ঢাকা, রবিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ৩০ ভাদ্র ১৪৩২

মার্কিন শুল্ক কমাতে নতুন পদক্ষেপ: আলোচনায় আশাবাদী বাংলাদেশ

আবু তাহের নয়ন
আবু তাহের নয়ন

সিনিয়র রিপোর্টার

২০২৫ সেপ্টেম্বর ১৪ ০৭:০৪:১০

মার্কিন শুল্ক কমাতে নতুন পদক্ষেপ: আলোচনায় আশাবাদী বাংলাদেশ

আবু তাহের নয়ন: বাংলাদেশের রপ্তানি খাতে বড় সুযোগ তৈরি করতে আবারও তৎপর হচ্ছে সরকার। মার্কিন বাজারে বাংলাদেশের পণ্যের ওপর শুল্ক আরও কমানোর বিষয়ে আলোচনায় অংশ নিতে যুক্তরাষ্ট্রের একটি তিন সদস্যের প্রতিনিধি দল ঢাকা পৌঁছেছে। দলটির নেতৃত্ব দিচ্ছেন মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধি অফিসের (ইউএসটিআর) দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়ার সহকারী প্রধান ব্রেন্ডান লিঞ্চ।

শুল্ক কমানোর নতুন উদ্যোগ

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, প্রতিনিধি দলের এই সফরে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে একটি খসড়া চুক্তি নিয়ে আলোচনা হবে। যদিও তাৎক্ষণিকভাবে চূড়ান্ত চুক্তি স্বাক্ষরের সম্ভাবনা কম, তবে আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশের জন্য আরও অনুকূল শুল্ক সুবিধা আদায়ের পথ সুগম হবে আশা করা হচ্ছে।

গত জুলাইয়ে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের পণ্যের ওপর শুল্ক ৩৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২০ শতাংশে এনেছিল। এখন লক্ষ্য হচ্ছে, ঘোষিত ২০ শতাংশ শুল্ক আরও কমানো। বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান বলেন, “আমরা চাই বাংলাদেশের রপ্তানি খাতকে প্রতিযোগিতামূলক রাখতে শুল্ক আরও হ্রাস করা হোক। আলোচনায় এ বিষয়টি আমরা গুরুত্ব সহকারে তুলব।”

আলোচনার কাঠামো ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

অন্তর্বর্তী সরকারের বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশির উদ্দিন জানিয়েছেন, মার্কিন প্রতিনিধি দলের সফরকে একটি কাঠামোগত আলোচনার অংশ হিসেবে দেখা হচ্ছে। আলোচনার পর উভয় পক্ষ থেকে একটি যৌথ ঘোষণাপত্র প্রকাশের সম্ভাবনা রয়েছে, যা ভবিষ্যৎ চুক্তির ভিত্তি গড়ে দেবে। প্রয়োজনে বাংলাদেশ ওয়াশিংটনে সরাসরি আলোচনায় অংশ নিতেও প্রস্তুত।

জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমানও আশা প্রকাশ করেছেন যে, শুল্ক আরও কমতে পারে। তিনি বলেন, “যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশের বাণিজ্য সম্পর্ক এখন নতুন উচ্চতায় পৌঁছাচ্ছে। এতে উভয় দেশই লাভবান হবে।”

রপ্তানি-আমদানিতে নতুন সম্ভাবনা

বাংলাদেশ ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রে ৮.৪ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে, যার মধ্যে ৭.৩৪ বিলিয়ন ডলারই তৈরি পোশাক খাত থেকে এসেছে। অন্যদিকে, একই সময়ে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি হয়েছে ২.২ বিলিয়ন ডলারের পণ্য। এই বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে বাংলাদেশ সক্রিয়ভাবে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছে।

শুল্ক কমানোর দাবিকে আরও শক্তিশালী করতে বাংলাদেশ সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র থেকে বড় আকারের আমদানির চুক্তি করেছে। এর মধ্যে রয়েছে ২৫টি বোয়িং বিমান ক্রয়ের পরিকল্পনা, বার্ষিক সাত লাখ টন গম আমদানি, এবং আগামী ১২ থেকে ১৮ মাসে ১.৫ বিলিয়ন ডলারের সিভিল-এভিয়েশন স্পেয়ার, তুলা, ভোজ্যতেল ও এলএনজি আমদানির প্রতিশ্রুতি। এসব পদক্ষেপ শুধু দুই দেশের বাণিজ্য ভারসাম্য উন্নত করবে না, বরং বাংলাদেশের অবকাঠামো ও শিল্প খাতের সক্ষমতাও বাড়াবে।

ইতিবাচক দিক ও সম্ভাবনার দ্বার

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শুল্ক নিয়ে ইতিবাচক অগ্রগতি বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতের পাশাপাশি অন্যান্য শিল্পখাতের জন্যও নতুন বাজার উন্মুক্ত করবে। একইসঙ্গে, বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে দেশের অবস্থান আরও মজবুত হবে।

সরকারের লক্ষ্য শুধু শুল্ক হ্রাস নয়, বরং দীর্ঘমেয়াদে বাণিজ্য সম্পর্ককে আরও কৌশলগত পর্যায়ে উন্নীত করা। এর ফলে বাংলাদেশ বৈশ্বিক বাজারে প্রতিযোগিতায় আরও এগিয়ে যেতে পারবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করছেন অর্থনীতিবিদরা।

এএসএম/

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

পাঠকের মতামত:

সর্বোচ্চ পঠিত

ডাকসুর ৫ নেতা হচ্ছেন সিনেট সদস্য

ডাকসুর ৫ নেতা হচ্ছেন সিনেট সদস্য

নিজস্ব প্রতিবেদক: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট সদস্য হচ্ছেন ডাকসুর ভিপি আবু সাদিক কায়েম, জিএস এস এম ফরহাদ, এজিএস মহিউদ্দিন খান, পরিবহন... বিস্তারিত