ঢাকা, বুধবার, ১০ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
আমরা নেটওয়ার্কের বিরুদ্ধে ফের তদন্তে নেমেছে বিএসইসি
নিজস্ব প্রতিবেদক: রাইট শেয়ার ইস্যুর মাধ্যমে উত্তোলিত অর্থের ব্যবহার নিয়ে আমরা নেটওয়ার্কস লিমিটেডের ওপর আবারও তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। শেয়ারবাজারের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ সুরক্ষার লক্ষ্যেই এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে বাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি।
২০২৫ সালের ০২ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত কমিশনের ৯৮৬তম সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সভায় উল্লেখ করা হয়েছে, যদিও কোম্পানিটি রাইট শেয়ারের তহবিল নেটওয়ার্ক সিস্টেম আপগ্রেডেশন ও নেটওয়ার্ক কভারেজ সম্প্রসারণের কাজে ব্যবহারের দাবি করেছে, তবে এই প্রকল্পগুলোর প্রকৃত বাস্তবায়ন এবং ব্যয়ের সত্যতা যাচাই করা প্রয়োজন। কোম্পানিটি ২০২৪ সালের ২০ মে তাদের রাইট শেয়ার ইস্যু থেকে ৯৩ কোটি টাকা সংগ্রহ করেছিল, যা ঋণ পরিশোধ, নেটওয়ার্ক সিস্টেমের আধুনিকায়ন এবং কভারেজ বাড়ানোর জন্য বরাদ্দ করা হয়েছিল।
এর আগে, ২০২৪ সালের ০৯ ডিসেম্বর কমিশন এই বিষয়ে প্রথম তদন্ত কমিটি গঠন করেছিল। পরবর্তীতে তদন্ত কর্মকর্তা পরিবর্তন করা হয় এবং চলতি বছরের মে মাসে নতুন আদেশ জারি করা হয়, যা আগস্টে শেষ হয়। এরফলে কোম্পানিটির কার্যক্রম যাচাইয়ের জন্য কমিশন এবার উপ-পরিচালক গৌর চাঁদ সরকার, সহকারী পরিচালক রেজাউন নুর মেহেদী এবং সহকারী পরিচালক তন্ময় কুমার ঘোষকে নিয়ে তিন সদস্যের একটি পূর্ণাঙ্গ তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।
এই কমিটি মাঠ পরিদর্শন এবং আর্থিক নথিগুলোর বিস্তারিত পর্যালোচনা সহ একটি সুসংগঠিত পদ্ধতি অনুসরণ করবে এবং তাদের ৬০ দিনের মধ্যে তদন্ত শেষ করার কথা রয়েছে।
এ বিষয়ে কোম্পানির এক কর্মকর্তা জানান, কমিশন ইতোমধ্যেই একই বিষয়ে একবার তদন্ত করেছে, তাই কেন দ্বিতীয় কমিটি গঠন করা হলো সে বিষয়ে তিনি অবগত নন। তিনি কোম্পানির ব্যবসা প্রসঙ্গে বলেন, রাজনৈতিক পরিবর্তনের কারণে অনেক গ্রাহক হয় তাদের কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছেন অথবা ব্যবসা সংকুচিত করেছেন। যে গ্রাহকরা আগে ১০ জিবি ডেটা প্যাকেজ কিনতেন, তারা এখন সবচেয়ে ছোট প্যাকেজটি নিচ্ছেন।
এর আগে কোম্পানিটি অবকাঠামো সেটআপ পরিষেবা থেকে রাজস্ব আয় করত, যা এখন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সামগ্রিক ব্যবসায়িক কার্যকারিতা প্রভাবিত হচ্ছে।
তদন্তের প্রথম ধাপের মূল লক্ষ্য হলো প্রকল্পগুলোর প্রকৃত বাস্তবায়ন যাচাই করা। রাইট শেয়ারের তহবিল দিয়ে নেটওয়ার্ক সিস্টেম আপগ্রেডেশন এবং কভারেজ সম্প্রসারণ প্রকল্পগুলো সত্যিই বাস্তবায়িত হয়েছে কিনা তা নিশ্চিত করতে কমিটি সরেজমিনে পরিদর্শন করবে। সকল সংশ্লিষ্ট স্থান পরিদর্শন করা হবে এবং নেটওয়ার্ক সরঞ্জাম স্থাপন, লিংক সম্প্রসারণ এবং নতুন অবকাঠামো যুক্ত করার অগ্রগতি ও কার্যক্রমের কার্যকারিতা বিস্তারিতভাবে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হবে।
এছাড়াও, ক্রয় এবং ব্যয়ের নথি পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পর্যালোচনা করা হবে। কোম্পানি কর্তৃক সংগৃহীত সকল নেটওয়ার্কিং সরঞ্জাম এবং প্রযুক্তিগত পণ্যের বাজার দরের সাথে ক্রয়মূল্যের সামঞ্জস্যতা নিশ্চিত করা হবে। চুক্তি, ভাউচার, চালান এবং অন্যান্য সহায়ক নথি বিশ্লেষণ করা হবে। কমিটি কোনো সম্পর্কিত পক্ষের লেনদেন আছে কিনা তা পরীক্ষা করবে এবং তা সঠিকভাবে প্রকাশ করা হয়েছে কিনা তা নিশ্চিত করবে। স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার জন্য এই সমস্ত লেনদেন কোম্পানির ব্যাংক স্টেটমেন্টের সাথে ক্রস-ভেরিফাই করা হবে।
