ঢাকা, বুধবার, ১৩ আগস্ট ২০২৫, ২৮ শ্রাবণ ১৪৩২

‘বিশ্বে ১৮৬ দেশের মধ্যে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ মাত্র একটি’

ডুয়া নিউজ- আন্তর্জাতিক
২০২৫ মে ২৫ ১৬:৪১:৪৯
‘বিশ্বে ১৮৬ দেশের মধ্যে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ মাত্র একটি’

ডুয়া ডেস্ক: বিশ্বের অধিকাংশ দেশকেই কোনো না কোনো খাদ্যপণ্যের জন্য অন্য দেশের ওপর নির্ভর করতে হয়। তবে এর ব্যতিক্রম দক্ষিণ আমেরিকার ছোট দেশ গায়ানা। সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, বিশ্বের ১৮৬টি দেশের মধ্যে গায়ানাই একমাত্র দেশ, যেখানে দেশের মানুষের প্রয়োজনীয় সাত ধরনের প্রধান খাদ্য উপাদান সম্পূর্ণভাবে নিজেই উৎপাদিত হয়।

‘নেচার ফুড’ সাময়িকীতে প্রকাশিত এই গবেষণায় বলা হয়েছে, গায়ানা ফল, সবজি, দুগ্ধজাত পণ্য, মাছ, মাংস, উদ্ভিজ্জ প্রোটিন ও শর্করার উৎস—এই সাতটি গুরুত্বপূর্ণ খাদ্য উপাদানে পূর্ণ স্বয়ংসম্পূর্ণ।

উর্বর মাটি, পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত ও অনুকূল জলবায়ুর কারণে গায়ানায় কৃষিকাজ অত্যন্ত কার্যকর। মাত্র আট লাখের কিছু বেশি জনসংখ্যার এই দেশে কৃষি জমির পরিমাণ অনেক বেশি এবং জনঘনত্ব কম হওয়ায় দেশটি স্থানীয়ভাবে সব ধরনের খাদ্যের চাহিদা মেটাতে সক্ষম হয়েছে।

যদিও দেশটির অর্থনীতি কৃষি, খনিজ সম্পদ এবং সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আবিষ্কৃত তেল ও গ্যাস খাতের ওপর নির্ভরশীল, তবে দীর্ঘদিনের খাদ্য স্বয়ংসম্পূর্ণতা গায়ানাকে বৈশ্বিক গবেষণার আলোচনায় নিয়ে এসেছে।

গায়ানার প্রধান কৃষিপণ্যের মধ্যে রয়েছে—ধান, আখ, বিভিন্ন ফলমূল, সবজি ও মাছ। গবেষকরা মনে করছেন, এখানকার কৃষি কার্যক্রম মূলত স্থানীয় চাহিদা পূরণের ওপর কেন্দ্রীভূত হওয়াতেই গায়ানা এই অবস্থানে পৌঁছেছে।

জার্মানির গটিনজেন বিশ্ববিদ্যালয় এবং যুক্তরাজ্যের এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা এই গবেষণা পরিচালনা করেন। এতে বিশ্বের প্রতিটি দেশের খাদ্য উৎপাদনের পরিমাণের সঙ্গে সেই দেশের নাগরিকদের দৈনন্দিন পুষ্টিচাহিদা তুলনা করে দেখা হয়।

গবেষণায় আরও দেখা যায়, বিশ্বের ৬৫ শতাংশ দেশ তাদের চাহিদার তুলনায় বেশি পরিমাণে মাংস ও দুগ্ধজাত পণ্য উৎপাদন করে। কিন্তু বেশিরভাগ দেশই সবজি এবং উদ্ভিজ্জ প্রোটিনের ঘাটতিতে ভোগে। সবজির ক্ষেত্রে মাত্র ২৪ শতাংশ দেশ নিজস্ব চাহিদা পূরণে সক্ষম। আর ডাল, ছোলা, বাদাম ইত্যাদি উদ্ভিজ্জ প্রোটিন এবং শর্করা উৎপাদনে সফল দেশের সংখ্যা আরও কম।

গায়ানার পর সবচেয়ে স্বয়ংসম্পূর্ণ দেশের তালিকায় রয়েছে চীন ও ভিয়েতনাম, যারা সাতটির মধ্যে ছয়টি খাদ্য উপাদানে স্বয়ংসম্পূর্ণ। বিশ্বজুড়ে প্রতি সাতটির মধ্যে মাত্র একটি দেশ পাঁচটি বা তার বেশি খাদ্য উপাদানে আত্মনির্ভরশীল।

গবেষণাপত্রের প্রধান লেখক, গটিনজেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. জোনাস স্টেহল জানান, স্বয়ংসম্পূর্ণতার অভাব মানেই খারাপ কিছু নয়। অনেক দেশেই প্রাকৃতিকভাবে খাদ্য উৎপাদনের পরিবেশ অনুপযুক্ত—যেমন প্রয়োজনীয় বৃষ্টি, উর্বর মাটি বা স্থিতিশীল জলবায়ুর অভাব। তাই কখনো কখনো দক্ষ উৎপাদনকারী দেশ থেকে খাদ্য আমদানি করাই বেশি যৌক্তিক।

তবে তিনি সতর্ক করেন, খাদ্যে স্বনির্ভরতা না থাকলে বৈশ্বিক সংকট মোকাবিলা করা কঠিন হয়ে পড়ে।

স্টেহলের মতে, ‘এই আগ্রহের পেছনে জাতীয়তাবাদী রাজনীতির উত্থান এবং বৈদেশিক নির্ভরতা কমানোর প্রবণতা কাজ করছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘জনস্বাস্থ্য রক্ষায় একটি টেকসই ও স্থিতিশীল খাদ্য সরবরাহ ব্যবস্থা গড়ে তোলা এখন সময়ের দাবি।’

তথ্যসূত্র: বিবিসি সায়েন্স ফোকাস

পাঠকের মতামত:

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

সর্বোচ্চ পঠিত