ঢাকা, বুধবার, ১০ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩২

ইউরোপীয়দের দুর্বল বললেন ট্রাম্প

২০২৫ ডিসেম্বর ১০ ১৫:৪৮:২৭

ইউরোপীয়দের দুর্বল বললেন ট্রাম্প

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:ইউরোপের রাজনৈতিক নেতৃত্বের প্রতি নতুন করে তীব্র সমালোচনা ছুড়ে দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি অভিযোগ করেন, ইউরোপীয় দেশগুলো দুর্বল নেতৃত্বের কারণে অভিবাসন সংকট সামাল দিতে ব্যর্থ হয়েছে এবং ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ বন্ধেও কার্যকর কোনো ভূমিকা রাখতে পারেনি। পলিটিকোকে দেওয়া দীর্ঘ এক সাক্ষাৎকারে তিনি ইঙ্গিত দেন, ইউক্রেনকে দেওয়া যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনও ভবিষ্যতে কমে যেতে পারে।

সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বলেন, ‘ক্ষয়িষ্ণু’ ইউরোপীয় দেশগুলো কিয়েভকে যুদ্ধ চালিয়ে যেতে দিচ্ছে, যেন তারা পতনের মুখে ঠেলে দেওয়া ছাড়া আর কিছু করছে না। তার দাবি, যুক্তরাষ্ট্রের নেওয়া শান্তি উদ্যোগে ইউরোপীয় নেতারা নিজেদের ভূমিকা রাখার চেষ্টা করছেন ঠিকই, তবে দ্রুত সমাধানের প্রক্রিয়া তাদের মহাদেশের দীর্ঘমেয়াদি স্বার্থ ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে এই আশঙ্কাতেই তারা দ্বিধাগ্রস্ত।

যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইয়েভেট কুপার ট্রাম্পের মন্তব্যের জবাবে বলেন, ইউরোপ দুর্বল নয় বরং শক্তি ও ঐক্যের জায়গা থেকেই ইউরোপীয় দেশগুলো প্রতিরক্ষা খাতে বিনিয়োগ বাড়িয়েছে এবং ইউক্রেনকে আর্থিক সহায়তা দিচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি এবং ট্রাম্প উভয়েই শান্তি প্রতিষ্ঠার পথে কাজ করছেন, বিপরীতে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন নিয়মিত ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়ে সংঘাত আরও বাড়াচ্ছেন।

ট্রাম্প জেলেনস্কিকে শান্তি চুক্তির দিকে এগোতে ক্রমাগত চাপ দিয়ে যাচ্ছেন। এমনকি তিনি বলছেন, মস্কোর প্রতি কিছু ভূখণ্ড ছাড় দিতে ইউক্রেনকে বিবেচনা করা উচিত।

অন্যদিকে জেলেনস্কি এক্স-এ লিখেছেন, ইউক্রেন ও ইউরোপ যুদ্ধ শেষের জন্য প্রয়োজনীয় সব উপাদান নিয়ে সক্রিয়ভাবে কাজ করছে এবং সংশ্লিষ্ট পরিকল্পনার ইউক্রেনীয় ও ইউরোপীয় অংশ এখন আরও পরিপক্ব। তিনি জানান, পরিকল্পনাগুলো বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের কাছে পেশ করা হতে পারে।

ট্রাম্পের কঠোর সমালোচনা আসে এমন সময়, যখন মাত্র একদিন আগে লন্ডনে ইউরোপীয় নেতারা ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ থামাতে যৌথ কূটনৈতিক প্রচেষ্টা নিয়ে বৈঠক করেছেন।

যুদ্ধ থামাতে ইউরোপ কিছু করতে পারে কিনা এমন প্রশ্নে ট্রাম্প বলেন, ইউরোপীয় দেশগুলো কেবল কথাই বলে, বাস্তবে কোনো অগ্রগতি ঘটাতে পারে না।

গত কয়েক সপ্তাহ ধরে মার্কিন কর্মকর্তারা ইউক্রেনীয় ও রাশিয়ান প্রতিনিধিদের সঙ্গে পৃথকভাবে আলোচনা করলেও এখনো কোনো সমঝোতার কাছাকাছি পৌঁছানো যায়নি। এদিকে জেলেনস্কি ন্যাটো ও ইউরোপীয় নেতাদের অনুরোধ করেছেন, যুক্তরাষ্ট্র যেন এমন কোনো সম্ভাব্য চুক্তিকে সমর্থন না করে যা ভবিষ্যতে ইউক্রেনকে আবার ঝুঁকির মুখে ফেলতে পারে।

এমন উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতিতে, কোনো প্রমাণ ছাড়াই ট্রাম্প আবারও দাবি করেছেন জেলেনস্কিই শান্তি প্রতিষ্ঠার পথে প্রধান বাধা।

পলিটিকোকে তিনি আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্র সমর্থিত সমঝোতা প্রস্তাব ইউক্রেনের আলোচকরা ইতিবাচকভাবে দেখলেও জেলেনস্কি নাকি সেটি পড়েই দেখেননি।

ন্যাটো মহাসচিবের একটি মন্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে ট্রাম্প দাবি করেন, ‘ন্যাটো আমাকে ড্যাডি বলে ডাকে’, তবে তাদের কথার চেয়ে কাজ কম, আর যুদ্ধ লম্বা হচ্ছেই।

চার বছর ধরে চলমান ইউক্রেন যুদ্ধকে কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবিত শান্তি পরিকল্পনা ইউরোপে ব্যাপক উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। ইউরোপীয় দেশগুলোর আশঙ্কা এই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে ইউক্রেনকে রাশিয়ার কাছে কিছু ভূখণ্ড ছাড় দিতে হতে পারে এবং তা ভবিষ্যতে দেশটিকে আরও বড় নিরাপত্তা ঝুঁকিতে ফেলতে পারে।

ইএইচপি

পাঠকের মতামত:

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

সর্বোচ্চ পঠিত