ঢাকা, রবিবার, ১২ অক্টোবর ২০২৫, ২৬ আশ্বিন ১৪৩২

একীভূত ব্যাংক ও বিলুপ্ত এনবিএফআই: বিনিয়োগকারীদের ভবিষ্যৎ কী?

হাসান মাহমুদ ফারাবী
হাসান মাহমুদ ফারাবী

রিপোর্টার

২০২৫ অক্টোবর ১২ ০০:০৫:৫৪

একীভূত ব্যাংক ও বিলুপ্ত এনবিএফআই: বিনিয়োগকারীদের ভবিষ্যৎ কী?

হাসান মাহমুদ ফারাবী: দেশের আর্থিক খাতে সাম্প্রতিক বছরগুলোর মধ্যে অন্যতম বড় পরিচ্ছন্নতা অভিযান শুরু করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ৯টি দুর্বল আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে (এনবিএফআই) অবসায়ন এবং ৫টি ধুঁকতে থাকা ব্যাংককে একীভূত করার এই উদ্যোগটি নেওয়া হয়েছে পদ্ধতিগত দুর্নীতিতে জর্জরিত অস্থিতিশীল আর্থিক খাতে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে।

তবে নিয়ন্ত্রক সংস্থার এই পদক্ষেপের উদ্দেশ্য ভালো হলেও, হাজার হাজার ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীর মনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে: এই প্রতিষ্ঠানগুলোতে বিনিয়োগ করা অর্থের কী হবে?

১৪টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১৩টিই শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত। এই প্রতিষ্ঠানগুলোতে সাধারণ শেয়ারহোল্ডারদের মোট প্রায় ৫৫০ কোটি শেয়ার রয়েছে, যার অভিহিত মূল্য ৫ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এখন এই বিপুল পরিমাণ শেয়ার কার্যকরভাবে মূল্যহীন হয়ে যাওয়ায় অনেক বিনিয়োগকারী এক কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি।

এনবিএফআই অবসায়ন: বিনিয়োগকারীদের জন্য কোনো আশা নেই

যে ৯টি এনবিএফআই অবসায়নের পথে, সেগুলোর আর্থিক অবস্থা অত্যন্ত শোচনীয়—উচ্চ খেলাপি ঋণ, নেতিবাচক মূলধন পর্যাপ্ততা, বিশাল দায় এবং বছরের পর বছর লোকসানের কারণে তারা ভারাক্রান্ত। এমন পরিস্থিতিতে অবসায়ন প্রক্রিয়ায় ইক্যুইটি হোল্ডারদের (শেয়ারহোল্ডারদের) বিনিয়োগ ফেরত পাওয়ার কার্যত কোনো সুযোগ থাকে না।

এই প্রতিষ্ঠানগুলোর সম্পদের ভিত্তি এমনভাবে ক্ষয় হয়েছে যে, অবসায়ন প্রক্রিয়া শেষে আমানতকারীরাও একটি উল্লেখযোগ্য অংশ হারাতে পারেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। আইনত সবার শেষে ক্ষতিপূরণ পাওয়ার অধিকারী শেয়ারহোল্ডারদের কোনো কিছুই ফেরত পাওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।

৫ ব্যাংক একীভূতকরণ: শেয়ারহোল্ডারদের দায় মেটানোর ঝুঁকি

নতুন নাম দেওয়া 'ইউনাইটেড ইসলামী ব্যাংক'-এর সাথে একীভূত হতে যাওয়া ৫টি ব্যাংকের শেয়ারহোল্ডারদের অবস্থাও ভালো নয়। অনেক বিনিয়োগকারী আশা করছেন যে তারা নতুন সত্তায় আনুপাতিক শেয়ার পাবেন। তবে, এই পাঁচটি ব্যাংকই শেয়ার প্রতি নেতিবাচক নিট সম্পদ মূল্য (এনএভি) বহন করছে, যা শেয়ার প্রতি মাইনাস ৭৫ টাকা থেকে মাইনাস ৪৩৮ টাকা পর্যন্ত। এর মানে হলো, তাদের সম্পদকে বহুগুণ ছাড়িয়ে গেছে দায়।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বলেছেন, একীভূতকরণ প্রক্রিয়ায় শেয়ারহোল্ডারদের দাবির বিষয়ে এখনো চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে, বিদ্যমান আইনি কাঠামো বিনিয়োগকারীদের জন্য তেমন কোনো স্বস্তি দিচ্ছে না।

তিনি বলেন, "একীভূত হওয়া ব্যাংকগুলোর সম্পদ এবং দায়ের ওপর শেয়ারহোল্ডারদের মালিকানা আছে। কিন্তু যেহেতু ব্যাংকগুলোর নিট সম্পদ মূল্য (এনএভি) নেতিবাচক, তাই শেয়ারহোল্ডাররা কেবল তখনই নতুন ব্যাংকে শেয়ারের অধিকারী হবেন, যদি তারা প্রথমে দায় পরিশোধ করেন, যা তাদের সম্পদের চেয়ে অনেক বেশি।"

আমানতকারীদের আস্থা নড়ে যাওয়া রুখতে সরকার নতুন মূলধন নিয়ে এগিয়ে আসছে, অর্থাৎ করদাতাদের অর্থ ব্যবহার করে নতুন ব্যাংকটিকে পুনঃপুঁজিকরণ করা হবে। কিন্তু সেই অর্থ সরকারের নামেই নতুন শেয়ার ইস্যু করতে ব্যবহার করা হবে, কোনোভাবেই ব্যক্তিগত শেয়ারহোল্ডারদের ক্ষতিপূরণ দিতে নয়।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি সাইফুল ইসলাম বলেন, "শেয়ারহোল্ডারদের কিছু পাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। সব ব্যাংকের শেয়ার প্রতি নিট সম্পদ মূল্য (এনএভি) নেতিবাচক। খুব শীঘ্রই শেয়ারহোল্ডাররা দেখতে পাবেন যে তাদের বিনিয়োগের বিপরীতে আর কিছুই অবশিষ্ট নেই।"

তিনি আরও বলেন, আমানতকারীরা একটি বীমা প্রকল্পের অধীনে সুরক্ষিত থাকলেও, শেয়ারহোল্ডাররা নন। "এটি বিনিয়োগকারীদের জন্য কঠিন শিক্ষা হবে। তাদের অবশ্যই সতর্কতার সঙ্গে বিনিয়োগ করতে হবে। যখন কোনো কোম্পানির কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার সক্ষমতা নিয়ে সন্দেহ থাকে, তখন শেয়ারহোল্ডারদের সবকিছু হারানোর বাস্তব সম্ভাবনা থাকে।"

এএসএম/

শেয়ারবাজারের বিশ্লেষণ ও ইনসাইড স্টোরি পেতে আমাদের পেজ ফলো করুন।

পাঠকের মতামত:

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

সর্বোচ্চ পঠিত