ঢাকা, শনিবার, ১১ অক্টোবর ২০২৫, ২৬ আশ্বিন ১৪৩২

যে পাঁচ কারণে স্বর্ণের দাম চড়া

২০২৫ অক্টোবর ১১ ২১:০৮:১৯

যে পাঁচ কারণে স্বর্ণের দাম চড়া

দেশে স্বর্ণের দাম ইতিহাসের সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি আউন্স (২৮.৩৪৯৫ গ্রাম) স্বর্ণের দাম এখন ৪,০০০ ডলারের সমান, যা আগে কখনো হয়নি। এই প্রভাবে বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস) দেশের বাজারে প্রতি ভরির (১১.৬৬৪ গ্রাম) দাম সর্বশেষ বৃদ্ধি করে ২ লাখ ৯ হাজার ১০০ টাকা নির্ধারণ করেছে, যা দেশের সর্বোচ্চ মূল্য রেকর্ড।

স্বর্ণের দাম আকাশছোঁয়া হওয়ার পেছনে মূল পাঁচটি কারণ তুলে ধরা হলো—

বৈশ্বিক বাজারে স্বর্ণের উর্ধ্বগতি

বিশ্বব্যাপী স্বর্ণের দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে মূলত যুক্তরাষ্ট্রে সুদের হার কমার প্রত্যাশা, অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা এবং ভূরাজনৈতিক উত্তেজনার কারণে। এছাড়া কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর ব্যাপক স্বর্ণ ক্রয়ও দাম বাড়ানোর একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ। আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা রয়টার্সের তথ্য অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার স্পট গোল্ডের দাম প্রতি আউন্সে ৪,০৩৭.৯৫ ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৪ লাখ ৯১ হাজার ৩৫০ টাকা) পৌঁছেছে, যা এই ধাতুর বাজারের শক্তিশালী প্রবণতাকে প্রতিফলিত করছে।

টাকার মান হ্রাস

বাংলাদেশ সরাসরি বিপুল পরিমাণ স্বর্ণ আমদানি না করলেও স্থানীয় বাজার বিশ্ববাজারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত। আন্তর্জাতিক দামের পাশাপাশি টাকার অবমূল্যায়নও স্থানীয় স্বর্ণের দামে প্রভাব ফেলছে।

২০২১ অর্থবছর থেকে এখন পর্যন্ত টাকার মান মার্কিন ডলারের বিপরীতে প্রায় ৪৩ শতাংশ কমেছে। ফলে আমদানি ব্যয়ও বেড়েছে।

বর্তমানে স্বর্ণের বড় অংশ বিদেশফেরত যাত্রীদের মাধ্যমে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের লাগেজ রুলসের আওতায় দেশে আসে।

সরবরাহের তুলনায় চাহিদা বেশি

বাংলাদেশে প্রতিবছর ২০ থেকে ৪০ টন স্বর্ণের চাহিদা থাকে। এর প্রায় ৮০ শতাংশই আসে অনানুষ্ঠানিক পথে। ২০২৩–২৪ অর্থবছরে দেশে প্রবেশ করেছে প্রায় ৪৫.৬ টন স্বর্ণ, তবে এটি চাহিদার তুলনায় এখনো কম। বিশেষ করে বিয়ের মৌসুম ও উৎসবের সময়ে এই ঘাটতি আরও স্পষ্ট হয়।

অভিযোগ রয়েছে, আমদানিকৃত স্বর্ণের একটি অংশ চোরাপথে ভারতে পাচার হয়। ফলে বাজারে সরবরাহের ঘাটতি তৈরি হয়ে দাম আরও বেড়ে যায়।

অনিশ্চয়তার সময়ে নিরাপদ আশ্রয়

অর্থনৈতিক মন্দা বা মুদ্রাস্ফীতির সময় বিনিয়োগকারীরা সাধারণত নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে স্বর্ণে ঝুঁকে পড়েন। কারণ, এমন সময়ে স্বর্ণ তার মূল্য ধরে রাখতে পারে বা আরও বাড়ায়।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ থেকে শুরু করে ইসরাইল-গাজা সংঘাত—বিশ্বব্যাপী অনিশ্চয়তার মধ্যে বিনিয়োগকারীরা দ্রুত স্বর্ণের দিকে ঝুঁকেছেন।

আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি বছরের এপ্রিলে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বৈশ্বিক বাণিজ্যযুদ্ধ শুরু করলে স্বর্ণের দাম হঠাৎ বেড়ে যায়। পরে আগস্টে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বাধীনতা নিয়ে প্রেসিডেন্টের সমালোচনার পর দাম আবারও উর্ধ্বমুখী হয়।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বর্ণ ক্রয়

২০২২ সাল থেকে বিশ্বজুড়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো প্রতিবছর ১,০০০ টনেরও বেশি স্বর্ণ কিনছে, যা ২০১০–২০২১ সালের গড় ৪৮১ টনের তুলনায় দ্বিগুণেরও বেশি। বিবিসির তথ্য অনুযায়ী, গত বছর পোল্যান্ড, তুরস্ক, ভারত, আজারবাইজান ও চীন ছিল স্বর্ণ ক্রয়ে শীর্ষে।

অর্থনীতিবিদদের মতে, আন্তর্জাতিক বাজারে অস্থিরতা, টাকার অবমূল্যায়ন এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর ব্যাপক স্বর্ণ ক্রয়ের কারণে স্বর্ণের দাম অভূতপূর্ব উচ্চতায় পৌঁছেছে। এর ফলে নিকট ভবিষ্যতে দাম হ্রাসের সম্ভাবনা খুবই কম।

কেএমএ

পাঠকের মতামত:

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

সর্বোচ্চ পঠিত