ঢাকা, সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ১ পৌষ ১৪৩২

কোমা নয় ব্রেন ডেথ: পার্থক্য জানুন সহজ ভাষায়

২০২৫ ডিসেম্বর ১৫ ১১:৫৮:০৭

কোমা নয় ব্রেন ডেথ: পার্থক্য জানুন সহজ ভাষায়

নিজস্ব প্রতিবেদক: দুর্ঘটনা, স্ট্রোক কিংবা মারাত্মক মাথার আঘাতের পর কখনো কখনো চিকিৎসকের কাছ থেকে শোনা যায় রোগী ‘ব্রেন ডেথ’। এই শব্দটি শোনামাত্রই পরিবার-পরিজনের মধ্যে শোকের পাশাপাশি তৈরি হয় তীব্র বিভ্রান্তি। কারণ বাইরে থেকে রোগীর শ্বাস-প্রশ্বাস চলছে, বুক ওঠানামা করছে দেখে তাকে জীবিত বলেই মনে হয়। কিন্তু চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় এই অবস্থায় রোগীর মস্তিষ্ক আর কাজ করে না; বাস্তবে তিনি আর জীবিত নন।

তাই ব্রেন ডেথ আসলে কী, সাধারণ মৃত্যুর সঙ্গে এর পার্থক্য কোথায় এসব বিষয় পরিষ্কারভাবে জানা জরুরি।

ব্রেন ডেথ কীভাবে ঘটে

মস্তিষ্কের স্বাভাবিক কার্যক্রম বজায় রাখতে নিরবচ্ছিন্ন রক্ত ও অক্সিজেন সরবরাহ অপরিহার্য। কোনো গুরুতর দুর্ঘটনা, জটিল রোগ বা আকস্মিক শারীরিক বিপর্যয়ে যদি মস্তিষ্কে এই সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়, তবে অল্প সময়ের মধ্যেই মস্তিষ্কের কোষগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হতে শুরু করে। ক্ষতির মাত্রা চরমে পৌঁছালে মস্তিষ্ক স্থায়ীভাবে কাজ করা বন্ধ করে দেয় এটাই ব্রেন ডেথ।

মস্তিষ্কে রক্তনালি ফেটে যাওয়া বা ভয়াবহ রক্তক্ষরণের ক্ষেত্রেও একই অবস্থা তৈরি হতে পারে। এতে মস্তিষ্কের ভেতরের চাপ বেড়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশগুলো অচল হয়ে যায়। বিশেষজ্ঞদের মতে, একবার মস্তিষ্কের কোষ স্থায়ীভাবে নষ্ট হলে তা আর ফিরে আসে না এই অপরিবর্তনীয় ক্ষতিই ব্রেন ডেথের মূল ভিত্তি।

ব্রেন ডেথের প্রধান কারণ

বিভিন্ন গুরুতর শারীরিক জটিলতা ব্রেন ডেথের দিকে নিয়ে যেতে পারে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য-

গুরুতর মাথায় আঘাত বা ট্রমাটিক ব্রেন ইনজুরি

মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ (ইন্ট্রাসেরিব্রাল হেমোরেজ)

