ঢাকা, শনিবার, ১১ অক্টোবর ২০২৫, ২৬ আশ্বিন ১৪৩২

শেয়ারবাজারে হঠাৎ 'শেয়ার উপহার'-বন্যা, নজরদারির দাবি

২০২৫ অক্টোবর ১১ ২০:৫৮:০৬

শেয়ারবাজারে হঠাৎ 'শেয়ার উপহার'-বন্যা, নজরদারির দাবি

হাসান মাহমুদ ফারাবী: শেয়ারবাজারে সম্প্রতি কিছু তালিকাভুক্ত কোম্পানির পরিচালক ও স্পনসররা তাদের আত্মীয়দের কাছে উপহার হিসেবে বিপুল পরিমাণ শেয়ার স্থানান্তরের নজির সৃষ্টি করেছেন। এটি নিয়ে প্রশ্ন উঠছে, কেন এত বড় পরিমাণ শেয়ার উপহার দেওয়া হচ্ছে এবং কেন এই পদ্ধতি আজকাল এত সাধারণ হয়ে উঠেছে।

শেয়ার উপহার দেওয়ার অন্যতম উদ্দেশ্য হলো আত্মীয়কে কোম্পানির বোর্ডে আনতে সহায়তা করা—কারণ বোর্ড সদস্য হতে সাধারণত প্রয়োজন হয় ন্যূনতম ২ শতাংশ শেয়ার। আবার অনেক সময় এটি পরিবারে সম্পদ বণ্টন বা উত্তরাধিকার পরিকল্পনার অংশ হিসাবেও ব্যবহৃত হচ্ছে।

তবে এসব শেয়ার আবার সেকেন্ডারি মার্কেটে আসার সম্ভাবনাও একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যাবে না। কারণ যাদের শেয়ার উপহার দেওয়া হচ্ছে, তারা যদিন স্পন্সর বা পরিচালক না হন, তাহলে তাদের শেয়ার বিক্রির ক্ষেত্রে কোন ঘোষণা দিতে হয় না বা কোন বাধ্যবাধকতা নেই। সেজন্য শেয়ার উপহারের উপর বিএসইসি ও ডিএসইর নজরদাবি বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন বিনিয়োগকারীরা।

তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শেয়ার স্থানান্তরের মূল উদ্দেশ্য হলো আত্মীয়দের কোম্পানির বোর্ডে আনতে সহায়তা করা। সাধারণত বোর্ডে আসতে একজন ব্যক্তির ন্যূনতম ২ শতাংশ শেয়ার থাকা বাধ্যতামূলক। এছাড়াও অনেক সময় পরিবারে সম্পদ বণ্টনের অংশ হিসেবেও শেয়ার উপহার হিসেবে দেওয়া হয়।

বর্তমানে এই ধারা আরও বাড়ছে। কারণ, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সম্প্রতি শেয়ার স্থানান্তরের ওপর করমুক্তির সুযোগ তৈরি করেছে। এনবিআরের অর্থ আইন ২০২৪ অনুযায়ী, স্বামী-স্ত্রী, পিতামাতা-সন্তান এবং ভাইবোনদের মধ্যে শেয়ারসহ সম্পত্তি হস্তান্তরের ক্ষেত্রে কর অব্যাহতি প্রযোজ্য। ফলে কোম্পানি পরিচালকরা সরকারের কোনও কর ছাড়াই পরিবারের মধ্যে শেয়ার স্থানান্তর করতে পারছেন।

উল্লেখযোগ্য উদাহরণ হিসেবে ওয়ালটন হাইটেক ইন্ডাস্ট্রিজের স্পনসর ও পরিচালকরা স্বামী, স্ত্রী ও ভাইবোনদের কাছে ৫ কোটি ৩৩২ লাখ টাকার প্রায় ১১ কোটি ৭২ লাখ শেয়ার হস্তান্তর করেছেন। একইভাবে ক্রাউন সিমেন্টের দুই স্পনসর পরিচালক পরিবারের সদস্যদের কাছে ৯১ কোটি টাকার ১ কোটি ৯৪ লাখ শেয়ার উপহার হিসেবে দিয়েছেন।

গত ৪ অক্টোবর বিএনপি নেতা মির্জা আব্বাসের ছেলে ও ঢাকা ব্যাংকের পরিচালক মির্জা ইয়াসির আব্বাস তার মা আফরোজা আব্বাসকে ৩ কোটি ১৩ লাখ শেয়ার উপহার হিসেবে হস্তান্তরের আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।

আরও উদাহরণ হিসেবে, এনসিসি ব্যাংকের স্পনসর রাজিয়া হোসেন তার স্বামীকে ৫৯ লাখ ৮৬ হাজার শেয়ার স্থানান্তর করেছেন। স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসের স্পনসর অনিতা চৌধুরী তার আইনি উত্তরাধিকারীদের কাছে ৬ কোটি ৬০ লাখ শেয়ার হস্তান্তর করেছেন। এ ছাড়া, ইভিন্স টেক্সটাইলের আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী ও শবনম শেহনাজ চৌধুরী তাদের মেয়ে সঞ্জনা শেহনাজ চৌধুরীকে ১৮ লাখ ৩৭ হাজার শেয়ার উপহার দিয়েছেন।

রানার অটোমোবাইলসের স্পনসর মোজাম্মেল হোসেন তার ছেলে মাহমুদ আল নাহিয়ানকে ২২ লাখ ৭০ হাজার এবং মেয়ে নওশীন ইশরাত প্রমিকে ১১ লাখ ৩৫ হাজার শেয়ার হস্তান্তর করেছেন।

এভাবে দেখা যাচ্ছে, শেয়ার উপহারের এই প্রবণতা এখন শুধু পারিবারিক সম্পদ হস্তান্তরের মাধ্যম নয়—বরং কোম্পানির বোর্ডে প্রভাব বিস্তার ও নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখার কৌশল হিসেবেও গুরুত্ব পাচ্ছে। ফলে শেয়ারবাজারে “উপহার” এখন নতুন এক ক্ষমতার হাতিয়ার হিসেবে আবির্ভূত হচ্ছে।

এএসএম/

শেয়ারবাজারের বিশ্লেষণ ও ইনসাইড স্টোরি পেতে আমাদের পেজ ফলো করুন।

পাঠকের মতামত:

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

সর্বোচ্চ পঠিত