ঢাকা, শুক্রবার, ৩১ অক্টোবর ২০২৫, ১৬ কার্তিক ১৪৩২

বৃদ্ধের আত্মহ’ত্যার দায় কেন্দ্রীয় সরকারের: মমতা

২০২৫ অক্টোবর ৩১ ১১:৪২:০২

বৃদ্ধের আত্মহ’ত্যার দায় কেন্দ্রীয় সরকারের: মমতা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: পশ্চিমবঙ্গে নাগরিকত্ব সংশোধনের আতঙ্ক ক্রমেই ভয়ঙ্কর আকার ধারণ করছে। কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশে ভোটার তালিকার ‘স্পেশাল ইন্টেনসিভ রিভিশন’ (এসআইআর) শুরু হওয়ার পর রাজ্যের সাধারণ মানুষ উদ্বেগে আছে। এই আতঙ্কের এক মর্মান্তিক ফল হলো বীরভূমের ইলামবাজারে ৯৫ বছর বয়সী ক্ষিতিশ মজুমদারের আত্মহত্যা। জন্মসূত্রে বাংলাদেশি এই বৃদ্ধ চার দশক আগে ভারতে এসেছিলেন। ভোটার তালিকায় নাম না থাকায় ‘অবৈধ নাগরিক’ ঘোষণা হওয়ার ভয়েই জীবনের ইতি টানেন তিনি।

গত ৭২ ঘণ্টায় বাংলার বিভিন্ন প্রান্তে তিনটি আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে দিনহাটা, পানিহাটি এবং ইলামবাজার। দুজন প্রাণ হারিয়েছেন, অনেকেই মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কেন্দ্রীয় সরকারের দায়ের কথা বলেছেন এবং সাধারণ মানুষকে আত্মসচেতন থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, বাংলায় কোনো এনআরসি কার্যকর হতে দেবেন না।

ক্ষিতিশ মজুমদারের পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, বৃদ্ধের মধ্যে এসআইআর ও এনআরসি নিয়ে প্রচণ্ড ভয় ছিল। তিনি বারবার প্রশ্ন করতেন, “আমাদের কি বাংলাদেশে পাঠানো হবে?” নাম তালিকায় না থাকলে ডিটেনশন ক্যাম্পে পাঠানোর আশঙ্কাও তার মনে ছিল। স্থানীয় সূত্র জানাচ্ছে, ক্ষিতিশবাবু মেয়ের বাড়িতে থাকলেও শেষ সাত মাস সুভাষপল্লিতে অবস্থান করছিলেন। তাঁর ঝুলন্ত দেহ বৃহস্পতিবার উদ্ধার করা হয়।

রাজ্যজুড়ে প্রতিবাদের ঢেউ উঠেছে। মুখ্যমন্ত্রী সামাজিক মাধ্যমে লিখেছেন, এই ঘটনা মানবতার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা। এই ট্র্যাজেডির দায় কি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নেবেন? অন্যদিকে বিজেপি নেতারা দায় এড়িয়ে মন্তব্য করেছেন। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, নাগরিকত্ব প্রশ্নকে বিজেপি সরকার রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে। ২০১৯ সালের এনআরসি ও সিএএ বিতর্কের পুনরাবৃত্তি ভয়ের পরিবেশ সৃষ্টি করছে।

রাজ্যের সাধারণ মানুষ আতঙ্কে পুরনো জন্মসনদ, পৈতৃক সম্পত্তির দলিল খুঁজছেন। বিশেষ করে বয়স্কদের মধ্যে ভয় প্রবল। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ভোটার তালিকা সংশোধনের নামে কার্যকর এই প্রক্রিয়া আসলে নতুন ধরনের এনআরসির ইঙ্গিত দিচ্ছে। বাংলার জনমনে আতঙ্ক ও উদ্বেগ আরও বাড়ছে, মানুষ ভয় পাচ্ছে নাম তালিকায় না থাকলে নাগরিকত্ব হারাতে হবে।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্পষ্ট জানিয়েছেন, বাংলায় কারও নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়া হবে না। প্রশাসন মৃত বৃদ্ধের পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছে, তবে অগণিত মানুষ এখনও আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন। বাংলার রাজনীতি এখন নাগরিকত্ব আতঙ্ক ও মানবিকতার প্রশ্নের মধ্যে জটিল মোড় নিয়েছে।

ইএইচপি

পাঠকের মতামত:

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

সর্বোচ্চ পঠিত