ঢাকা, মঙ্গলবার, ৫ আগস্ট ২০২৫, ২১ শ্রাবণ ১৪৩২
শেয়ারবাজারের ইসলামি ব্যাংকগুলো একীভূতকরণ: সমাধান না সংকট?

ডুয়া নিউজ: দেশের ইসলামি ব্যাংকিং খাত সম্প্রসারণের ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুরের একটি মন্তব্য নতুন করে বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। তিনি ইঙ্গিত দিয়েছেন, সরকার দেশে কার্যরত ১০টি ইসলামি ব্যাংক একীভূত করে দুটি বৃহৎ ব্যাংকে রূপান্তরের পরিকল্পনা নিতে পারে। তার এই মন্তব্য সংশ্লিষ্ট মহলে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছে। অনেকে একে সংকট নিরসনের উপায় হিসেবে দেখলেও, অনেকে এটিকে ভবিষ্যতের জন্য নতুন ঝুঁকি হিসেবে বিবেচনা করছেন।
বর্তমানে দেশে ১০টি পূর্ণাঙ্গ ইসলামী ব্যাংক আছে। সেগুলো হলো—ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ, আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক ও আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক। এ ১০টি ব্যাংকই শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত।
তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, এ ১০টি ইসলামি ব্যাংকের সম্মিলিত আমানত প্রায় ৩ লাখ ৮৫ হাজার কোটি টাকা এবং মোট বিনিয়োগ ৪ লাখ ৮৬ হাজার কোটি টাকারও বেশি। সামগ্রিকভাবে ইসলামি ব্যাংকিং জনপ্রিয়তা অর্জন করলেও কয়েকটি ব্যাংকে সুশাসনের অভাব ও প্রভাবশালী গোষ্ঠীর নিয়ন্ত্রণের কারণে খাতটিতে জটিলতা দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে এস আলম গ্রুপের প্রভাবাধীন ব্যাংকগুলোর কার্যক্রম নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক রয়েছে। সরকার পরিবর্তনের পর এসব ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ থেকে নিয়ন্ত্রক পরিবারের সদস্যদের সরিয়ে দেওয়া হয়। এরপর ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ ও সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক পুনরুদ্ধারের চেষ্টা চালালেও তারা এখনও স্থিতিশীল হতে পারেনি। অন্যদিকে শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক, আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক এবং স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের অবস্থান তুলনামূলকভাবে ভালো।
এমন পরিস্থিতিতে সরকার ‘ব্যাংক রেজুলেশন অর্ডিন্যান্স ২০২৫’ অনুমোদন করেছে, যার আওতায় আর্থিকভাবে দুর্বল ব্যাংকগুলোকে বন্ধ বা একীভূত করার প্রক্রিয়া শুরু করা সম্ভব হবে। তবে এই উদ্যোগ নিয়ে বিশ্লেষকদের মধ্যে বিভাজন স্পষ্ট। অনেকের মতে, একসঙ্গে ১০টি ব্যাংক একীভূত করা বাস্তবসম্মত নয়। কিছু নির্দিষ্ট ব্যাংকের মধ্যে একীভূতকরণ সম্ভব হলেও তা পুরো খাতের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. মুস্তাফা কে মুজেরির মতে, "ব্যাংকের সংখ্যা কমানো নয়, বরং সুশাসন ফিরিয়ে আনা এবং আর্থিক সক্ষমতা বাড়ানো জরুরি।" গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ নুরুল আমিন বলেন, "দুর্বল ব্যাংকগুলোকে প্রথমে টিকে থাকার মতো সক্ষম করে তুলতে হবে, এরপর একীভূতকরণ ফলপ্রসূ হতে পারে।"
