ঢাকা, সোমবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৫, ২৭ আশ্বিন ১৪৩২

শাটডাউনে মার্কিন সরকার: ৭ লাখ সরকারি কর্মী বেতনহীন

২০২৫ অক্টোবর ১২ ১১:১৩:২৯

শাটডাউনে মার্কিন সরকার: ৭ লাখ সরকারি কর্মী বেতনহীন

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: যুক্তরাষ্ট্রের চলমান ফেডারেল শাটডাউনের মধ্যেও সেনাবাহিনীর সদস্যদের বেতন নিশ্চিত করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। শনিবার প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে শাটডাউনের কারণে বেসামরিক কর্মীদের ছাঁটাই শুরু হয়েছে, যা দেশজুড়ে উদ্বেগ তৈরি করেছে।

শাটডাউনের ফলে মার্কিন সরকার বাজেট ছাড় না পাওয়ায় কার্যত অচল হয়ে গেছে। ইতিমধ্যেই বেসামরিক কর্মীদের ছাঁটাই শুরু হলেও সেনাবাহিনীর বেতন সংক্রান্ত কোনো সমস্যা না হওয়ার জন্য হেগসেথকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে এবং যে কোনো তহবিল ব্যবহার করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে।

ট্রাম্প তার নিজস্ব সামাজিক মাধ্যম ‘ট্রুথ সোশ্যাল’-এ লিখেছেন, “আমরা আমাদের সেনাবাহিনী এবং জাতীয় নিরাপত্তাকে ডেমোক্র্যাটদের শাটডাউনের শিকার হতে দেব না। সরকার পুনরায় চালু হলে স্বাস্থ্যসেবা ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে একসঙ্গে কাজ করা সম্ভব হবে।”

বাজেট সংক্রান্ত ঐকমত্যে ব্যর্থতার দায় নিয়ে রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাট উভয়ই একে অপরের উপর অভিযোগ তোলার প্রতিযোগিতা চালাচ্ছে। স্বাস্থ্যবিমা খরচ কমানো, করছাড় সুবিধা বজায় রাখা এবং মেডিকেইড বরাদ্দ হ্রাসের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের মতো বিষয়ে দু শিবিরের মধ্যে তিক্ত মতবিরোধ দেখা দিয়েছে।

রিপাবলিকানরা অভিযোগ করেছেন, ডেমোক্র্যাটরা অযথা সরকারের কার্যক্রম স্থগিত করেছে, যার প্রভাব সাধারণ মানুষের ওপর পড়ছে। বর্তমানে প্রায় সাড়ে সাত লাখ সরকারি কর্মচারী, যা মোট ফেডারেল কর্মীর প্রায় ৪০ শতাংশ, বেতনহীন ছুটি বা বরখাস্ত অবস্থায় আছেন। অন্যদিকে, সেনাবাহিনীর অনেক কর্মী ‘অপরিহার্য’ হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে, অর্থাৎ তারা বেতন না পেলেও দায়িত্ব পালন করছেন।

আইন অনুযায়ী, অচলাবস্থা শেষে এই কর্মীরা বকেয়া বেতন পাবেন। তবে ট্রাম্প প্রশাসন বকেয়া বেতন বুঝে দেওয়ার বিষয়ে কিছুটা সংশয় প্রকাশ করেছে।

অচলাবস্থা চলাকালে সামরিক বাহিনীর বেতন পরিশোধের সিদ্ধান্ত রাজনৈতিক চাপ কিছুটা কমাতে পারে, তবে প্রশাসন আরও কঠোরভাবে হাজার হাজার সরকারি কর্মীকে ছাঁটাই শুরু করেছে। এটি যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে নজিরবিহীন ঘটনা।

হোয়াইট হাউজের বাজেট কার্যালয়ের পরিচালক রাসেল ভট জানিয়েছেন, ছাঁটাই ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে। সাতটি সরকারি সংস্থার চার হাজারের বেশি কর্মী ইতিমধ্যেই বরখাস্ত হয়েছেন। এর মধ্যে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের রোগনিয়ন্ত্রণ সংস্থা সিডিসির ওয়াশিংটন অফিসের কর্মী, যারা ইবোলা প্রতিরোধ, টিকাদান কর্মসূচি ও মৃত্যুহার সংক্রান্ত সাপ্তাহিক প্রতিবেদন তৈরি করতেন।

স্বাস্থ্য ও মানবসেবা বিভাগের মুখপাত্র অ্যান্ড্রু নিক্সন বলেছেন, ছাঁটাই হওয়া কর্মীরা ‘অপরিহার্য’ নন। প্রশাসন ‘মেইক আমেরিকা হেলদি অ্যাগেইন’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে অপ্রয়োজনীয় সংস্থাগুলোকে অচল করছে।

অর্থ মন্ত্রণালয় ও সাইবারসিকিউরিটি সংস্থার অনেক কর্মীও ছাঁটাই হয়েছেন। এর বিরুদ্ধে সরকারি কর্মচারীদের ইউনিয়ন এএফজিই ও এএফএল-সিআইও ক্যালিফোর্নিয়ার একটি আদালতে সাময়িক নিষেধাজ্ঞার জন্য মামলা করেছে। এএফজিই সভাপতি এভারেট কেলি বলেন, “সরকার অচলাবস্থাকে অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করে হাজার হাজার গুরুত্বপূর্ণ সরকারি কর্মীকে বেআইনিভাবে বরখাস্ত করছে, যা লজ্জাজনক।”

হোয়াইট হাউজ জানিয়েছে, ছাঁটাই কেবল শুরু হয়েছে। শিক্ষা, বাণিজ্য, আবাসন, জ্বালানি ও পরিবেশ সংস্থা থেকেও আরও কর্মী ছাঁটাই হতে পারে।

এমজে

পাঠকের মতামত:

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

সর্বোচ্চ পঠিত