সাবঅ্যারাকনয়েড হেমোরেজ

ইস্কেমিক স্ট্রোক

হার্ট অ্যাটাকজনিত অক্সিজেন ঘাটতি

শ্বাসরোধ বা দীর্ঘ সময় শ্বাস বন্ধ থাকায় হাইপক্সিক ইস্কেমিক ব্রেন ইনজুরি

মেনিনজাইটিস বা এনসেফালাইটিসের মতো মারাত্মক সংক্রমণ

ব্রেন ডেথ নির্ণয়ের প্রক্রিয়া

ব্রেন ডেথ ঘোষণা করা অত্যন্ত সংবেদনশীল ও কাঠামোবদ্ধ একটি চিকিৎসা সিদ্ধান্ত। সাধারণত অভিজ্ঞ নিউরোলজিস্টরা আন্তর্জাতিক গাইডলাইন অনুসরণ করে একাধিক ধাপে পরীক্ষা করেন। রোগীর স্নায়বিক প্রতিক্রিয়া, ব্রেন স্টেমের কার্যক্ষমতা এবং নিজে থেকে শ্বাস নেওয়ার সক্ষমতা সবকিছুই যাচাই করা হয়। প্রতিটি ধাপ নথিভুক্ত থাকে এবং প্রয়োজন হলে একাধিক চিকিৎসকের সম্মিলিত মতামত নেওয়া হয়।

সব পরীক্ষায় যখন নিশ্চিত হওয়া যায় যে মস্তিষ্ক স্থায়ীভাবে নিষ্ক্রিয়, তখনই ব্রেন ডেথ ঘোষণা করা হয়। আইনগতভাবে এই ঘোষণার সময়ই মৃত্যুর সময় হিসেবে ধরা হয় যদিও যন্ত্রের সহায়তায় হৃদস্পন্দন সাময়িকভাবে চলতে পারে।

ব্রেন ডেথ ঘোষণার আগে যেসব বিষয় নিশ্চিত করা হয়

চিকিৎসকেরা মূলত তিনটি শর্ত পূরণ হওয়া দেখেন-

আলো, শব্দ বা স্পর্শে কোনো প্রতিক্রিয়া নেই

চোখের পিউপিলসহ ব্রেন স্টেম-নিয়ন্ত্রিত সব রিফ্লেক্স অনুপস্থিত

ভেন্টিলেটর ছাড়া নিজে থেকে শ্বাস নেওয়ার চেষ্টা নেই

এই সবকিছু নিশ্চিত হলে ব্রেন ডেথ ঘোষণা করা হয়।

কোমা ও ব্রেন ডেথ: পার্থক্য

কোমা ও ব্রেন ডেথ এক নয়। কোমায় রোগী গভীর অচেতন থাকলেও মস্তিষ্ক পুরোপুরি বন্ধ থাকে না এবং অনেক ক্ষেত্রে সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। কিন্তু ব্রেন ডেথ হলো চূড়ান্ত অবস্থা এতে মস্তিষ্কের সব কার্যক্রম স্থায়ীভাবে থেমে যায়। চিন্তা, অনুভূতি, প্রতিক্রিয়া এমনকি শ্বাস নেওয়ার সক্ষমতাও আর থাকে না।

ব্রেন ডেথ থেকে কি ফেরার সুযোগ আছে?

চিকিৎসাবিজ্ঞানের উত্তর স্পষ্ট না। এখন পর্যন্ত কোনো বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত ঘটনায় ব্রেন ডেথ থেকে সুস্থ হয়ে ওঠার নজির নেই। কঠোর নিয়ম মেনে একাধিক পরীক্ষার পরই এই সিদ্ধান্ত দেওয়া হয় এবং একবার নিশ্চিত হলে রোগী চিকিৎসাগতভাবে মৃত বিবেচিত হন।

প্রতিরোধ কি সম্ভব?

সব ক্ষেত্রে ব্রেন ডেথ প্রতিরোধ করা সম্ভব নয়। কারণ বড় দুর্ঘটনা, ভয়াবহ স্ট্রোক বা হঠাৎ অক্সিজেন ঘাটতির মতো ঘটনা অনেক সময় নিয়ন্ত্রণের বাইরে ঘটে। তবে দ্রুত চিকিৎসা, সময়মতো হাসপাতালে নেওয়া এবং ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় সঠিক চিকিৎসা পেলে কিছু ক্ষেত্রে পরিস্থিতি এতটা মারাত্মক হয়ে ওঠা থেকে রক্ষা পাওয়া যেতে পারে।

ইএইচপি

পাঠকের মতামত:

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

সর্বোচ্চ পঠিত