ঢাকা, শুক্রবার, ৩০ মে ২০২৫, ১৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

জানালেন প্রধান উপদেষ্টা

বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে যুক্তরাষ্ট্রকে যে প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ

ডুয়া নিউজ- জাতীয়
২০২৫ মে ২৯ ১৮:১৮:১৮
বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে যুক্তরাষ্ট্রকে যে প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ

বাংলাদেশি পণ্যের ওপর ওয়াশিংটনের ৩৭ শতাংশ শুল্ক আরোপের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা আরও বেশি তুলা ও তেল আমদানি করার আগ্রহ প্রকাশ করেছে। এ সংক্রান্ত প্রস্তাব ইতোমধ্যে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানো হয়েছে। এই প্রস্তাবের ভিত্তিতে শুল্ক নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা করার পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

আজ বৃহস্পতিবার (২৯ মে) জাপানে অনুষ্ঠিত নিক্কেই এশিয়া বৈঠকের ফাঁকে দেশটির সংবাদমাধ্যম নিক্কেই এশিয়াকে এসব তথ্য জানিয়েছেন প্রফেসর ইউনূস।

ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, “মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যেহেতু বিশ্বের প্রত্যেক দেশের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে চান তাই আমরা এ প্রস্তাব দিয়েছি। যদি আমেরিকান পণ্য আরও বেশি কেনার প্রস্তাব গৃহীত হয় তাহলে বাংলাদেশ অন্যান্য দেশ থেকে এ পণ্য আমদানি কমিয়ে দেবে। আর যুক্তরাষ্ট্র থেকে বেশি করে আমদানি করবে।”

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “উদাহরণ স্বরূপ, আমরা মধ্য এশিয়া থেকে প্রচুর তুলা কিনি। ভারত থেকে, অন্যান্য দেশ থেকে, এখন আমরা ভাবছি… কেন আমরা তুলা যুক্তরাষ্ট্র থেকে কিনি না? এতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আমাদের বাণিজ্য ঘাটতি অনেক বেশি কমবে।”

চলতি অর্থবছরে গত জুন থেকে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রে ৬.৮ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে। একই সময়ে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ২.৫ বিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি করা হয়েছে। এর মধ্যে তুলার মূল্য ছিল ৩৬১ মিলিয়ন ডলার।

বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ পোশাক উৎপাদনকারী হিসেবে বাংলাদেশ এই অর্থবছরে মোট ৭.৯ বিলিয়ন ডলারের তুলা আমদানি করেছে। এর কিছু অংশ এসেছে মধ্য এশিয়ার উজবেকিস্তান ও তুর্কমেনিস্তান থেকে। সব মিলিয়ে চলতি অর্থবছরে ঢাকার আমদানি পণ্যের ১২.৫ শতাংশই তুলা ছিল।

ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, “যুক্তরাষ্ট্রে যারা তুলা উৎপাদন করে তাদের সঙ্গে বাংলাদেশের সখ্যতা তৈরি হয়েছে; যারা মার্কিন প্রশাসনে বাংলাদেশকে রাজনৈতিক সুবিধা দেয়।” তিনি আরও বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রের তুলা উৎপাদনকারীরা আমাদের খুব ভালো বন্ধুতে পরিণত হয়েছে। তারা আমাদের মার্কিন প্রশাসনে কিছু রাজনৈতিক সুবিধা দেয়।”

অন্যদিকে জ্বালানির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বেশিরভাগই মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর ওপর নির্ভরশীল। তবে এই পণ্য যুক্তরাষ্ট্র থেকেও আমদানি করা সম্ভব বলে মন্তব্য করেছেন প্রফেসর ইউনূস।

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য আলোচনা কখন এবং কোথায় হবে তার সঠিক সময় এখনও নির্ধারিত হয়নি বলে জানান প্রধান উপদেষ্টা। শুল্কে কতটা ছাড় পাওয়া যাবে তাও নিশ্চিত নয়। তবে ট্রাম্পের অতিরিক্ত শুল্ক আরোপের হুমকিকে ‘হুমকি নয়, বরং সুযোগ’ হিসেবে দেখার কথাও উল্লেখ করেন তিনি।

ড. ইউনূস যখন এই সাক্ষাৎকারটি দেন তখন যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য আদালত ট্রাম্পের নতুন শুল্ক আরোপ কার্যকর হওয়া স্থগিত করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের আদালত বলেছেন, ‘সংবিধান অনুযায়ী বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব কংগ্রেসের। প্রেসিডেন্ট আইনসভার এই দায়িত্বকে অগ্রাহ্য করতে পারবেন না।’

সাক্ষাৎকারে প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, “সাবেক স্বৈরাচার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমলে বাংলাদেশ থেকে ২৩৪ বিলিয়ন ডলার পাচার হয়েছে। এছাড়া দেশের ভেতর লুটপাট হওয়া ১১ থেকে ১২ বিলিয়ন ডলার শনাক্ত ও সেগুলো বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে।”

তিনি আরও বলেন, “যখন অন্তর্বর্তী সরকার এই অর্থগুলো উদ্ধার করতে পারবে তখন দুটি আলাদা ফান্ড গঠন করা হবে। যেগুলো থেকে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যখাতে অর্থ দেওয়া হবে। এছাড়া গরীব মানুষকে উদ্যোক্তা বানিয়ে তাদের জীবন ‘বদলে’ দিতে এসব অর্থ কাজে লাগানো হবে।”

গত সপ্তাহে ড. ইউনূস প্রধান উপদেষ্টার পদ থেকে পদত্যাগের ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে নিক্কেই এশিয়াকে তিনি বলেন, “আমি বাংলাদেশে এ প্রশ্নের উত্তর দিইনি। যেহেতু আমি বাংলাদেশে এ নিয়ে কিছু বলিনি, যদি আমি এখন জাপানে এ ব্যাপারে বলি, তাহলে বিষয়টি আমার জন্য ঝামেলা সৃষ্টি করবে।”

সূত্র: নিক্কেই এশিয়া

পাঠকের মতামত:

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

সর্বোচ্চ পঠিত