ঢাকা, শুক্রবার, ৩০ মে ২০২৫, ১৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

নিত্যপণ্যে কর ছাড়, বাজেটে মিলতে পারে স্বস্তি

ডুয়া নিউজ- জাতীয়
২০২৫ মে ২৯ ১৮:৫৮:৫০
নিত্যপণ্যে কর ছাড়, বাজেটে মিলতে পারে স্বস্তি

আসন্ন ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ব্যবসার সম্প্রসারণ ও কর জাল বিস্তারে জোরালো পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে সাধারণ মানুষের স্বার্থ বিবেচনায় রেখে বাজারে স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যে কর ছাড়ের প্রস্তাব অন্তর্ভুক্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) আয়কর ফাঁকি রোধে বেশ কিছু কড়াকড়ি প্রস্তাব করছে, তবে করদাতাদের সুবিধার্থে কর বান্ধব উদ্যোগও নেয়া হতে পারে বলে জানা গেছে।

এনবিআর ও অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে আরও জানা গেছে, বাজেটে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের ঋণ পত্রে উৎসে কর হ্রাসের প্রস্তাব আসতে পারে। পাশাপাশি করদাতাদের জন্য আরও কিছু সহায়ক ও উৎসাহমূলক ব্যবস্থা থাকছে প্রস্তাবে।

নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের ঋণপত্রে কমছে উৎসে কর

নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানিতে উৎসে কর বা সোর্স ট্যাক্স রাজস্ব আদায়ে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা না রাখলেও, বাস্তবে এক শ্রেণির ব্যবসায়ী এই করকে পণ্যের দাম বাড়ানোর অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করে থাকেন। বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে আসন্ন ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে উৎসে কর হ্রাসের সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে।

প্রস্তাবিত বাজেটে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম সহনীয় রাখতে স্থানীয় ঋণপত্রের কমিশনে আরোপিত উৎসে কর ১ শতাংশ থেকে কমিয়ে অর্ধেকে নামিয়ে আনার পরিকল্পনা রয়েছে। এর ফলে আমদানি খরচ কিছুটা হ্রাস পাবে এবং বাজারে এসব পণ্যের দাম কমতে পারে।

উল্লেখযোগ্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মধ্যে রয়েছে—ধান, গম, আলু, পেঁয়াজ, রসুন, মটরশুঁটি, ছোলা, মসুর ডাল, আদা, হলুদ, শুকনো মরিচ, ভুট্টা, আটা, মোটা আটা, লবণ, চিনি, ভোজ্যতেল, কালো গোলমরিচ, দারুচিনি, বাদাম, লবঙ্গ, খেজুর, ক্যাসিয়া পাতা, সব ধরনের ফল, কম্পিউটার ও এর যন্ত্রাংশ।

এই প্রস্তাব বাস্তবায়ন হলে এসব নিত্যপণ্যের দাম কিছুটা কমতে পারে, যা সাধারণ মানুষের জন্য ইতিবাচক একটি বার্তা—বিশেষ করে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির সময়।

বাজেটে আমদানি-রপ্তানির শর্ত শিথিল, কমবে জরিমানাও

আসন্ন বাজেটে আমদানি-রপ্তানি খাতে ব্যবসাবান্ধব বেশ কিছু প্রস্তাব আনা হতে পারে। ব্যবসায়ীদের বাড়তি চাপ কমাতে আমদানি-রপ্তানির বিভিন্ন শর্ত শিথিলের পাশাপাশি জরিমানার হারও কমানোর উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কর বিভাগের একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, আমদানি ঘোষণাপত্রে ছোটখাটো ভুলের জন্য যে ৫০ শতাংশ জরিমানা দিতে হয়, তা বাতিল করার চিন্তা-ভাবনা চলছে। পরিবর্তে এসব ভুলের ক্ষেত্রে নামমাত্র জরিমানার ব্যবস্থা রাখার প্রস্তাব আসছে বাজেটে। এতে ব্যবসায়ীরা অপ্রয়োজনে বড় অঙ্কের জরিমানার ঝুঁকি থেকে মুক্তি পাবেন।

এছাড়া আমদানি নীতি আদেশ (আইপিও) লঙ্ঘনের ঘটনায় যে নিয়মে আমদানি করের সমপরিমাণ ন্যূনতম জরিমানা ধার্য করা হয়, সেটিও সংশোধনের প্রস্তাব রয়েছে। সংশোধনের ফলে সংশ্লিষ্ট কমিশনাররা নিজেদের বিবেচনায় তুলনামূলকভাবে কম জরিমানা আরোপ করতে পারবেন।

একই সঙ্গে জাহাজ কোম্পানিগুলোর কার্গো ঘোষণায় ভুলের জন্য বর্তমানে যে ন্যূনতম ৫০ হাজার টাকার জরিমানা কার্যকর রয়েছে, সেটিও বাতিলের পরিকল্পনা রয়েছে। এর বদলে কমিশনারদের সামান্য জরিমানা আরোপের ক্ষমতা দেওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে।

