ঢাকা, শুক্রবার, ৩১ অক্টোবর ২০২৫, ১৬ কার্তিক ১৪৩২

পারমাণবিক পরীক্ষা পুনরায় শুরু: বিশ্বজুড়ে উত্তেজনার ছায়া

২০২৫ অক্টোবর ৩১ ১৮:৩৩:৪৮

পারমাণবিক পরীক্ষা পুনরায় শুরু: বিশ্বজুড়ে উত্তেজনার ছায়া

আন্তর্জাতিক ডেস্ক :আন্তর্জাতিক পরিসরে এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষা। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ৩৩ বছর পর আবার পারমাণবিক পরীক্ষা পুনরায় চালানোর নির্দেশ দিয়েছেন, যা নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। তবে প্রশ্ন থেকে যায়, এতগুলো পরীক্ষা হয়েছে কেন, কেন তা দীর্ঘ সময় বন্ধ ছিল এবং বর্তমানে কোন দেশগুলো এই ধরণের অস্ত্র রাখে।

পারমাণবিক যুগের সূচনা ঘটে ১৯৪৫ সালের জুলাইয়ে, যখন যুক্তরাষ্ট্র নিউ মেক্সিকোতে প্রথম পারমাণবিক বোমা পরীক্ষা করে। এর পরপরই জাপানের হিরোসিমা ও নাগাসাকিতে বোমা নিক্ষেপ করা হয়। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৪৫ থেকে ১৯৯৬ সালের কম্প্রিহেনসিভ নিউক্লিয়ার টেস্ট-ব্যান ট্রিটি (সিটিবিটি) চুক্তি কার্যকর হওয়ার আগে বিশ্বজুড়ে ২ হাজারের বেশি পারমাণবিক পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র করেছে ১,০৩২টি, সোভিয়েত ইউনিয়ন ৭১৫টি, ফ্রান্স ২১০টি, ব্রিটেন ও চীন ৪৫টি করে।

সিটিবিটি চুক্তি কার্যকর হওয়ার পর আরও ১০টি পরীক্ষা করা হয়েছে। এর মধ্যে ভারত ও পাকিস্তান ১৯৯৮ সালে দুটি করে পরীক্ষা চালায় এবং উত্তর কোরিয়া ২০০৬ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে ছয়টি পরীক্ষা সম্পন্ন করে। এই পরীক্ষা গুলোর ধরন ছিল মাটির উপরে, মাটির নিচে এবং পানির নিচে, যা মানবস্বাস্থ্য ও পরিবেশের জন্য মারাত্মক প্রভাব ফেলে। বিশেষ করে প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল, কাজাখস্তান ও আর্কটিকে সোভিয়েত পরীক্ষার কারণে লক্ষ লক্ষ মানুষ দূষিত জমি ও দীর্ঘমেয়াদী স্বাস্থ্য সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন। এই ক্ষতির কারণে এবং যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে উত্তেজনা কমানোর উদ্দেশ্যে সিটিবিটি চুক্তি আনা হয়, যা সব ধরনের পারমাণবিক বিস্ফোরণ নিষিদ্ধ করে। উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্র ১৯৯৬ সালে চুক্তিতে স্বাক্ষর করলেও এখনো তা অনুমোদন করেনি, এবং ২০২৩ সালে রাশিয়াও চুক্তির অনুমোদন বাতিল করেছে।

পারমাণবিক পরীক্ষা পুনরায় শুরু করার কারণ মূলত তথ্য সংগ্রহ ও কৌশলগত বার্তা প্রদান। নতুন অস্ত্রের কার্যকারিতা যাচাই এবং পুরনো অস্ত্রের সক্ষমতা পরীক্ষার জন্য এসব পরীক্ষা জরুরি। যুক্তরাষ্ট্র যদি পরীক্ষা পুনরায় শুরু করে, তবে এটি রাশিয়া ও চীনের কাছে তাদের কৌশলগত শক্তির একটি শক্তিশালী বার্তা হিসেবে বিবেচিত হবে। অন্যদিকে, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন যে যুক্তরাষ্ট্র পরীক্ষা শুরু করলে রাশিয়াও একই করবে। এর ফলে একটি বৈশ্বিক পারমাণবিক অস্ত্র প্রতিযোগিতা ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে।

ওয়াশিংটন ডিসি ভিত্তিক আর্মস কন্ট্রোল অ্যাসোসিয়েশন অনুসারে, রাশিয়ার কাছে বর্তমানে ৫,৫৮০টি এবং যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ৫,২২৫টি পারমাণবিক ওয়ারহেড রয়েছে। ১৯৮৬ সালে বিশ্বে পারমাণবিক অস্ত্রের সংখ্যা ৭০ হাজারেরও বেশি ছিল, যা বর্তমানে প্রায় ১২ হাজারে নেমেছে। রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র ও চীন এই তিন দেশই নিজেদের পারমাণবিক অস্ত্রাগারের আধুনিকীকরণে নজর দিচ্ছে।

ডুয়া/নয়ন

পাঠকের মতামত:

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

সর্বোচ্চ পঠিত