ঢাকা, শুক্রবার, ৬ জুন ২০২৫, ২৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

শেয়ারবাজারে কালো টাকা বিনিয়োগের সুযোগ চান বিনিয়োগকারীরা

ডুয়া নিউজ- শেয়ারবাজার
২০২৫ জুন ০৫ ২০:১২:০০
শেয়ারবাজারে কালো টাকা বিনিয়োগের সুযোগ চান বিনিয়োগকারীরা

দেশের স্থবির শেয়ারবাজারকে চাঙ্গা করতে এবং বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরিয়ে আনতে অপ্রদর্শিত বা ঘোষণা বহির্ভূত অর্থ শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের সুযোগ দেওয়ার জোর দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ ক্যাপিটাল মার্কেট ইনভেস্টর অ্যাসোসিয়েশন।

সংগঠনটি বলেছে, অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর থেকে বাজারের প্রধান সূচক পাঁচ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে এসেছে এবং বাজার মূলধন প্রায় ১ লাখ কোটি টাকা কমে গেছে। বর্তমানে দৈনিক লেনদেন ৩০০ কোটি টাকার নিচে নেমে আসায় বাজার ভঙ্গুর অবস্থায় রয়েছে, যা বিনিয়োগকারীদের আত্মবিশ্বাসকে তলানিতে নিয়ে গেছে।

বাজার পুনরুজ্জীবিত করতে জরুরি পদক্ষেপের আহ্বান

বুধবার (০৪ জুন) এক সংবাদ সম্মেলনে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের এই প্ল্যাটফর্মের সভাপতি এস এম ইকবাল হোসেন বলেন, “এই পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠতে অন্তর্বর্তী সরকারের অবিলম্বে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।”

তিনি বলেন, “এটি কেবল একটি সাধারণ বাজার সংশোধন নয়, বরং একটি পদ্ধতিগত সংকট। "সংগ্রামরত বাজারকে পুনরুজ্জীবিত করতে এবং বিনিয়োগকারীদের বিশ্বাস ফিরিয়ে আনতে জরুরি ও সাহসী পদক্ষেপ গ্রহণ অপরিহার্য।”

অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের প্রস্তাব: ৩ বছরের লক-ইন পিরিয়ড

ইকবাল হোসেন অপ্রদর্শিত অর্থ স্টক মার্কেটে বিনিয়োগের সুযোগ তৈরির প্রস্তাব করেন, যার জন্য তিন বছরের 'লক-ইন পিরিয়ড' থাকবে। তার প্রস্তাব অনুযায়ী, "লক-ইন পিরিয়ডে বিনিয়োগকারীরা তাদের মূল বিনিয়োগ প্রত্যাহার করতে পারবেন না; তারা শুধুমাত্র ডিভিডেন্ড আয় নিতে পারবেন।" তার দৃঢ় বিশ্বাস, অপ্রদর্শিত অর্থ স্টক মার্কেটে বিনিয়োগের সুযোগ দিলে বাজারের তারল্য সংকট সমাধান হবে এবং বাজার দ্রুত পুনরুদ্ধার হবে।

বর্তমানে, রিয়েল এস্টেট খাতই একমাত্র ক্ষেত্র যেখানে মানুষ তাদের অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগ করতে পারে। অন্তর্বর্তী সরকার প্রস্তাবিত ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটেও জমি ও অ্যাপার্টমেন্টে বিনিয়োগের মাধ্যমে কালো টাকা সাদা করার বিধান রেখেছে। যদিও এই সুবিধা বহাল রয়েছে, তবে এই ধরনের বিনিয়োগে করের হার পূর্ববর্তী বছরের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি করা হয়েছে।

বাজেটে বিনিয়োগকারীদের প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির চিত্র

ইকবাল হোসেন জানান, বর্তমান বাজারের পরিস্থিতি বিবেচনা করে বিনিয়োগকারীরা স্টক মার্কেটকে পুনরুজ্জীবিত করার জন্য কিছু প্রণোদনা আশা করেছিলেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল ব্যক্তিদের মূলধন লাভ কর প্রত্যাহার এবং ১ লক্ষ টাকা পর্যন্ত লভ্যাংশ আয়ের ওপর কর অব্যাহতি।

তিনি বলেন, প্রস্তাবিত বাজেট বাজারের মনোভাবকে বদলে দিতে একটি টার্নিং পয়েন্ট হবে বলে আশা করা হয়েছিল। “কিন্তু সাধারণ বিনিয়োগকারীরা প্রস্তাবিত বাজেটে কোনো সরাসরি প্রণোদনা পাননি,” তিনি আক্ষেপ করে বলেন।

সংস্থাটির এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, যদিও বাজেটে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলির জন্য ২.৫ শতাংশ পয়েন্ট কর ছাড়ের শর্ত শিথিল করে ২০ শতাংশ কর হার করা হয়েছে, যা অ-তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলির সাথে ৭.৫ শতাংশ পয়েন্টের কর ব্যবধান তৈরি করেছে, তবে এই ব্যবধান এখনও প্রস্তাবিত ১০ শতাংশ পয়েন্টের চেয়ে অনেক কম।

মার্চেন্ট ব্যাংকগুলিকে বর্তমানে ৩৭.৫ শতাংশ কর দিতে হয়। প্রস্তাবিত বাজেটে তাদের ২৭.৫ শতাংশে কর কমানোর প্রস্তাবের মাধ্যমে কর ছাড় দেওয়া হবে। এটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলিকে সহায়তা করবে কিন্তু ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের জন্য খুব সামান্যই সুবিধা দেবে।

এছাড়াও, বাজেটে ব্রোকারেজ লেনদেনের উপর উৎসে কর ০.০৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ০.০৩ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এই সামান্য পরিবর্তনটি প্রধানত মধ্যস্থতাকারীদের উপকৃত করবে, সাধারণ বিনিয়োগকারীদের নয় বলে মন্তব্য করেন ইকবাল হোসেন।

তিনি বলেন, এই সমন্বয়গুলো সম্পূর্ণ নির্ভুল না হলেও মূলত লাভবান হচ্ছে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো; অথচ বাজারের প্রাণ ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা এতে বাস্তব কোনো স্বস্তি পাচ্ছেন না। তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, বিনিয়োগকারীদের এই দাবিগুলো সরকার যদি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে, তাহলে তা দেশের শেয়ারবাজারে নতুন গতিশীলতা ও আস্থার জন্ম দিতে পারে।

পাঠকের মতামত:

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

সর্বোচ্চ পঠিত