাঁটিতে রাফালে ফাইটার স্কোয়াড্রন মোতায়েন করা হয়েছে। এটি মেটিওর ও স্ক্যাল্প ক্ষেপণাস্ত্রসহ আধুনিক ইলেকট্রনিক যুদ্ধ সরঞ্জামে সজ্জিত।

এই প্রতিরক্ষা প্রস্তুতির নেপথ্যে রয়েছে ঢাকা ও বেইজিংয়ের মধ্যে ক্রমবর্ধমান কৌশলগত ঘনিষ্ঠতা। গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার চীন ও পাকিস্তানের সঙ্গে সামরিক ও অর্থনৈতিক অংশীদারত্বে স্পষ্ট অগ্রসরতা দেখিয়েছে।

গতকাল শনিবার (২৪ মে) প্রকাশিত ডিফেন্স সিকিউরিটি এশিয়ার প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘লালমনিরহাটে চীন-সমর্থিত বিমানঘাঁটি স্থাপনের সম্ভাব্যতা ও ঢাকার সঙ্গে ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভে’ জড়িত হওয়া ভারতের কাছে গভীর উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠেছে!’

বাংলাদেশের হাতে ১২টি তুর্কি বায়রাক্টার টিবি২ ড্রোন আসার পর সীমান্তবর্তী অঞ্চলে এই ড্রোনগুলো আইএসআর (গোয়েন্দা, নজরদারি ও পুনঃনিরীক্ষণ) মিশনে ভারতের প্রতিরক্ষা পরিকল্পনায় নতুন মাত্রা যুক্ত করেছে। গত বছর এই ড্রোন ভারতের সীমান্ত থেকে মাত্র ১০ কিলোমিটার দূরে প্রবেশ করায় ভারত কঠোর প্রতিক্রিয়া দেখায়।

এদিকে, বাংলাদেশ বর্তমানে ৩২টি চীন-পাকিস্তান যৌথ নির্মিত জেএফ-১৭ যুদ্ধবিমান কেনার প্রক্রিয়ায় রয়েছে। এই বিমানগুলো আধুনিক এএসএ রাডার, উন্নত ইলেকট্রনিক ওয়ারফেয়ার সিস্টেম ও চীনা ক্ষেপণাস্ত্র নিয়ে সজ্জিত। এর ফলে আঞ্চলিক বিমান শক্তির ভারসাম্যে নতুন মাত্রা যোগ করছে।

এমন পরিস্থিতিতে ভারত শিলিগুড়ি করিডরজুড়ে একাধিক স্তরের বিমান প্রতিরক্ষা স্থাপন করেছে। দেশটি আকাশ এমআরএডি, শোরদ (স্বল্প-পাল্লার বিমান প্রতিরক্ষা), ও ভিএসএইচওআরএডি (অত্যন্ত স্বল্প-পাল্লার বিমান প্রতিরক্ষা) ব্যাটারির মাধ্যমে নিচু ও মাঝারি স্তরের আকাশ হুমকিকে প্রতিহত করার প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।

ব্রহ্মোস সুপারসনিক ক্রুজ মিসাইল রেজিমেন্ট ও টি-৯০ ট্যাঙ্কসহ সজ্জিত ত্রিশক্তি কর্পসকে মাটির লড়াইয়ের জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

চীনকে উদ্দেশ্য করে গঠিত ‘ব্রহ্মাস্ত্র কর্পস’ বা পর্বত স্ট্রাইক বাহিনী লাইন অব কন্ট্রোল বরাবর গভীর আক্রমণের সক্ষমতাসহ প্রস্তুত রয়েছে। এ বাহিনীর সদর দপ্তর পানাগড়ে অবস্থিত।

যদিও ভারতের প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই পদক্ষেপগুলো কেবল সম্ভাব্য হুমকির জবাব নয়, বরং একাধিক ফ্রন্টে যুদ্ধের সম্ভাবনার মুখে ভারতের পূর্ব সীমান্তে শক্তিশালী প্রতিরোধ বলয় গড়ে তোলার প্রমাণ।

শিলিগুড়ি করিডোরে ভারতের প্রতিরক্ষা জোরদার করা শুধু আঞ্চলিক শক্তির পরিবর্তনকে কেন্দ্র করে উদ্বেগ নয়, বরং চীন ও পাকিস্তানের ঘনিষ্ঠতা ঢাকা’র নিকটে আসায় সম্ভাব্য দ্বিমুখী চাপ মোকাবিলায় পূর্ব ফ্রন্টকে শক্তিশালী করার ভারতের দৃঢ় সংকল্পকে প্রতিফলিত করছে। ‘চিকেন নেক’ অঞ্চলকে কেন্দ্র করে নয়াদিল্লির এই পদক্ষেপ ভারত-চীন-বাংলাদেশ-পাকিস্তান চারপাশে উত্তেজনার সংকেত দিচ্ছে।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস সম্প্রতি চীন সফরের সময় ভারতের উত্তর পূর্বাঞ্চলের সাতটি রাজ্যে ব্যবসায়িক সম্ভাবনা নিয়ে কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘ভারতের পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত সেভেন সিস্টার্স নামে পরিচিত সাতটি রাজ্য সম্পূর্ণরূপে ল্যান্ডলকড (স্থলবেষ্টিত)। সমুদ্রের সঙ্গে তাদের যোগাযোগের কোনো উপায় নেই। আমরাই এই অঞ্চলের জন্য সমুদ্রের একমাত্র অভিভাবক।’

এই বক্তব্যের পরই মূলত ভারতে ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। এর পর থেকে এ অঞ্চলে ব্যাপক সামরিক তৎপরতা বাড়াচ্ছে দেশটি।

পাঠকের মতামত:

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

সর্বোচ্চ পঠিত