ঢাকা, মঙ্গলবার, ২২ জুলাই ২০২৫, ৭ শ্রাবণ ১৪৩২

একই স্কুলে শুরু, এক কবরে শেষ: তিন বন্ধুর হৃদয়বিদারক গল্প

ডুয়া নিউজ- জাতীয়
২০২৫ জুলাই ২২ ২৩:১২:২৬
একই স্কুলে শুরু, এক কবরে শেষ: তিন বন্ধুর হৃদয়বিদারক গল্প

প্রতিদিনের মতো সোমবার সকালেও একসঙ্গে স্কুলে গিয়েছিল তিন বন্ধু—আরিয়ান, বাপ্পি ও হুমায়ের। কিন্তু ক্লাস শেষে আর ঘরে ফেরা হয়নি তাদের। ঢাকার উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুলের ওপর বিমানবাহিনীর যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হওয়ার মর্মান্তিক ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছে তারা।

এই তিন শিশু ছিল একই পরিবারের সদস্য এবং তারা চাচা-ভাতিজা সম্পর্কের চেয়েও বেশি ছিল পরম বন্ধু। দিয়াবাড়ির তারারটেক মসজিদ এলাকায় বেড়ে ওঠা এই শিশুদের জীবনপ্রদীপ একসঙ্গেই নিভে যাওয়ায় পুরো এলাকায় নেমে এসেছে শোকের ছায়া। যে আঙিনায় শিশুরা খেলাধুলায় মেতে থাকতো, সেখানেই আজ তারা পাশাপাশি কবরস্থ।

আরিয়ান চতুর্থ শ্রেণিতে এবং বাপ্পি ও হুমায়ের তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ত। সোমবার সকালে তারা একসঙ্গে স্কুলে যায়। ক্লাস শেষে কোচিং করার কথা ছিল। কিন্তু বেলা দেড়টার দিকে দুর্ঘটনার বিকট শব্দ শুনে তাদের স্বজনরা ছুটে যান স্কুলের দিকে।

বাপ্পির বাবা মো. আবু শাহিন দৌড়ে গিয়েছিলেন স্কুলের দিকে, কিন্তু পৌঁছানোর আগেই সব শেষ। তিনি বলেন, "আমার ছেলের ক্লাসের আগের কক্ষেই বিমানটি ঢুকেছে। তখনই বুঝেছিলাম, হয়তো আরিয়ান বাঁচবে না।"

দুর্ঘটনার পর বাপ্পি ও আরিয়ানকে জীবিত উদ্ধার করা হলেও হাসপাতালে নেওয়ার পর তারা মারা যায়। হুমায়েরের মৃত্যু হয় আরও আগেই। এক হৃদয়বিদারক বর্ণনায় শাহিন জানান, দুর্ঘটনায় তিনি শুধু ছেলেকেই হারাননি, তার ভাইও হাসপাতালে মারা গেছেন।

তিন শিশুর জানাজায় এলাকার মানুষ ও তাদের বন্ধুরা ভিড় করে। সহপাঠী রাইয়ান আফনান জানায়, দুর্ঘটনার সময় সে লাইব্রেরিতে থাকায় প্রাণে বেঁচে যায়। বিস্ফোরণের শব্দ শুনেই সে স্কুলের দিকে দৌড়ে যায়।

এই দুর্ঘটনায় শুধু এই তিন শিশুই নয়, প্রাণ হারিয়েছে আরও দুজন শিক্ষার্থী, যাদের মরদেহ গ্রামে নিয়ে গেছেন স্বজনরা।

একই পরিবারের তিনটি শিশুর এমন আকস্মিক ও ভয়াবহ মৃত্যুতে পুরো দিয়াবাড়ি এলাকা এখন গভীর শোক ও বিস্ময়ে স্তব্ধ। সম্ভাবনাময় পাঁচটি প্রাণের এমন বিদায়ে শোকের ভার যেন বইতে পারছে না পুরো সমাজ।

পাঠকের মতামত:

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

সর্বোচ্চ পঠিত