ঢাকা, মঙ্গলবার, ৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩২

গত দেড় বছরে হামলা-হ’ত্যার শিকার ১০৭৩ সাংবাদিক: টিআইবি

২০২৫ ডিসেম্বর ০৯ ১৬:৪৪:৫০

গত দেড় বছরে হামলা-হ’ত্যার শিকার ১০৭৩ সাংবাদিক: টিআইবি

নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশের গণমাধ্যমকর্মীদের ওপর হামলা, মামলা, হুমকি, হয়রানি থেকে শুরু করে হত্যা ও চাকরিচ্যুতি জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানের পরবর্তী সময়ে এমন নানামুখী দমন-পীড়নের ঘটনায় অন্তত ১ হাজার ৭৩ জন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন বলে জানাল ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। গণমাধ্যমে প্রকাশিত বিভিন্ন খবর বিশ্লেষণ করে সংগঠনের প্রকাশিত সাম্প্রতিক প্রবন্ধে এ চিত্র উঠে এসেছে।

মঙ্গলবার আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবস উপলক্ষে ধানমন্ডির মাইডাস ভবনে টিআইবি আয়োজিত আলোচনায় ‘কর্তৃত্ববাদ পতন-পরবর্তী বাংলাদেশের গণমাধ্যমের পরিস্থিতি’ শীর্ষক এই প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন টিআইবির আউটরিচ অ্যান্ড কমিউনিকেশন ডেপুটি কো-অর্ডিনেটর জাফর সাদিক।

উপস্থাপনায় তিনি জানান, ৫ আগস্টের পর থেকে ১ নভেম্বর পর্যন্ত ৪৭৬টি ঘটনায় মোট ১,০৭৩ জন গণমাধ্যমকর্মী বিভিন্নভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এর মধ্যে ২৫৯টি ঘটনায় ৪৫৯ জন হামলার শিকার হন। ৮৯টি ঘটনায় ৯৯ জনকে হুমকি, ৩০টি ঘটনায় ৭০ জনকে হয়রানি এবং ১৯টি ঘটনায় ২৭ জনকে আটক করা হয়। এ ছাড়া ৯টি ঘটনায় সাংবাদিকদের পরিবারের অন্তত ১৭ সদস্য হামলা বা ভাঙচুরের শিকার হয়েছেন। আরও উদ্বেগজনক হলো এই সময়ে ৬ জন সাংবাদিককে হত্যা করা হয়েছে, এবং চাকরিচ্যুতি, অব্যাহতি বা বরখাস্তের ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন অন্তত ১৮৯ জন সংবাদকর্মী।

কর্তৃত্ববাদ পতনের পর গণমাধ্যমে বহুল প্রতীক্ষিত স্বচ্ছতা, স্বাধীনতা ও সংস্কারের যে প্রত্যাশা ছিল বাস্তবের চিত্র তেমন আশাব্যঞ্জক নয় বলেও উল্লেখ করেন জাফর সাদিক। তার মতে, ইতিবাচক পরিবর্তনের কিছু ইঙ্গিত দেখা গেলেও গত ১৬ মাসে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি। বিশ্ব সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা সূচকে বাংলাদেশ ১৬ ধাপ এগোলেও ১৪৯তম অবস্থান আশাবাদের জায়গা দেয় না।

তিনি জানান, ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর গণমাধ্যম ব্যবস্থাপনায় বড় ধরনের অদলবদল ঘটে। বিভিন্ন রাজনৈতিক প্রভাবের প্রশ্নও উঠে এসেছে। কমপক্ষে আটটি সংবাদপত্রের সম্পাদক এবং ১১টি টেলিভিশন চ্যানেলের বার্তা প্রধানকে সরিয়ে দেওয়া হয় বা ‘পদত্যাগে বাধ্য’ করা হয়। অনেকে আবার স্বেচ্ছায় দায়িত্ব ছাড়েন। নির্বাহী সম্পাদক, প্রধান বার্তা সম্পাদক, বার্তা সম্পাদকসহ গুরুত্বপূর্ণ পদেও বড় ধরনের পরিবর্তন আনা হয়।

গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনের উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেন, এ সময়ে অন্তত ২৯টি গণমাধ্যমে শীর্ষপদে রদবদল হয়েছে এবং একটি অনলাইন পোর্টালের মালিকানা পরিবর্তিত হয়েছে। অনেকক্ষেত্রেই এই পরিবর্তন স্বচ্ছতার ঘাটতিতে ছিল, এমনকি সাংবাদিকদের ওপর নিয়ন্ত্রণ বাড়ানোর উদাহরণও পাওয়া গেছে। ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপ, দৈনিক জনকণ্ঠ, একাত্তর, ডিবিসি, সময় টেলিভিশনসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে রাজনৈতিক প্রভাব-সম্পর্কিত ব্যক্তিদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

টিআইবির প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, আগের সরকারের সময় রাজনৈতিক ঘনিষ্ঠদের হাতে গণমাধ্যমের নিবন্ধন দেওয়া হলেও পরিবর্তনের পরও পুরোনো এই ধারা পুরোপুরি থামেনি। এ বছর নেক্সট টিভি ও লাইভ টিভি নামে দুটি নতুন চ্যানেলের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে, যার মালিকানায় রয়েছে গণ-অভ্যুত্থানের নেতৃত্বে থাকা একাংশের নেতা। পাশাপাশি বন্ধ থাকা চ্যানেল ওয়ান পুনরায় চালু হয়েছে; দিগন্ত টিভি সম্প্রচারের পথে; ‘আমার দেশ’ পত্রিকা পুনরায় প্রকাশিত হয়েছে। আরও একটি নতুন চ্যানেল স্টার টিভ প্রচার শুরু করার অপেক্ষায়। গ্রিন টেলিভিশনও অক্টোবর থেকে আবার সম্প্রচারে ফিরেছে।

সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী, দেশে বর্তমানে ৩২৭০টি সংবাদপত্র ও সাময়িকী রয়েছে ঢাকায় ১৩৭১টি এবং ঢাকার বাইরে ১৮৯৮টি। বেসরকারি টেলিভিশন রয়েছে ৫০টি, এর মধ্যে ৩৪টি সম্প্রচারে। নিবন্ধিত অনলাইন নিউজপোর্টাল ৪০৬টি ২১৩টি স্বতন্ত্র অনলাইন এবং ১৯৬টি প্রিন্টমিডিয়ার অনলাইন সংস্করণ। এ ছাড়া ২৮টি অনুমোদিত এফএম রেডিওর মধ্যে কার্যক্রম চালাচ্ছে ১৯টি।

ইএইচপি

পাঠকের মতামত:

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

সর্বোচ্চ পঠিত