ঢাকা, শুক্রবার, ১০ অক্টোবর ২০২৫, ২৫ আশ্বিন ১৪৩২

বিশ্বের সবচেয়ে দুর্বল শেয়ারবাজারের খেতাব পেল বাংলাদেশ!

হাসান মাহমুদ ফারাবী
হাসান মাহমুদ ফারাবী

রিপোর্টার

২০২৫ অক্টোবর ১০ ১৯:২২:৫৭

বিশ্বের সবচেয়ে দুর্বল শেয়ারবাজারের খেতাব পেল বাংলাদেশ!

হাসান মাহমুদ ফারাবী: চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসে বিশ্বের সব শেয়ারবাজারের মধ্যে সবচেয়ে দুর্বল পারফরম্যান্স করেছে বাংলাদেশের শেয়ারবাজার। তিন মাসের ধারাবাহিক উত্থানের পর মুনাফা তুলে নেওয়ার প্রবণতায় প্রধান সূচক (ডিএসইএক্স) ওই মাসে ৩.২০ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে।

অন্যদিকে, দক্ষিণ কোরিয়া ছিল মাসের সেরা পারফর্মার— সেপ্টেম্বর মাসে দেশটির শেয়ারবাজারে ১০ শতাংশেরও বেশি রিটার্ন হয়েছে। এর পরেই রয়েছে তাইওয়ান ৯ শতাংশ এবং পাকিস্তান ৭.৩৪ শতাংশ)। ইবিএল সিকিউরিটিজের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশের বাইরে কেবল ফিলিপাইন সামান্য ০.৩০ শতাংশ পতন দেখেছে; বাকিগুলো ছিল উর্ধ্বমুখী।

মাসের শুরুতে ডিএসই সূচক ১১ মাস পর প্রথমবার ৫ হাজার ৬০০ পয়েন্ট অতিক্রম করলেও পরে বিক্রয়চাপের মুখে গতি হারায় বাজার।

ইবিএল সিকিউরিটিজ জানায়, “বাজারে নতুন কোনো ইতিবাচক প্রণোদনা না থাকায় বিনিয়োগকারীরা সতর্ক অবস্থান নেয়, ফলে বাজারে অস্থিরতা বাড়ে।”

তাদের মাসিক বিশ্লেষণ অনুযায়ী, সেপ্টেম্বর শেষে ডিএসই’র প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ১৭৯ পয়েন্ট কমে দাঁড়ায় ৫ হাজার ৪১৬ পয়েন্টে, যা ৩.২ শতাংশ পতন।

ডিএস৩০ সূচক (ব্লু-চিপ কোম্পানিগুলোর) ১১১ পয়েন্ট কমে ২ হাজার ৮২ পয়েন্টে এবং ডিএসইএস সূচক (শরিয়াহভিত্তিক কোম্পানি) ৫৫ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ১৭২ পয়েন্টে নেমে আসে।

বাজারে অস্থিরতা ও অনিশ্চয়তার কারণে অনেক বিনিয়োগকারী অপেক্ষার কৌশল নেয়। আসন্ন আয়ের মৌসুম (আর্নিং সিজন) ঘিরেও বিনিয়োগকারীরা নতুন পজিশন নিতে সতর্ক ছিলেন।

ইবিএল সিকিউরিটিজ আরও জানায়, সাম্প্রতিক সময়ে শেয়ারবাজারে শৃঙ্খলা আনতে নেওয়া কিছু নিয়ন্ত্রক পদক্ষেপও বাজারে গতি কমিয়ে দিয়েছে।

ফলে সেপ্টেম্বর মাসে দৈনিক গড় লেনদেনের পরিমাণ আগস্টের তুলনায় ৬.৩ শতাংশ কমে দাঁড়ায় ৮৭০ কোটি টাকায়।

যদিও কিছু নির্বাচিত শেয়ারে ‘টার্গেটেড বাইং’-এর কারণে সামান্য উত্থান দেখা গেছে, সামগ্রিকভাবে বিক্রয়চাপই বাজার নিয়ন্ত্রণ করেছে।

অর্থনীতির প্রেক্ষাপটে প্রতিবেদনে বলা হয়, মহামারি, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং রাজনৈতিক অস্থিরতার পর এখন বাংলাদেশের অর্থনীতি ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। ২০২৪ সালের আগস্টে সরকার পরিবর্তনের পর রপ্তানি বৃদ্ধি, রেমিট্যান্স প্রবাহ ও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ স্থিতিশীলতা অর্থনীতিকে সহায়তা করছে।

সেপ্টেম্বরে রেমিট্যান্স বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২.৭ বিলিয়ন ডলার, যা আগের বছরের তুলনায় ১১.৬৯ শতাংশ বেশি। স্থিতিশীল বিনিময় হার ও সরকারি চ্যানেলে প্রেরণ বৃদ্ধিই এর প্রধান কারণ।

এছাড়া, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সদ্য স্বাক্ষরিত শুল্ক-সহায়ক চুক্তি রপ্তানিতে গতি ধরে রাখতে সহায়তা করবে বলে আশা করা হচ্ছে। একই সঙ্গে জাতীয় নির্বাচন রোডম্যাপ ঘোষণার ফলে রাজনৈতিক অস্থিরতা কিছুটা কমবে এবং অর্থনীতিতে আস্থা ফিরবে বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থাগুলোর পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০২৫-২৬ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি প্রায় ৫ শতাংশ হতে পারে, যা অর্থনৈতিক কার্যক্রমে ধীর কিন্তু স্থিতিশীল পুনরুদ্ধারের ইঙ্গিত দেয়।

ইবিএল সিকিউরিটিজ আরও বলেছে, “যদি নীতিগত সুদের হার কমানো হয় এবং সরকারি সিকিউরিটিজের ফলন (ইয়েল্ড) হ্রাস পায়, তবে আগামী মাসগুলোতে বাজারে কিছুটা ইতিবাচক গতি দেখা যেতে পারে।”

তবে তারা সতর্ক করে বলেছে, আসন্ন নির্বাচনী পর্যায়ে রাজনৈতিক উত্তেজনা, ব্যাংক খাতের ঝুঁকি এবং বেসরকারি খাতের দুর্বল বিনিয়োগ প্রবণতা এখনো বাজারের জন্য বড় উদ্বেগের বিষয়।

এএসএম/

শেয়ারবাজারের বিশ্লেষণ ও ইনসাইড স্টোরি পেতে আমাদের পেজ ফলো করুন।

পাঠকের মতামত:

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

সর্বোচ্চ পঠিত

আজকের (১০ অক্টোবর) মুদ্রা বিনিময় হার

আজকের (১০ অক্টোবর) মুদ্রা বিনিময় হার

ডুয়া ডেস্ক: বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণের সঙ্গে সঙ্গে বিদেশি মুদ্রার সঙ্গে টাকার বিনিময় হারও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। প্রতিদিনের লেনদেনে ব্যবসায়ী... বিস্তারিত