তদন্তে বিক্রেতাদের নিশ্চিতকরণ এবং তহবিলের উৎস অনুসন্ধানও অন্তর্ভুক্ত থাকবে। কমিটি পণ্যগুলোর প্রকৃত সরবরাহ সম্পর্কে সকল বিক্রেতার কাছ থেকে যাচাই করবে এবং পণ্য হাতে না পেয়ে কোনো অর্থ পরিশোধ করা হয়েছে কিনা তা পরীক্ষা করবে। প্রয়োজন হলে, সরঞ্জাম সরবরাহের স্থান পরিদর্শনের জন্য কমিটি বিক্রেতাদের প্রাঙ্গণেও যেতে পারে। যাচাইয়ের উদ্দেশ্যে ইতোমধ্যে বিক্রেতাভিত্তিক ক্রয় আদেশ কমিশনে সরবরাহ করা হয়েছে। কমিটি কোনো তহবিল অন্য উদ্দেশ্যে অপব্যবহার করা হয়েছে কিনা, তাও তদন্ত করার নির্দেশ পেয়েছে।
তদন্তের আরেকটি মূল দিক হলো, রাইট শেয়ার ইস্যুর অর্থ দিয়ে কেনা পণ্যগুলো কোম্পানির আর্থিক বিবরণীতে সঠিকভাবে রেকর্ড করা হয়েছে কিনা তা যাচাই করা। কমিটি রাইট শেয়ার ইস্যুর সময় থেকে বর্তমান পর্যন্ত হিসাব পর্যালোচনা করবে, এবং কোনো অসঙ্গতি, বাদ পড়া বা গোপন ব্যয় চিহ্নিত করবে। পাশাপাশি, ফান্ড ইউটিলাইজেশন অডিটর তাদের সম্মতিপত্রে বর্ণিত দায়িত্বগুলো সঠিকভাবে পালন করেছেন কিনা, তাও পরীক্ষা করবে কমিটি। কোনো অবহেলা, অসম্পূর্ণ যাচাই, মিথ্যা প্রতিবেদন বা সম্মতিপত্রের শর্ত লঙ্ঘন চূড়ান্ত প্রতিবেদনে তুলে ধরা হবে। বোর্ড অফ ডিরেক্টরস, প্রধান আর্থিক কর্মকর্তা, কোম্পানি সচিব, রাইট শেয়ার অডিটর এবং অন্য কোনো সংশ্লিষ্ট কর্মীসহ আইন লঙ্ঘনের জন্য দায়ী পক্ষগুলোকে চিহ্নিত করারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে কমিটিকে।
আর্থিক পারফরম্যান্সের দিক থেকে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুলাই-মার্চ সময়ে আমরা নেটওয়ার্কস উল্লেখযোগ্য ধাক্কা খেয়েছে। গত বছরের একই সময়ের তুলনায় রাজস্ব ২৭.৫১ শতাংশ কমে ৭১ কোটি ৬৬ লাখ টাকা হয়েছে, যা ব্যবসায়িক কার্যক্রমে বিশাল পতন নির্দেশ করে। রাজস্বের এই পতন সরাসরি মুনাফাকে প্রভাবিত করেছে। এই নয় মাসের নিট মুনাফা ৬৮.২৮ শতাংশ কমে ৭ কোটি ১৫ লাখ টাকায় দাঁড়িয়েছে, যা কোম্পানির উপার্জন সক্ষমতা এবং ব্যয় ব্যবস্থাপনা নিয়ে উদ্বেগ সৃষ্টি করছে। এই সময়ে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) ছিল ৭৭ পয়সা, যা আগের বছরের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে কম।
এএসএম/
শেয়ারবাজারের বিশ্লেষণ ও ইনসাইড স্টোরি পেতে আমাদের পেজ ফলো করুন।
পাঠকের মতামত:
সর্বোচ্চ পঠিত
- বাংলাদেশ বনাম ব্রাজিলের ম্যাচ: খেলাটি সরাসরি দেখুন (Live)
- আজ বাংলাদেশ বনাম ব্রাজিল ম্যাচ: কখন, কোথায়-যেভাবে দেখবেন সরাসরি
- আর্জেন্টিনা বনাম বাংলাদেশ আজকের খেলাটি সরাসরি (LIVE) দেখুন এখানে
- বাংলাদেশ বনাম আর্জেন্টিনা: কবে, কখন, কোথায়-যেভাবে দেখবেন সরাসরি
- কিছুক্ষণ পর বাংলাদেশ বনাম ব্রাজিলের ম্যাচ: খেলাটি সরাসরি দেখবেন যেভাবে
- আর্জেন্টিনা বনাম বাংলাদেশ: ২ গোলে শেষ ম্যাচ, দেখুন ফলাফল
- শেষ হলো বাংলাদেশ বনাম ব্রাজিল ম্যাচ, জানুন ফলাফল
- কিছুক্ষণ পর বাংলাদেশ বনাম আর্জেন্টিনার খেলা, সরাসরি দেখুন এখানে (LIVE)
- আর্জেন্টিনা বনাম বাংলাদেশ: খেলাটি সরাসরি (LIVE) দেখুন
- ভারত বনাম দক্ষিণ আফ্রিকা: খেলাটি সরাসরি দেখুন এখানে (LIVE)
- আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিলের মুখোমুখি বাংলাদেশ, জেনে নিন সময়সূচি
- ভারত বনাম দক্ষিণ আফ্রিকা, খেলাটি সরাসরি দেখুন (LIVE)
- আর্জেন্টিনা বনাম বাংলাদেশ: নির্ধারিত ৯০ মিনিটের খেলা শেষ-দেখে নিন ফলাফল
- বাংলাদেশ বনাম আর্জেন্টিনা: ২৫ মিনিটে গোল-সরাসরি দেখুন
- বাংলাদেশ বনাম ব্রাজিল ম্যাচের প্রথমার্ধ শেষ, কে এগিয়ে?