ঢাকা, মঙ্গলবার, ৩ জুন ২০২৫, ২০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

হার্ভার্ডে চীনা স্নাতকের বক্তব্যে বিশ্বজুড়ে তোলপাড়

ডুয়া নিউজ- প্রবাস
২০২৫ জুন ০২ ১৬:৫৩:১২
হার্ভার্ডে চীনা স্নাতকের বক্তব্যে বিশ্বজুড়ে তোলপাড়

হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এক চীনা স্নাতকের সাম্প্রতিক সমাবর্তন বক্তৃতা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। বক্তব্যে তিনি বৈশ্বিক বিভাজন দূর করে সম্প্রীতির আহ্বান জানান—এমন এক সময়ে যখন যুক্তরাষ্ট্র চীনা শিক্ষার্থীদের ভিসা বাতিলে কঠোর নীতিমালা গ্রহণের ঘোষণা দিয়েছে।

বক্তৃতাটি অনলাইনে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। কেউ কেউ তার বক্তব্যের প্রশংসা করেছেন, আবার কেউ কেউ প্রশ্ন তুলেছেন তার উদ্দেশ্য ও পটভূমি নিয়ে।

বিষয়টি নিয়ে সোমবার (২ জুন) একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বিবিসি।

গত বৃহস্পতিবার বক্তব্যে জিয়াং ইউরং বলেন, “আমরা একে অপরকে ভুল প্রমাণ করে উন্নতি লাভ করি না, আমরা উন্নতি করি একে অপরকে ছেড়ে না দিয়ে।”

একই দিনে একজন মার্কিন ফেডারেল বিচারক ট্রাম্প প্রশাসনের হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদেশি শিক্ষার্থীদের ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা স্থগিত করেন।

হার্ভার্ডে সমাবর্তন বক্তা জিয়াংয়ের বক্তব্য চীনা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দারুণ সাড়া ফেলেছে। অনেকেই বলেছেন তার কথা তাদের আবেগকে ছুঁয়ে গেছে। তবে কেউ কেউ মনে করছেন তার উচ্চবিত্ত পারিবারিক পটভূমি চীনা শিক্ষার্থীদের প্রকৃত প্রতিনিধিত্ব করে না।

যুক্তরাষ্ট্রে কিছু মহল জিয়াংয়ের চীনা কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিসি) সঙ্গে সম্ভাব্য যোগসূত্র নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছে। এর আগেও মার্কিন কর্তৃপক্ষ হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়কে সিপিসির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকার অভিযোগে সমালোচনা করেছিল। বিশেষ করে বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি সীমিত করার উদ্যোগ চলাকালে।

জিয়াং আন্তর্জাতিক উন্নয়ন বিষয়ে পড়াশোনা করেছেন এবং তিনি হার্ভার্ডে প্রথম চীনা নারী বক্তা হিসেবে বক্তৃতা দিয়েছেন। তার ভাষণে তিনি হার্ভার্ডের আন্তর্জাতিক পরিবেশের গুরুত্ব তুলে ধরেন। যেখানে শিক্ষার্থীরা একে অপরের সংস্কৃতির সঙ্গে ‘নৃত্য’ করতে শেখে এবং পারস্পরিক বোঝাপড়ার মধ্য দিয়ে অন্যদের বাস্তবতা উপলব্ধি করে।

তিনি বলেছেন, “যদি আমরা এখনো একটি ভাগ করা ভবিষ্যতে বিশ্বাস করি, তবে ভুলে যাবো না: যাদের আমরা শত্রু বলি – তারা ও মানুষ। তাদের মানবতা দেখেই আমরা আমাদের মানবতা খুঁজে পাই।”

জিয়াং তার শেষ দুই বছর ওয়েলসের কার্ডিফ সিক্সথ ফর্ম কলেজে পড়েছেন এবং এরপর যুক্তরাষ্ট্রের ডিউক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রি নিয়েছেন।

সাবেক টুইটার বর্তমানে এক্স (X) হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সমালোচনা করে জানিয়েছে—সমাবর্তন বক্তা জিয়াং এমন একটি বেসরকারি সংস্থার প্রতিনিধি যা ‘চীনা কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিসি) দ্বারা অর্থায়িত ও পর্যবেক্ষিত’। দাবি করা হয় তার পিতা ওই সংস্থায় কাজ করেন এবং প্রতিষ্ঠানটি সিপিসির পরামর্শদাতা হিসেবে ভূমিকা পালন করে।

তবে চীনের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কিছু ব্যবহারকারী দাবি করেছেন, জিয়াংয়ের পিতার প্রতিষ্ঠানটি আসলে আমেরিকার শীর্ষস্থানীয় কোম্পানি ও ফাউন্ডেশনগুলোর সহযোগিতায় পরিচালিত হয়। এই দাবিগুলোর কোনোটি বিবিসি স্বাধীনভাবে যাচাই করতে পারেনি।

চীনের সামাজিক মাধ্যম প্ল্যাটফর্ম উইবোতে এক ব্যবহারকারী লিখেছেন, “এই কারণেই তিনি যুক্তরাজ্যে উচ্চমাধ্যমিকের জন্য স্কলারশিপ পেয়েছিলেন এবং পরবর্তীতে হার্ভার্ডে গিয়েছিলেন।”

অনেকে জিয়াংকে যুক্তরাষ্ট্রে থাকার পরামর্শ দিয়েছেন। এক এক্স ব্যবহারকারী লিখেছেন, “এমন প্রতিভা যুক্তরাষ্ট্রের কাছে থাকা উচিত।”

আরেকজন লিখেছেন, “আশা করি সে বিদেশে উজ্জ্বল হয়ে আমাদের থেকে দূরে থাকবে।” তবে তার ‘ভাগ করা মানবতা’ ধারণা অনেকের মন ছুঁয়ে গেছে।

চীনের আরেক সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম রেড নোটে এক ব্যবহারকারী লিখেছেন, “তিনি আন্তর্জাতিক মঞ্চে দাঁড়িয়ে চীনা শিক্ষার্থীদের মনের কথা বলায় আমি আবেগাহত।”

আরেকজন সমালোচকদের জবাবে লিখেছেন, “তোমরা হয়তো তাদের বদলাতে পারোনি, কিন্তু তারা তোমাদের শুনেছে... যত বেশি মানুষ তোমাদের মতো কথা বলবে, ততই তারা অন্যদের প্রভাবিত করবে।”

হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতি বছর প্রায় ৬,৮০০ আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী ভর্তি হন, যা মোট শিক্ষার্থীর ২৭ শতাংশেরও বেশি। এদের মধ্যে চীনের শিক্ষার্থীর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি, প্রায় এক-তৃতীয়াংশ। এছাড়া ভারত থেকে আসা শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৭০০-এরও বেশি।

পাঠকের মতামত:

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

সর্বোচ্চ পঠিত