ঢাকা, সোমবার, ১৬ জুন ২০২৫, ২ আষাঢ় ১৪৩২
ঘুরে দাঁড়ানোর পথে দেশের শেয়ারবাজার: দৃশ্যমান হচ্ছে ইতিবাচক পদক্ষেপ

দেশের শেয়ারবাজারের কাঙ্ক্ষিত সংস্কার এবং বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ তৈরিতে সাম্প্রতিক সময়ে নেওয়া বিভিন্ন উদ্যোগ বাজারে নতুন করে আস্থার সঞ্চার করছে। একই সাথে আসন্ন ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে বিনিয়োগকারীদের জন্য অনেত গুরুত্বপূর্ণ প্রণোদনার ইঙ্গিত মিলেছে।
বাজার সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, সরকার ও নিয়ন্ত্রক সংস্থার এমন সমন্বিত পদক্ষেপ চলমান থাকলে দেশের শেয়ারবাজার আবারও শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড়াতে পারবে এবং অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি হিসেবে প্রাণ ফিরে পাবে।
শেয়ারবাজারের স্থিতিশীলতা এবং বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরাতে সম্প্রতি বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যেগুলো হলো-
১. বিও হিসাব রক্ষণাবেক্ষণ ফি হ্রাস: বিনিয়োগকারীদের দীর্ঘদিনের দাবি পূরণ করে বেনিফিশিয়ারি ওনার্স (বিও) হিসাবের বার্ষিক রক্ষণাবেক্ষণ ফি ৪৫০ টাকা থেকে কমিয়ে ১৫০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এই পদক্ষেপ নতুন বিনিয়োগকারীদের বাজারে আকৃষ্ট করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
২. ব্রোকারদের তারল্য সংকট মোকাবিলা: সমন্বিত গ্রাহক হিসাব (সিসিএ) থেকে অর্জিত সুদের ২৫ শতাংশ ইনভেস্টরস প্রটেকশন ফান্ডে জমা দিয়ে বাকি ৭৫ শতাংশ ব্রোকাররা ব্যবহার করতে পারবেন। এর ফলে ব্রোকারদের নগদ প্রবাহের ওপর চাপ কমবে এবং বাজারে তারল্য সরবরাহ বৃদ্ধি পাবে।
৩. কমোডিটি মার্কেট চালুর অনুমোদন: চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) কমোডিটি মার্কেট চালুর অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এটি পণ্যভিত্তিক লেনদেনের সুযোগ তৈরি করবে এবং শেয়ারবাজারে নতুন বৈচিত্র্য আনবে, যা বিনিয়োগকারীদের জন্য নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে।
এদিকে, আগামী বাজেটে শেয়ারবাজারের জন্য বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রণোদনা প্রস্তাব করা হয়েছে, যা বাজারের গতিশীলতা বাড়াতে সাহায্য করবে। গুরুত্বপূর্ণ প্রণোদনাগুলো হলো-
১. অগ্রিম আয়করে স্বস্তির প্রস্তাব: বর্তমানে প্রতি ১ লাখ টাকার লেনদেনে ৫০ টাকা হারে অগ্রিম আয়কর (এআইটি) কাটা হয়। আসন্ন বাজেটে এ হার কমিয়ে ১৫ টাকা করার প্রস্তাব রয়েছে, যা বিনিয়োগকারীদের জন্য উল্লেখযোগ্য স্বস্তি বয়ে আনবে।
২. করপার্থক্য বাড়ানোর দাবি: তালিকাভুক্ত ও অতালিকাভুক্ত কোম্পানির মধ্যে করপার্থক্য অন্তত ১০ শতাংশ করার দাবি জানানো হয়েছে। এই পদক্ষেপ আরও বেশি কোম্পানিকে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হতে উৎসাহিত করবে এবং বাজারের গভীরতা বাড়াবে।
৩. ব্যক্তি বিনিয়োগকারীদের কর ছাড়: ব্যক্তি শ্রেণির বিনিয়োগকারীদের জন্য ক্যাপিটাল গেইন ট্যাক্স সম্পূর্ণ মওকুফ এবং এক লাখ টাকা পর্যন্ত ডিভিডেন্ড ট্যাক্স করমুক্ত রাখার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি, ডিভিডেন্ড ট্যাক্সকে চূড়ান্ত কর হিসেবে বিবেচনার বিষয়টিও আলোচনায় এসেছে, যা বিনিয়োগকারীদের নিট মুনাফা বৃদ্ধি করবে।
৪. সরকারি বন্ড বাজারে আনার উদ্যোগ: বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নমেন্ট ট্রেজারি বিল ও বন্ড প্রাইমারি মার্কেটের পরিবর্তে স্টক মার্কেটের মাধ্যমে ইস্যু করার প্রস্তাব বাজেটে তোলা হতে পারে। এতে করে বিনিয়োগকারীদের জন্য নতুন এবং সুরক্ষিত বিনিয়োগমুখী মাধ্যম তৈরি হবে, যা দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগ উৎসাহিত করবে।
বাজার সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, সরকারের আন্তরিকতা এবং নিয়ন্ত্রক সংস্থার সক্রিয় ভূমিকা বাজারে আস্থা ফেরাতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে। তারা আশাবাদী, আসন্ন বাজেটেও এই প্রণোদনাগুলো বাস্তবায়ন হলে শেয়ারবাজার দেশের অর্থনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভে রূপ নিতে পারবে। এসব পদক্ষেপ সম্মিলিতভাবে শেয়ারবাজারকে একটি টেকসই এবং শক্তিশালী অবস্থানে নিয়ে যেতে সাহায্য করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
পাঠকের মতামত:
সর্বোচ্চ পঠিত
- শেয়ারবাজারে বিস্ময়: এক লাখ টাকার শেয়ার ৮০ কোটি!
- ডিভিডেন্ডের উপর উচ্চ কর: শেয়ারবাজারের স্থিতিশীলতা নিয়ে উদ্বেগ
- বিনিয়োগকারীদের সর্বনাশ করেছে তালিকাভুক্ত দুই কোম্পানি
- বাংলাদেশের শেয়ারবাজারে দ্যুতি ছড়াচ্ছে ১৩ ‘বনেদি’ কোম্পানি
- মুনাফা থেকে লোকসানে তথ্য প্রযুক্তির দুই কোম্পানি
- শেয়ারবাজারের ১০ ব্যাংকে আমানত বেড়েছে ৩২ হাজার কোটি টাকা
- মূলধন বাড়ানোর সিদ্ধান্ত শেয়ারবাজারের ১৩ ব্যাংকের
- নীলক্ষেত হোস্টেল থেকে ঢাবির সাবেক শিক্ষার্থীর ম’রদেহ উদ্ধার
- ইরানকে হা-ম-লা বন্ধে প্রস্তাব
- সত্যিই কি স্ট্রোক করেছেন মির্জা ফখরুল? যা জানা গেল
- দুই বড় খবরের মধ্যে আজ খুলছে দেশের শেয়ারবাজার
- শেয়ারবাজারের শর্ত পূরণে ৬০ কোম্পানিকে বিএসইসির আল্টিমেটাম
- ডিভিডেন্ড বেড়েছে শেয়ারবাজারের সাত ব্যাংকের
- মূলধনের বেশি রিজার্ভ জ্বালানি খাতের ১৪ কোম্পানির
- কারাগারে ফাঁসিতে ঝুললেন সেই অস্ত্রধারী আ’লীগ নেতা