ঢাকা, সোমবার, ১০ নভেম্বর ২০২৫, ২৬ কার্তিক ১৪৩২

ভয়ও হতে পারে থেরাপি: হরর সিনেমার অজানা মানসিক উপকারিতা

২০২৫ নভেম্বর ০৮ ১৩:৩১:২৭

ভয়ও হতে পারে থেরাপি: হরর সিনেমার অজানা মানসিক উপকারিতা

ডুয়া ডেস্ক: মানুষ সাধারণত ভয়কে অস্বস্তিকর মনে করে। তবে অদ্ভুতভাবে, অনেকেই স্বেচ্ছায় ভয় উপভোগ করতে ভালোবাসেন। জম্বি, দানব বা অদৃশ্য আতঙ্ক হরর সিনেমার ভীতিকর দৃশ্য দেখলেও অনেকের মনে এক ধরনের মানসিক প্রশান্তি আসে। সিনেমা দেখার সময় যতই ভয়ে কাঁপুন না কেন, শেষে মন হালকা হয়ে যায় এবং বাস্তব জীবনের চাপ সাময়িকভাবে কমে যায়।

শুনতে অবাক লাগলেও বিজ্ঞান বলছে হরর সিনেমা দেখাও মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী হতে পারে। বিশেষ করে যারা উদ্বেগ বা দুশ্চিন্তায় ভোগেন, তাদের জন্য ভয়ও হতে পারে এক ধরনের থেরাপি। যুক্তরাষ্ট্রের অ্যারিজোনা স্টেট ইউনিভার্সিটির মনোবিজ্ঞানী কোল্টান স্ক্রিভনার বলেন, “ভীতিকর গল্প আমাদের মস্তিষ্ককে অনিশ্চয়তার মুখোমুখি হতে প্রস্তুত করে।”

ভয়ঙ্কর সিনেমা নিরাপদ পরিবেশে ভয় অনুভবের সুযোগ দেয়। এতে আবেগ নিয়ন্ত্রণ শেখা যায় এবং বাস্তব জীবনের চাপ মোকাবিলা সহজ হয়। গবেষণায় দেখা গেছে, ভৌতিক সিনেমার দর্শকদের তিন ধরনের মানসিক ধরনে ভাগ করা যায় অ্যাড্রেনালিন জাঙ্কিজ (ভয়ে রোমাঞ্চ খোঁজা), হোয়াইট নাকলারস (ভয়কে জয় করার আনন্দ পাওয়া) এবং ডার্ক কোপার্স (ভয়কে নিরাপত্তার অনুভূতি হিসেবে দেখা)।

ডেনমার্কের একটি পরীক্ষায় দেখা গেছে, যারা নিয়মিত হরর সিনেমা দেখেন তারা সংকটের সময় মানসিকভাবে বেশি স্থিতিশীল থাকেন। এমনকি কোভিড-১৯ মহামারির সময়ও তারা তুলনামূলকভাবে বেশি ধৈর্য ধরতে পেরেছেন। অস্ট্রেলিয়ার মোনাশ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক মার্ক মিলার বলেন, ভয়ঙ্কর গল্প আমাদের মস্তিষ্ককে ভবিষ্যৎ কল্পনা করতে সাহায্য করে, যা অনিশ্চয়তা সামলাতে সুবিধা দেয়।

নেদারল্যান্ডসে শিশুদের উদ্বেগ কমানোর জন্য তৈরি করা হয়েছে ‘মাইন্ডলাইট’ নামের একটি ভিডিও গেম। এতে ভয়কে থেরাপির অংশ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। পরীক্ষা অনুযায়ী, গেম খেলার পর শিশুদের উদ্বেগ অনেকাংশে কমেছে।

হরর সিনেমার মানসিক উপকারিতা:

১. নিরাপদ ভয় অনুভব করা: হরর সিনেমার ভয় বাস্তব নয়, তবে শরীর ভয় পেয়েছে এমন প্রতিক্রিয়া দেখায় হৃদস্পন্দন বেড়ে যায়, অ্যাড্রেনালিন নিঃসৃত হয়। মস্তিষ্ক জানে, আপনি নিরাপদ। এটি মানসিক অনুশীলনের মতো কাজ করে।

২. চিন্তা থেকে বিরতি: সিনেমার ভীতিকর দৃশ্য এত মনোযোগ কাড়ে যে দর্শক নিজের দুশ্চিন্তা ভুলে গিয়ে পুরো মন দিয়ে দেখেন। এটি মানসিকভাবে বিরতির কাজ দেয় এবং উদ্বেগ কমাতে সাহায্য করে।

৩. ভয় সহ্য করার অভ্যাস: যারা বাস্তব জীবনে ভয় এড়িয়ে যান, তারা হরর সিনেমার মাধ্যমে নিরাপদ পরিবেশে ভয় অনুভব করতে পারেন। মস্তিষ্ক ধীরে ধীরে ভয় সহ্য করতে শেখে। তবে অতিরিক্ত ভয় বা দুঃস্বপ্নে ভোগা ব্যক্তিরা হরর সিনেমা এড়িয়ে চলা উত্তম।

ইএইচপি

পাঠকের মতামত:

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

সর্বোচ্চ পঠিত