ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৯ ভাদ্র ১৪৩২
প্রতিবেদন আইএফসির
ব্যবসা করতে ঘুস দিতে হয় প্রতি ৪ জনের একজনকে

ডুয়া ডেস্ক: বাংলাদেশে ব্যবসা পরিচালনার ক্ষেত্রে দুর্নীতি একটি বড় প্রতিবন্ধকতা হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। আন্তর্জাতিক আর্থিক সংস্থা আইএফসি (ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স কর্পোরেশন) প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশে পরিচালিত প্রতিটি চারটি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে একটি (২৩ শতাংশ) ব্যবসা করতে গিয়ে অন্তত একবার ঘুষ দিতে বাধ্য হয়েছে।
‘বাংলাদেশ: দেশের বেসরকারি খাতের ডায়াগনস্টিক’ শীর্ষক এই প্রতিবেদনটি ২০২৪ সালের এপ্রিলে প্রকাশ করে আইএফসি। এতে ঘুষকে 'উপহার' নামে উল্লেখ করা হয়েছে এবং এটি দেশের ব্যবসায়িক পরিবেশে অন্যতম বড় জটিলতা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনায় বিভিন্ন ধাপে ঘুষ দিতে হয়। যেমন:
৩৫% প্রতিষ্ঠান বৈদ্যুতিক সংযোগ বা অপারেটিং লাইসেন্সের জন্য ঘুষ দিয়েছে।
৭২% প্রতিষ্ঠান মনে করে আমদানি লাইসেন্স পেতে ‘উপহার’ দিতে হবে।
১৯% প্রতিষ্ঠান কর কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকের সময় উপহার দিতে বাধ্য হয়।
প্রতিবেদনটি ওয়ার্ল্ডওয়াইড গভর্নেন্স ইন্ডিকেটরের (WGI) ২০২২ সালের তথ্যের ভিত্তিতে তৈরি। WGI অনুযায়ী, দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে ২১৩টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৮২তম।
আইএফসি আরও উল্লেখ করেছে, দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশে ঘুষের ঘটনা প্রায় ৫০ শতাংশ বেশি। যদিও দেশে দুর্নীতিবিরোধী নীতিমালা রয়েছে, তবে সেগুলোর যথাযথ প্রয়োগের অভাব রয়েছে। এমনকি দুর্নীতির বিরুদ্ধে কাজ করার দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা দুর্নীতি দমন কমিশনকেও (দুদক) রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে।
এ বিষয়ে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (CPD) সম্মানিত ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান মন্তব্য করেন, “এই সমস্যাগুলো দীর্ঘদিনের। ফলে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীরা নিরুৎসাহিত হন। বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলো ঘুষ দিতে চায় না, কারণ তাদের নিজ দেশে এটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হয়।”
তিনি আরও বলেন, “দুর্নীতি দমনে আমাদের শূন্য সহিষ্ণুতা দেখাতে হবে, দুদককে স্বাধীন ও শক্তিশালী করতে হবে, প্রযুক্তির মাধ্যমে হিউম্যান ইন্টারফেস কমাতে হবে। এগুলো বারবার বলা হলেও বাস্তবায়নে দৃশ্যমান অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে না।”
বিশেষজ্ঞদের মতে, ঘুষ ও অনানুষ্ঠানিক অর্থ লেনদেন ব্যবসার ব্যয় বাড়িয়ে দেয়, প্রতিযোগিতা হ্রাস করে এবং শ্রমিকদের মজুরি কমিয়ে দেয়। ব্যবসার নিয়মনীতি উপেক্ষা করার প্রবণতা বাড়ে।
উল্লেখ্য, বিদেশি প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ (FDI) অর্জনে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশের তুলনায় পিছিয়ে। ২০১৩ সালে জিডিপির ১.৭ শতাংশ হারে এফডিআই থাকলেও ২০১৮-২০২২ সালের মধ্যে তা কমে দাঁড়ায় মাত্র ০.৫ শতাংশে। অধিকাংশ এফডিআই ছিল পুনঃবিনিয়োগ, নতুন বিনিয়োগ নয়।
ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, “ঘুষ ও দুর্নীতির সংস্কৃতির কারণে আমাদের প্রতিযোগিতামূলক সক্ষমতা কমে যাচ্ছে। এটা ব্যবসা পরিবেশের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।”
পাঠকের মতামত:
সর্বোচ্চ পঠিত
- বিদেশি বিনিয়োগ বেড়েছে শেয়ারবাজারের ১১ কোম্পানিতে
- কোম্পানি পুরোদমে উৎপাদনে, তারপরও শঙ্কায় বিনিয়োগকারীরা!
- বিও অ্যাকাউন্টের ফি নিয়ে বিনিয়োগকারীদের সুখবর দিল বিএসইসি
- মার্জারের সাফল্যে উজ্জ্বল ফার কেমিক্যাল
- তালিকাভুক্ত কোম্পানির ১৫ লাখ শেয়ার কেনার ঘোষণা
- শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্তির পর প্রথম ‘নো ডিভিডেন্ড’
- তদন্তের খবরে থামছে দুই কোম্পানির ঘোড়দৌড়
- আট কোম্পানির শেয়ার নিয়ে কাড়াকাড়ি
- ডেনিম উৎপাদন বাড়াতে এভিন্স টেক্সটাইলসের বড় পরিকল্পনা
- চলতি সপ্তাহে ঘোষণা আসছে ৫ কোম্পানির ডিভিডেন্ড-ইপিএস
- পাকিস্তান-শ্রীলঙ্কার পথে এগোচ্ছে বাংলাদেশের শেয়ারবাজার
- তিন কোম্পানির অস্বাভাবিক শেয়ারদর: ডিএসইর সতর্কবার্তা
- ব্যাখ্যা শুনতে ডাকা হচ্ছে শেয়ারবাজারের পাঁচ ব্যাংককে
- ২০ লাখ শেয়ার কিনলেন তালিকাভুক্ত কোম্পানির পরিচালক
- শেয়ারবাজারে ইতিহাস গড়ল ব্র্যাক ব্যাংক