ঢাকা, সোমবার, ২ জুন ২০২৫, ১৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
বাজেটে শেয়ারবাজারের জন্য সুখবর: কমছে কর, বাড়ছে সুযোগ

আসন্ন ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে বাংলাদেশের শেয়ারবাজারকে চাঙ্গা করতে উল্লেখযোগ্য কর ছাড়ের পদক্ষেপ ঘোষণা করা হতে পারে। বিনিয়োগকারীদের আস্থার কারণে দীর্ঘকাল ধরে ধুঁকতে থাকা বাজারকে পুনরুজ্জীবিত করাই এসব ব্যবস্থার মূল লক্ষ্য।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ সোমবার বাজেট প্রস্তাবনা পেশ করবেন। সম্ভাব্য মূল প্রস্তাবনাগুলোর মধ্যে রয়েছে: তালিকাভুক্ত ও অতালিকাভুক্ত কোম্পানির মধ্যে কর্পোরেট করের ব্যবধান বর্তমানের ৫% থেকে বাড়িয়ে ৭.৫% করা, সিকিউরিটিজ লেনদেনের ওপর অগ্রিম আয়কর (এআইটি) ০.০৫% থেকে কমিয়ে ০.০৩% করা এবং মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর কর্পোরেট করের হার ১০ শতাংশ কমিয়ে ২৭.৫% করা।
কর্পোরেট করের ব্যবধান বৃদ্ধি ও লেনদেনের শর্ত শিথিল
ধুঁকতে থাকা শেয়ারবাজারে কোম্পানিগুলোকে তালিকাভুক্ত হতে উৎসাহিত করতে সরকার বর্তমানে বিদ্যমান ৫% কর্পোরেট করের ব্যবধানকে ৭.৫% এ উন্নীত করার পরিকল্পনা করছে। একইসাথে, হ্রাসকৃত কর হার উপভোগ করার জন্য বর্তমানে প্রয়োজনীয় লেনদেন শর্তগুলো শিথিল করা হবে।
বর্তমানে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলো ২০% কর্পোরেট কর হার উপভোগ করে। তবে কঠোর শর্তের কারণে অনেক কোম্পানি এই হারে যোগ্য হতে পারে না এবং ২২.৫% কর পরিশোধ করে। একইভাবে, অতালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর কর্পোরেট করের হার ২৫% হলেও, শর্ত পূরণ না করার কারণে তাদের প্রায়শই ২৭.৫% পরিশোধ করতে হয়।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, আসন্ন বাজেটে অতালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর জন্য কর্পোরেট কর ২৭.৫% নির্ধারণ করা হবে। একই সাথে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর ২০% হার উপভোগ করার শর্তগুলো শিথিল করা হবে, যার ফলে উভয় গ্রুপের মধ্যে ৭.৫% করের ব্যবধান তৈরি হবে।
সিকিউরিটিজ টার্নওভারের ওপর এআইটি হ্রাস
সরকার সিকিউরিটিজ লেনদেনের ওপর অগ্রিম আয়কর (এআইটি), যা টার্নওভার কর নামে পরিচিত, ০.০৫% থেকে কমিয়ে ০.০৩% করার সম্ভাবনা রয়েছে। এটি ব্রোকারেজ ফার্মগুলোর করের বোঝা কমাতে সাহায্য করবে।
খাত সংশ্লিষ্টদের মতে, ২০০৫ সালে টার্নওভার কর প্রাথমিকভাবে ০.০১৫% নির্ধারণ করা হয়েছিল। ২০০৯ সালের জুলাইয়ে সরকার এটি বাড়িয়ে ০.০২৫% করে। এরপর ২০১০ সালের জুলাইয়ে ০.০৫% এবং ২০১১ সালের জুলাইয়ে ০.১০% পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়। তবে শেয়ারবাজার পতনের পর ২০১১ সালের অক্টোবরে হারটি কমিয়ে ০.০৫% করা হয়। তখন থেকে একই হার বজায় রয়েছে।
মার্চেন্ট ব্যাংকের কর হ্রাস
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, আসন্ন বাজেটে মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর কর্পোরেট করের হার ৩৭.৫% থেকে কমিয়ে ২৭.৫% করার প্রস্তাব করা হতে পারে। এটি মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের দীর্ঘদিনের দাবি, কারণ মার্চেন্ট ব্যাংকগুলো বাজারের মধ্যস্থতাকারীদের মধ্যে সর্বোচ্চ কর্পোরেট করের মুখোমুখি হচ্ছিল। এর বিপরীতে ব্রোকারেজ ফার্ম এবং অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানিগুলো বর্তমানে ২৭.৫% কর্পোরেট কর পরিশোধ করে।
বর্তমানে দেশে ৬৬টি মার্চেন্ট ব্যাংক রয়েছে, যার প্রায় ৬০% ব্যাংক ও নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সাবসিডিয়ারি।
প্রণোদনায় বাজার সংশ্লিষ্টদের আশাবাদ
ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (ডিবিএ) সভাপতি সাইফুল ইসলাম সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, "বাজেটে ঘোষিত প্রণোদনাগুলোর জন্য আমরা আন্তরিকভাবে কৃতজ্ঞ। আমরা প্রধান উপদেষ্টা, অর্থ উপদেষ্টা, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান এবং বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)-এর প্রতি আমাদের গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে এই প্রস্তাবিত প্রণোদনা ও ছাড়গুলো বাংলাদেশের শেয়ারবাজারের বৃদ্ধিতে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখবে।"
প্রস্তাবিত পদক্ষেপগুলোর প্রতিক্রিয়ায় ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) শেয়ারহোল্ডার পরিচালক মিনহাজ মান্নান ইমন বলেন যে, এই কর ব্যবস্থাগুলো বাস্তবায়িত হলে ছাত্র আন্দোলনের পর গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরে আসতে পারে। তিনি আরও যোগ করেন, সিকিউরিটিজ লেনদেনের ওপর এআইটি কমালে বাজারের লেনদেন বাড়বে এবং মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর কর্পোরেট কর কমালে এই খাতে বিনিয়োগ উৎসাহিত হবে, যা এই প্রতিষ্ঠানগুলোর আর্থিক সক্ষমতা বাড়াবে।
মিনহাজ মান্নান আরও উল্লেখ করেন, বিএসইসির পূর্ববর্তী উদ্যোগগুলো—যেমন ব্রোকারদের গ্রাহক অ্যাকাউন্ট থেকে সুদ ব্যবহার করার অনুমতি দেওয়া এবং বিও (বেনিফিশিয়ারি ওনার্স) অ্যাকাউন্টের ফি কমানো—ইতিমধ্যেই খুচরা ও ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি ইতিবাচক বার্তা দিয়েছে।
আইন প্রয়োগের ওপর জোর ফারুখ আহমেদ সিদ্দিকীর
সাবেক বিএসইসি চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী এ বিষয়ে আরও সমালোচনামূলক দৃষ্টিভঙ্গি দিয়েছেন। তিনি যুক্তি দেন, প্রস্তাবিত প্রণোদনাগুলো মূলত ব্রোকারেজ ফার্ম এবং মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোকে বেশি সুবিধা দেবে। সাধারণ বিনিয়োগকারীরা সরাসরি এসব সুবিধা পাবে না।
তিনি বলেন, "টার্নওভার কর কমানো মূলত বড় বিনিয়োগকারীদের সাহায্য করবে। এমনকি যখন তালিকাভুক্ত ও অতালিকাভুক্ত ফার্মগুলোর মধ্যে করের ব্যবধান ১০% ছিল, তখনও একটিও বড় কোম্পানি বাজারে আসেনি। এটি ৭.৫% করলেও তাতে কোনো পরিবর্তন আসবে বলে মনে হয় না।"
তিনি শক্তিশালী আইন প্রয়োগের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন: "দেশে আইন আছে, কিন্তু সেগুলো বাস্তবায়িত হয় না। এটাই শেয়ারবাজারের বর্তমান অবস্থার মূল কারণ। যদি আইনের প্রয়োগ নিশ্চিত করা যায়, তবে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীসহ সব স্টেকহোল্ডারই উপকৃত হবেন।"
পাঠকের মতামত:
সর্বোচ্চ পঠিত
- বাতিল হচ্ছে ২০ আর্থিক প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স, তালিকায় শেয়ারবাজারের ১৪টি
- ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকোর ১.৪ বিলিয়ন ডলারের শেয়ার বিক্রির ঘোষণা
- শেয়ারবাজারের ৬৬ কোম্পানির প্রতি বিএসইসি’র কঠোর বার্তা
- গভীর রাতে ঢাবি শিবির সভাপতির ফেসবুক পোস্টে তোলপাড়
- বনানীতে ঢাবির সাবেক ছাত্রীর ম’রদেহ উদ্ধার
- শেয়ারবাজারের ১৮ ব্যাংককে ডিভিডেন্ড না দেওয়ার নির্দেশ
- ঢাবির পীরগাছা উপজেলা সংগঠনের নেতৃত্বে রবিউল ও সৈকত
- ড. ইউনূসকে ‘আক্রমণ’!
- শেয়ারবাজার ধসের দায় চাপছে বিএসইসি নেতৃত্বের ওপর
- জেড ক্যাটাগরি ও ন্যুনতম শেয়ারধারণে ব্যর্থ কোম্পানিতে বসছে স্বতন্ত্র পরিচালক
- ঈদের ছুটি নিয়ে নতুন প্রস্তাবনা
- ফাঁস হলো হাসনাত-সার্জিসকে হ-ত্যার ভ'য়ঙ্কর পরিকল্পনা
- মন্দার বাজারে আলো ছড়িয়েছে ২০ শেয়ার
- ভারতে রেড অ্যালার্ট জারি!
- ‘নো ডিভিডেন্ড’ ঘোষণা করেছে দুই কোম্পানি