ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৩ অক্টোবর ২০২৫, ৭ কার্তিক ১৪৩২

ফেস ভ্যালুর নিচে ১০৩ কোম্পানি, ১০ টাকার শেয়ার এখন ৯০ পয়সায়!

২০২৫ অক্টোবর ২৩ ০০:১০:৩৪

ফেস ভ্যালুর নিচে ১০৩ কোম্পানি, ১০ টাকার শেয়ার এখন ৯০ পয়সায়!

আবু তাহের নয়ন: শেয়ারবাজারের ইতিহাসে সর্বনিম্ন দরে লেনদেন হয়ে বুধবার (২২ অক্টোবর) একটি নতুন রেকর্ড তৈরি করেছে পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেড (পিএলএফএসএল)। কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ার মাত্র ৯০ পয়সায় লেনদেন হয়েছে, যা ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ইতিহাসে সর্বনিম্ন।

ডিএসই-এর তথ্য অনুযায়ী,বুধবার পিপলস লিজিংয়ের প্রায় ১৬ লাখ শেয়ার হাতবদল হয়েছে ৯০ পয়সা দরে, যার মোট বাজার মূল্য ছিল প্রায় ২৫ কোটি টাকা। বাজারের ভেতরের ব্যক্তিরা বলছেন, বাংলাদেশের শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারীদের আস্থা এখন উদ্বেগজনকভাবে তলানিতে পৌঁছেছে। রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা, অর্থনৈতিক মন্দা এবং তারল্য সংকটের কারণে বিনিয়োগকারীদের মনস্তত্ত্বে চরম নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। এর ফলস্বরূপ একাধিক খাতের শেয়ারের দাম তীব্রভাবে কমে গেছে এবং অনেক শেয়ার এখন তাদের অভিহিত মূল্য বা ফেজ ভ্যালু (১০ টাকা) থেকে অনেক নিচে লেনদেন হচ্ছে। বিনিয়োগকারীরা প্রথমে প্রতিটি শেয়ার অভিহিত মূল্য ১০ টাকায় কিনেছিলেন, অনেক ক্ষেত্রে প্রিমিয়াম দিয়েও কিনেছিলেন। এখন সেই একই শেয়ার ১ টাকার নিচে লেনদেন হচ্ছে।

বাজারের তথ্য আরও দেখাচ্ছে, বর্তমানে ১০৩টি কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ড তাদের অভিহিত মূল্য ১০ টাকা থেকে নিচে লেনদেন হচ্ছে। এর মধ্যে ৬৯টি ব্যাংক, বীমা, নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান, বস্ত্র, খাদ্য, পরিষেবা এবং প্রকৌশল খাতের। বাকি ৩৪টি হলো মিউচুয়াল ফান্ড। আরও উদ্বেগের বিষয় হলো, এর মধ্যে ৫৪টি কোম্পানি ও ফান্ড এখন ৫ টাকারও নিচে লেনদেন হচ্ছে—যা বাজারের আস্থায় তীব্র সংকটের ইঙ্গিত দেয়।

বিশ্লেষকরা বলছেন, সামগ্রিক অর্থনৈতিক দুরাবস্থা, দীর্ঘস্থায়ী রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা এবং ক্রমাগত বিনিয়োগকারীদের লোকসান বাজারকে গভীর হতাশায় ঠেলে দিয়েছে। দীর্ঘমেয়াদী লোকসানের আশঙ্কায় বহু বিনিয়োগকারী তাদের তহবিল প্রত্যাহার করে নিচ্ছেন, অন্যদিকে নতুন বিনিয়োগকারীর অংশগ্রহণ প্রায় শূন্যে নেমে এসেছে। তারা পরিস্থিতিটির জন্য বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) এর প্রতি আস্থার অভাব, আইনি সংস্কার নিয়ে নেতিবাচক মনোভাব, দুর্বল প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ এবং বিনিয়োগের নিরাপত্তা নিয়ে ক্রমবর্ধমান উদ্বেগকেও দায়ী করছেন। বাজার বিশ্লেষকরা শেয়ারবাজারে আস্থা ফিরিয়ে আনতে নীতিনির্ধারকদের প্রতি অবিলম্বে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

এদিকে, এই মাসের শুরুতে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয় যে, গুরুতর আর্থিক দুর্দশা এবং অপর্যাপ্ত জামানত থাকার কারণে বাংলাদেশ ব্যাংক পিপলস লিজিং সহ ৯টি নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের (এনবিএফআই) লাইসেন্স বাতিল করার পরিকল্পনা করছে। এতে আর্থিক খাতের শেয়ারের দাম আরও কমে যায়। যদিও পিপলস লিজিং কর্তৃপক্ষ শেয়ারবাজারকে জানিয়েছে যে, তারা এখনো লাইসেন্স বাতিলের বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক সার্কুলার বা সরকারি নির্দেশনা পায়নি, তবে এই খবরে আমানতকারীদের মধ্যে চরম ক্ষোভ ও উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, এই ৯টি এনবিএফআইতে বর্তমানে ব্যক্তিগত ও প্রাতিষ্ঠানিক আমানত হিসাবে মোট ১৫ হাজার ৩৭০ কোটি টাকা আটকে আছে। এর মধ্যে ৩ হাজার ৫২৫ কোটি টাকা ক্ষুদ্র ব্যক্তিগত আমানতকারীদের এবং বাকি ১১ হাজার ৮৪৫ কোটি টাকা বিভিন্ন ব্যাংক ও কর্পোরেট সত্তার। ব্যক্তিগত আমানতকারীদের মধ্যে পিপলস লিজিংয়ে সর্বোচ্চ ১ হাজার ৪০৫ কোটি টাকা আটকে আছে।

এএসএম/

শেয়ারবাজারের বিশ্লেষণ ও ইনসাইড স্টোরি পেতে আমাদের পেজ ফলো করুন।

পাঠকের মতামত:

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

সর্বোচ্চ পঠিত