ঢাকা, বুধবার, ২৮ মে ২০২৫, ১৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
বাতিল হচ্ছে ২০ আর্থিক প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স, তালিকায় শেয়ারবাজারের ১৪টি

দেশের ২০টি ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের (এনবিএফআই) আর্থিক ভিত্তি চরমভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এসব প্রতিষ্ঠানে আমানত রাখা গ্রাহকরা অর্থ ফেরত না পাওয়ার অভিযোগ করছেন। এ প্রেক্ষিতে প্রতিষ্ঠানগুলোর নিবন্ধন সনদ (লাইসেন্স) বাতিলের উদ্যোগ নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংক ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট ২০টি প্রতিষ্ঠানে চিঠি দিয়ে জানতে চেয়েছে, কেন তাদের লাইসেন্স বাতিল করা হবে না। চিঠির জবাব দিতে ১৫ দিনের সময়ও বেধে দেওয়া হয়েছে।
চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, এসব প্রতিষ্ঠানের সম্পদ আমানতকারীদের দায় পরিশোধে যথেষ্ট নয়, শ্রেণিকৃত ঋণের হার অত্যন্ত বেশি এবং মূলধনের ঘাটতি রয়েছে। এছাড়াও, এসব প্রতিষ্ঠান ন্যূনতম মূলধন সংরক্ষণে ব্যর্থ, যা আর্থিক খাতের স্থিতিশীলতায় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
চিহ্নিত ২০টি প্রতিষ্ঠান হলো- সিভিসি ফাইন্যান্স, বে লিজিং, ইসলামিক ফাইন্যান্স, মেরিডিয়ান ফাইন্যান্স, জিএসপি ফাইন্যান্স, হজ্জ ফাইন্যান্স, ন্যাশনাল ফাইন্যান্স, আইআইডিএফসি, প্রিমিয়ার লিজিং, প্রাইম ফাইন্যান্স, উত্তরা ফাইন্যান্স, আভিভা ফাইন্যান্স, ফিনিক্স ফাইন্যান্স, পিপলস লিজিং, ফার্স্ট ফাইন্যান্স, ইউনিয়ন ক্যাপিটাল, ইন্টারন্যাশনাল লিজিং, বিআইএফসি, ফারইষ্ট ফাইন্যান্স ও এফএএস ফাইন্যান্স।
কোম্পানিগুলোর মধ্যে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত রয়েছে ১৪টি। যেগুলো হলো- বে লিজিং, ইসলামিক ফাইন্যান্স, জিএসপি ফাইন্যান্স, প্রিমিয়ার লিজিং, প্রাইম ফাইন্যান্স, উত্তরা ফাইন্যান্স, ফিনিক্স ফাইন্যান্স, পিপলস লিজিং, ফার্স্ট ফাইন্যান্স, ইউনিয়ন ক্যাপিটাল, ইন্টারন্যাশনাল লিজিং, বিআইএফসি, ফারইষ্ট ফাইন্যান্স ও এফএএস ফাইন্যান্স।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, দেশের ৩৫টি এনবিএফআই-এর মধ্যে এই ২০টির অবস্থা অত্যন্ত নাজুক। ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে এই প্রতিষ্ঠানগুলোর আমানতের পরিমাণ ছিল ২২ হাজার ৭৬০ কোটি টাকা, যার বিপরীতে ঋণ দেওয়া হয়েছে প্রায় ২০ হাজার ৮০৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৮৩ শতাংশ ঋণই খেলাপি হয়ে গেছে — অর্থাৎ প্রায় ২১ হাজার ৪৬২ কোটি টাকা। অথচ জামানতের পরিমাণ মাত্র ৬ হাজার কোটি টাকা, যা দিয়ে সব আমানত ফেরত দেওয়া সম্ভব নয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা গেছে, এই ২০ প্রতিষ্ঠান বছরে কর্মকর্তাদের বেতন বাবদ খরচ করে ১৭২ কোটি টাকা এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের বেতন ১২ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে অফিস ভাড়া, প্রশাসনিক ব্যয়সহ মোট বার্ষিক খরচ দাঁড়ায় ২০৬ কোটি টাকায়। অথচ প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রকৃত সুদ-আয় প্রায় শূন্যের কোঠায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, বহুল আলোচিত আর্থিক প্রতারক প্রশান্ত কুমার (পি কে) হালদার যেসব আর্থিক প্রতিষ্ঠানে অনিয়ম করেছিলেন, সেই প্রতিষ্ঠানগুলোর অনেকগুলোই এই তালিকায় রয়েছে। এক সময় তিনি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণাধীন একটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছিলেন। পি কে হালদারের মাধ্যমে যে অনিয়ম শুরু হয়েছিল, সেটির ধারাবাহিকতায় পরবর্তীতে ইসলামী ধারার ব্যাংকগুলোতেও অনিয়ম ছড়িয়ে পড়ে। ফলে পুরো আর্থিক খাত এখন আস্থাহীনতার সংকটে।
বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, চিঠির জবাব পর্যালোচনা করে প্রয়োজনে এই প্রতিষ্ঠানগুলো একীভূতকরণ বা অবসায়নের উদ্যোগ নেওয়া হবে। খাতটির স্থিতিশীলতা ফেরাতে এবং ভালো প্রতিষ্ঠানের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ঠেকাতে দ্রুত ও কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার প্রয়োজন রয়েছে বলে মনে করছে নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি।
পাঠকের মতামত:
সর্বোচ্চ পঠিত
- সরকারি কোম্পানি শেয়ারবাজারে আনার উদ্যোগ, তালিকায় ২১ প্রতিষ্ঠান
- বাতিল হচ্ছে ২০ আর্থিক প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স, তালিকায় শেয়ারবাজারের ১৪টি
- দশ হাজার কোটি ঋণের বোঝায় আইসিবি, প্রস্তাব বিশেষ তহবিলের
- শেয়ারবাজারের ৯ ব্যাংক এমডিবিহীন, নেতৃত্ব সংকট তীব্র
- দুর্বল ৬ শেয়ারে বিনিয়োগকারীদের হতাশা আরও বেড়েছে
- ড. ইউনূসকে রাষ্ট্রপতি, তারেক রহমানকে প্রধানমন্ত্রী করার প্রস্তাব
- ঢাবির পীরগাছা উপজেলা সংগঠনের নেতৃত্বে রবিউল ও সৈকত
- নানামুখী চেষ্টার পরও ভেঙে পড়ছে দেশের শেয়ারবাজার
- মন্দার বাজারে আলো ছড়িয়েছে ২০ শেয়ার
- লোকসান থেকে মুনাফায় বস্ত্র খাতের চার কোম্পানি
- জেড ক্যাটাগরি ও ন্যুনতম শেয়ারধারণে ব্যর্থ কোম্পানিতে বসছে স্বতন্ত্র পরিচালক
- ‘বাংলাদেশের শেয়ারবাজার ডাকাতদের আড্ডা হয়ে গেছে’
- কমোডিটি ডেরিভেটিভ যুগে প্রবেশ করছে দেশের শেয়ারবাজার
- ঈদের ছুটি নিয়ে নতুন প্রস্তাবনা
- শেয়ারবাজারের উন্নয়নে বিএসইসি ও বৈশ্বিক কাস্টডিয়ান ব্যাংকের বৈঠক