ঢাকা, সোমবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৫, ৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩২

সঞ্চয়পত্র ও প্রাইজবন্ড বিক্রি বন্ধ করছে বাংলাদেশ ব্যাংক

২০২৫ নভেম্বর ১৭ ১২:৪০:১৯

সঞ্চয়পত্র ও প্রাইজবন্ড বিক্রি বন্ধ করছে বাংলাদেশ ব্যাংক

নিজস্ব প্রতিবেদক: আগামী ৩০ নভেম্বর থেকে বাংলাদেশ ব্যাংক গ্রাহক পর্যায়ে সঞ্চয়পত্র ও প্রাইজবন্ড বিক্রিসহ মোট পাঁচ ধরনের সেবা বন্ধ করে দিচ্ছে। এই সেবাগুলোর মধ্যে রয়েছে ছেঁড়া-ফাটা নোট বদল, সরকারি চালান সেবা এবং চালান সংক্রান্ত ভাংতি টাকা প্রদান। প্রাথমিকভাবে বাংলাদেশ ব্যাংকের মতিঝিল অফিস থেকে এই কার্যক্রম শুরু হবে এবং পর্যায়ক্রমে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ঢাকার বাইরের অন্যান্য বিভাগীয় অফিসেও এসব সেবা বন্ধ করে দেওয়া হবে। তবে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক এই সেবাগুলো বন্ধ করলেও গ্রাহকরা বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর শাখা থেকে এই সুবিধাগুলো যথারীতি পাবেন।

বাংলাদেশ ব্যাংক নিশ্চিত করতে চায় যে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো যেন নির্বিঘ্নে এসব সেবা প্রদান করতে পারে। এই লক্ষ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংক তাদের তদারকি বৃদ্ধি করবে এবং শিগগিরই গ্রাহকদের এসব বিষয়ে অবহিত করতে প্রচারণা চালাবে। এরই মধ্যে অর্থ মন্ত্রণালয়কে এই সিদ্ধান্তের বিষয়ে জানানো হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর গত ২২ জুন মতিঝিল অফিসের ক্যাশ বিভাগ পরিদর্শন করেন এবং আধুনিকায়নের বিষয়ে দিকনির্দেশনা দেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে গঠিত একটি কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে এই সিদ্ধান্তগুলো নেওয়া হচ্ছে। এর আগে, গত ১৮ আগস্ট ও ২২ সেপ্টেম্বর সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তাদের বৈঠকে গ্রাহক সংশ্লিষ্ট সব ধরনের সেবা বন্ধের উদ্যোগ নিয়ে আলোচনা হয়, যা পূর্বে দুইজন গভর্নর চেষ্টা করেও বাস্তবায়ন করতে পারেননি।

যেসব সেবা বন্ধ হচ্ছে:

বাংলাদেশ ব্যাংকের মতিঝিল কার্যালয়সহ বিভিন্ন শাখা কার্যালয় থেকে সঞ্চয়পত্র, প্রাইজবন্ড কেনাবেচাসহ ১০ ধারার সেবা প্রদান করা হতো। সরকারের পক্ষ থেকে দেওয়া এই সেবাগুলো বর্তমান মতিঝিল কার্যালয়ের ২৮টি কাউন্টারের মাধ্যমে প্রদান করা হতো। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কার্যালয় আধুনিকায়ন, উন্নত নিরাপত্তাব্যবস্থা, স্বয়ংক্রিয় ভল্ট স্থাপন এবং মূল ভবনের নিরাপত্তাব্যবস্থা উন্নতির জন্য নেওয়া সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, বাংলাদেশ ব্যাংকের পাঁচটি সেবা প্রদানকারী ১২টি কাউন্টার ৩০ নভেম্বরের পর বন্ধ হয়ে যাবে।

এছাড়াও, আগামী ডিসেম্বর থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের মতিঝিল কার্যালয় থেকে নগদ টাকায় সঞ্চয়পত্র ও প্রাইজবন্ড কেনাবেচা হবে না। সরকারি ট্রেজারি চালানও জমা নেওয়া হবে না। পাশাপাশি ভাংতি টাকা এবং ছেঁড়া-ফাটা নোট পরিবর্তনের সেবাও বন্ধ হয়ে যাবে।

তবে, ১৬টি কাউন্টারে কিছু সেবা চালু থাকবে, যেমন - ধাতব মুদ্রা বিনিময়, স্মারক মুদ্রা বিক্রি, অপ্রচলিত নোটের বিরোধ নিষ্পত্তি এবং ব্যাংকের সঙ্গে লেনদেন ইত্যাদি। এসব সেবাও ভবিষ্যতে কীভাবে বন্ধ হবে, সে বিষয়ে গভর্নর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দিয়েছেন এবং আগামীতে বাংলাদেশ ব্যাংকের অন্যান্য বিভাগীয় কার্যালয়গুলোতেও এই সেবা ধীরে ধীরে বন্ধ করে দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

বর্তমানে, বাংলাদেশ ব্যাংক ছাড়াও সরকারি-বেসরকারি সব বাণিজ্যিক ব্যাংক, সঞ্চয় অধিদপ্তর ও পোস্ট অফিস থেকে সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়। সব ব্যাংক শাখায় প্রাইজবন্ড পাওয়া যায় এবং ব্যাংকগুলো ছেঁড়া-ফাটা নোট বদল ও অটোমেটেড চালান সেবাও দিয়ে থাকে। তবে, ভোগান্তিমুক্ত সেবা ও আস্থার কারণে বাংলাদেশ ব্যাংকই গ্রাহকদের কাছে বেশি পছন্দের ছিল। গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত হিসাব অনুযায়ী, গ্রাহকদের তিন লাখ ৪০ হাজার ৪৪৫ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র রয়েছে, যার ৩০ শতাংশের বেশি বাংলাদেশ ব্যাংকের মতিঝিল অফিসে।

সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের মতিঝিল অফিসের সার্ভার জালিয়াতি করে ২৫ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র আত্মসাতের ঘটনা ধরা পড়ে। এছাড়াও, আরও দুইজনের ৫০ লাখ টাকা আত্মসাতের চেষ্টা শেষ মুহূর্তে ধরা পড়ে। এই ঘটনায় মতিঝিল থানায় চারজনকে আসামি করে একটি মামলা হয়েছে এবং বিভিন্ন তদন্ত কমিটি কাজ করছে। এরপর থেকেই মতিঝিল অফিসের সঞ্চয়পত্র বিক্রি বন্ধ রয়েছে।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সঞ্চয়পত্রের সার্ভার জালিয়াতিকে কেন্দ্র করে গ্রাহকদের বিভিন্ন সেবা বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, বিষয়টি এমন নয়। কেপিআই নিরাপত্তা নীতিমালা অনুযায়ী, বাংলাদেশ ব্যাংক উচ্চ নিরাপত্তা স্তরভুক্ত একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। তাই বিশেষ নিরাপত্তার অংশ হিসেবে সাধারণ মানুষের যাতায়াত নিয়ন্ত্রিত করতেই কেন্দ্রীয় ব্যাংক এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

এসপি

পাঠকের মতামত:

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

সর্বোচ্চ পঠিত