ঢাকা, বুধবার, ৩০ জুলাই ২০২৫, ১৫ শ্রাবণ ১৪৩২

বিটিআরসির স্বাধীন সত্তা ফিরে পেতে আইন সংশোধনের নির্দেশ

ডুয়া নিউজ- জাতীয়
২০২৫ জুলাই ৩০ ১৩:২৭:০৪
বিটিআরসির স্বাধীন সত্তা ফিরে পেতে আইন সংশোধনের নির্দেশ

বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনকে (বিটিআরসি) একটি শক্তিশালী ও স্বাধীন প্রতিষ্ঠানে রূপান্তর করতে বিদ্যমান আইন সংশোধনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টার ডাক, টেলিযোগাযোগ এবং তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যবের নির্দেশনা অনুযায়ী ‘বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০০১’ সংশোধন ও পরিমার্জন করে একটি নতুন খসড়া তৈরির প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।

মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত একটি চিঠি বিটিআরসির চেয়ারম্যানের কাছে পাঠানো হয়েছে।

সূত্রমতে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর বিটিআরসির আইনটি সংশোধনের উদ্যোগ নিয়ে একটি খসড়া তৈরি করেছিল। তবে টেলিযোগাযোগ খাতের সংশ্লিষ্টরা সেই খসড়ার কিছু ধারা নিয়ে আপত্তি জানালে বিষয়টি নতুন করে পর্যালোচনার প্রয়োজন হয়। এরই প্রেক্ষিতে বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব আইন সংশোধনের জন্য নয় দফা সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা দেন।

আইন সংশোধনের মূল নির্দেশনাগুলো:

বিটিআরসির স্বাধীনতা নিশ্চিতকরণ: অপ্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে মন্ত্রণালয়ের পূর্বানুমোদনের শর্ত তুলে দিয়ে বিটিআরসিকে পূর্ণ স্বাধীনতা দেওয়া হবে। শুধুমাত্র মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ টেলিযোগাযোগ কোম্পানি ও সংশ্লিষ্ট কিছু ক্ষেত্রে মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন লাগবে।

ইন্টারনেট বন্ধের সুযোগ রদ: নতুন আইনে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য সংযোজন হতে যাচ্ছে ইন্টারনেট বন্ধ করার সুযোগ বাতিল করা। নির্দেশনা অনুযায়ী, সরকারি বা বেসরকারি কোনো পক্ষই যেন ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করতে না পারে, তা নিশ্চিত করা হবে।

স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা: বিটিআরসির নিয়োগ প্রক্রিয়া, লাইসেন্স প্রদান, নবায়ন, শেয়ার হস্তান্তর এবং রাজস্ব আদায় সংক্রান্ত বিষয়গুলোতে সুস্পষ্ট নীতিমালা এবং কঠোর জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে।

আড়িপাতায় আন্তর্জাতিক মান: আড়িপাতা বা আইনসম্মত ইন্টারসেপশনের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুসরণ করা হবে। একটি মাত্র এজেন্সিকে গেটওয়ে হিসেবে রেখে আইন প্রয়োগকারী অন্যান্য সংস্থার জন্য আধা-বিচারিক (Quasi-judicial) অনুমোদনের মাধ্যমে আড়িপাতার একটি কাঠামো তৈরি করা হবে।

আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার: লাইসেন্স প্রদান বা নবায়নের ক্ষেত্রে আইপিভি৪ (IPv4) থেকে আইপিভি৬ (IPv6) এ মাইগ্রেশনের মতো আধুনিক প্রযুক্তি গ্রহণ বাধ্যতামূলক করা হবে।

সেবার মান ও গ্রাহক সন্তুষ্টি: আন্তর্জাতিক মানের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সেবার মানদণ্ড (কোয়ালিটি অব সার্ভিস) নির্ধারণ করা হবে। যারা উন্নত সেবা নিশ্চিত করবে, সেইসব অপারেটরদের জন্য প্রণোদনা বা পুরস্কারের ব্যবস্থা রাখা হবে। একই সঙ্গে বিনিয়োগকারীদের অপ্রয়োজনীয় হয়রানি বন্ধে বিদ্যমান ধারাগুলো সংশোধন করা হবে।

অন্যান্য আইনের সঙ্গে সমন্বয়: ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষা আইন, সাইবার নিরাপত্তা আইন এবং ডেটা গভর্নেন্স আইনের মতো গুরুত্বপূর্ণ আইনগুলোর সঙ্গে টেলিযোগাযোগ আইনের সমন্বয় সাধন করা হবে।

বিটিআরসির কর্মকর্তারা মনে করছেন, বিশেষ সহকারীর এই নির্দেশনাগুলো আইনে অন্তর্ভুক্ত করা হলে প্রতিষ্ঠানটি সত্যিকারের একটি স্বাধীন ও শক্তিশালী নিয়ন্ত্রক সংস্থায় পরিণত হবে। এর ফলে কাজের গতি বাড়বে এবং দেশের টেলিযোগাযোগ খাতে একটি ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে।

পাঠকের মতামত:

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

সর্বোচ্চ পঠিত