এই পরিবর্তনগুলো বাস্তবায়িত হলে আমদানি-রপ্তানিকারকদের জন্য প্রক্রিয়াগুলো আরও সহজ ও স্বস্তিদায়ক হবে বলে মনে করা হচ্ছে।

অগ্রিম আয়কর (এআইটি) বসছে প্রায় ১৫০ আমদানি পণ্যে

দেশে রয়েছে হাজার হাজার আমদানিকারক ব্যবসায়ী, যারা শত শত কোটি টাকার লেনদেন করে থাকেন। যদিও তারা ন্যূনতম ট্রেড মার্জিনে পণ্য বাজারে সরবরাহ করেন, বড় অঙ্কের লেনদেনের ফলে লোকসানের ঝুঁকি তাদের খুব কম থাকে। তবুও, বেশিরভাগ ব্যবসায়ী নানা অজুহাতে আয়কর রিটার্ন দাখিল করেন না। এই শ্রেণির ব্যবসায়ীদের করজালের আওতায় আনতে আসন্ন ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে আমদানিকৃত প্রায় দেড় শতাধিক পণ্যে অগ্রিম কর (AIT) আরোপের প্রস্তাব করা হচ্ছে।

যেসব পণ্যে এআইটি বসানোর পরিকল্পনা রয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে—আলু, পেঁয়াজ, মসুর ডাল, চিনি, ময়দা, ছোলা, ভুট্টা, তুলা ও মানবসৃষ্ট তন্তু। চিকিৎসা সরঞ্জামের মধ্যে রয়েছে হুইল চেয়ার, এনজিওগ্রাফি ও গাইড ক্যাথেটার, কৃত্রিম দাঁত, হিয়ারিং এইড। তথ্যপ্রযুক্তি সংশ্লিষ্ট পণ্যের মধ্যে রয়েছে নেটওয়ার্কিং ডিভাইস, কম্পিউটার মনিটর, প্রিন্টার রিবন, রাউটার, মডেম, টোনার ও অপারেটিং সিস্টেম। এছাড়া, শিল্প খাতে ব্যবহৃত রাসায়নিক, বিমান, বাস, মাছ ও মাংসও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

কর কর্মকর্তাদের মতে, এসব পণ্যের আমদানিতে ২ শতাংশ হারে অগ্রিম কর দিতে হবে, যা পরবর্তীতে আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়ার সময় সমন্বয় করা যাবে। ফলে এটি ব্যবসায়ীদের জন্য বাড়তি কর নয়। বরং এটি আয়কর প্রদানে কমপ্লায়েন্স নিশ্চিতের একটি কৌশল মাত্র।

তবে অনেক ব্যবসায়ীর অভিযোগ, তারা এই করের সমন্বয় বা ফেরত পেতে সমস্যায় পড়েন। যদিও কর্মকর্তারা আশ্বস্ত করছেন, নিয়ম অনুযায়ী এআইটি ব্যবসায়ীদের চূড়ান্ত কর নয়, বরং এটি রিটার্নের সময় হিসাব করে সমন্বয়যোগ্য। তাই এতে পণ্যের বাজারমূল্য বাড়বে না বলেই সরকার মনে করছে।

আয়করের ক্ষেত্রে আরো যেসব পরিবর্তন আসতে পারে

আসন্ন বাজেটে প্রথমবার আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে যাওয়া করদাতাদের জন্য থাকছে স্বস্তির খবর। নতুন করদাতাদের করপ্রদান সহজ ও উৎসাহব্যঞ্জক করতে আয়কর আইনে যুক্ত করা হচ্ছে সর্বনিম্ন এক হাজার টাকা কর প্রদানের বিধান। এই উদ্যোগের লক্ষ্য হলো নতুন করদাতাদের ওপর করের চাপ কমানো এবং করভীতি দূর করা।

এ বিধান অনুযায়ী, যেসব ব্যক্তি প্রথমবার রিটার্ন জমা দেবেন, তারা আয় অনুযায়ী এক হাজার থেকে সর্বোচ্চ পাঁচ হাজার টাকার মধ্যে যেকোনো অঙ্কের কর দিতে পারবেন। তবে, একইসঙ্গে বাজেটে করহারের পরিবর্তনও আনা হচ্ছে—প্রাথমিক করহার ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করার প্রস্তাব রয়েছে।

বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক বাস্তবতায় এই করস্ল্যাব সাধারণত মধ্যবিত্ত শ্রেণিকে অন্তর্ভুক্ত করে। ফলে করস্ল্যাব ও করহার বৃদ্ধি মধ্যবিত্তের ওপর অতিরিক্ত করের চাপ সৃষ্টি করতে পারে। অর্থাৎ, একদিকে নতুন করদাতাদের জন্য উৎসাহমূলক ব্যবস্থা থাকলেও, অন্যদিকে নিয়মিত মধ্যবিত্ত করদাতাদের জন্য করভার কিছুটা বেড়ে যেতে পারে।

পাঠকের মতামত:

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

সর্বোচ্চ পঠিত