বর্তমানে অধিকাংশ ইসলামি ব্যাংক আন্তর্জাতিক নিরীক্ষা সংস্থার মাধ্যমে সম্পদের মান যাচাইয়ের প্রক্রিয়ায় রয়েছে। এই পর্যালোচনার ওপর ভিত্তি করেই একীভূতকরণের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে বলে সূত্র জানায়।
ড. আহসান এইচ মনসুর সম্প্রতি বিআইবিএম আয়োজিত বার্ষিক ব্যাংকিং সম্মেলনে বলেন, "দেশে একাধিক ছোট ও দুর্বল ইসলামি ব্যাংক রয়েছে, যাদের একীভূত করে দুটি শক্তিশালী ব্যাংক গঠন করা হবে। এছাড়া শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকিংয়ের জন্য পৃথক আইন ও তদারকি কাঠামো গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে।"
বাংলাদেশের আর্থিক খাত দীর্ঘদিন ধরে অনিয়ম, দুর্বল ব্যবস্থাপনা ও ঋণখেলাপির সংকটে রয়েছে। বেশিরভাগ ব্যাংক তারল্য সংকটে ভুগছে এবং এক ব্যাংক থেকে আরেক ব্যাংকে ধার নিয়ে কার্যক্রম চালাতে হচ্ছে। বিশ্বব্যাংকের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন মনে করেন, "একীভূতকরণ একটি বিকল্প হতে পারে, তবে ব্যাংকগুলোকে প্রস্তুতির জন্য সময় দিতে হবে।"
বিশেষজ্ঞদের মতে, সুশাসন ও আর্থিক স্বচ্ছতার ভিত্তিতে একীভূতকরণ বাস্তবায়িত হলে তা কার্যকর হতে পারে। কিন্তু তড়িঘড়ি সিদ্ধান্ত নিলে এটি খাতের স্থিতিশীলতায় হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে। এই প্রক্রিয়া সফল করতে হলে প্রথমে দুর্বল ব্যাংকগুলোর আর্থিক ও সাংগঠনিক ভিত্তি মজবুত করতে হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান জানিয়েছেন, বর্তমানে একীভূতকরণ নিয়ে কোনও উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। তিনি বলেন, "আমরা এখন অপেক্ষা করছি ‘ব্যাংক রেজুলেশন অধ্যাদেশ, ২০২৫’ জারির জন্য। এটি জারি হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।"
উল্লেখ্য, এই অধ্যাদেশের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংককে দুর্বল ব্যাংক ব্যবস্থাপনায় আরও বেশি ক্ষমতা প্রদান করা হবে, যা খাতটির পুনর্গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
পাঠকের মতামত:
সর্বোচ্চ পঠিত
- ভারতে ঢাবির দুই ছাত্রীর ছবি নিয়ে তোলপাড়, ক্ষোভ
- শেয়ারবাজারে আসছে রাষ্ট্র ও বহুজাতিক ১৫ কোম্পানি
- ১১'শ শিক্ষার্থীকে বৃত্তি দিবে ঘুড্ডি ফাউন্ডেশন
- ডিএনসিসির শিক্ষাবৃত্তি পাবে ২ হাজার শিক্ষার্থী
- স্কয়ার ফার্মার বাজার মূলধনে নতুন মাইলফলক
- শেয়ারবাজারে বড়দের দাপট, ছোটদের পিছুটান
- ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে ৭ প্রতিষ্ঠান
- ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে ৪ প্রতিষ্ঠান
- ডিভিডেন্ড পেল দুই কোম্পানির বিনিয়োগকারীরা
- বিকালে আসছে ১০ কোম্পানির ইপিএস
- বিকালে আসছে ২১ কোম্পানির ইপিএস
- ক্যাশ ডিভিডেন্ড পেল দুই কোম্পানির বিনিয়োগকারীরা
- নতুন সিনেট সদস্য হলেন ঢাবির ৫ অধ্যাপক
- শিবলী রুবাইয়াত ও শেখ শামসুদ্দিন শেয়ারবাজারে অবাঞ্ছিত ঘোষণা
- গেস্ট হাউজ থেকে সাবেক সেনাপ্রধান হারুনের মরদেহ উদ্ধার