ঢাকা, শনিবার, ৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ২২ অগ্রহায়ণ ১৪৩২

জামায়াতের হিন্দু প্রার্থীকে নিয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য

২০২৫ ডিসেম্বর ০৬ ২২:২২:৫২

জামায়াতের হিন্দু প্রার্থীকে নিয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য

নিজস্ব প্রতিবেদক: খুলনা-১ (দাকোপ-বটিয়াঘাটা) আসনের রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে অভূতপূর্ব আলোচনার জন্ম দিয়েছেন কৃষ্ণ নন্দী। দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয়ভাবে ব্যবসায়ী পরিচয়ে পরিচিত এই ব্যক্তি এবার হঠাৎ করেই জামায়াতের প্রার্থী হিসেবে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। হিন্দু ধর্মাবলম্বী হওয়া সত্ত্বেও জামায়াত তাকে মনোনয়ন দেওয়ায় এলাকায় শুরু হয়েছে নতুন ধরণের রাজনৈতিক তরঙ্গ, যার রেশ ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও।

জামায়াত ঘোষিত প্রার্থী কৃষ্ণ নন্দী এর আগে ছিলেন ডুমুরিয়া উপজেলা হিন্দু কমিটির সভাপতি। ৩ ডিসেম্বর খুলনায় ৮ দলের বিভাগীয় সমাবেশে জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান তাকে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রার্থী ঘোষণা করার পরই বিস্তর বিতর্ক শুরু হয়। কারণ এই আসনে আগে প্রার্থী ছিলেন মাওলানা আবু ইউসুফ।

এর পরপরই সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে কৃষ্ণ নন্দীর ভারতীয় হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের এক নেতার সঙ্গে তোলা কয়েকটি ছবি। বিশেষ করে ওয়ার্ল্ড হিন্দু স্ট্রাগল কমিটির বাংলাদেশ শাখার সভাপতি শিপন কুমার বসুর সঙ্গে তার ছবি ছড়িয়ে পড়ায় প্রশ্ন উঠেছে কৃষ্ণ নন্দীর অতীত যোগাযোগ ও রাজনৈতিক অবস্থান নিয়ে। সাংবাদিক জুলকারনাইন সায়ের তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পোস্টে বিষয়টি তুলে ধরার পর বিতর্ক আরও তীব্র হয়।

কৃষ্ণ নন্দীর পেশা ব্যবসা, যার কেন্দ্র ডুমুরিয়ার চুকনগর। মোটরসাইকেল থেকে শুরু করে রড-সিমেন্টের ব্যবসায় তার পরিবার বহু বছর ধরে সক্রিয়। দাবি অনুযায়ী তিনি ২০০৩ সালে মিয়া গোলাম পরওয়ারের মাধ্যমে জামায়াতে যোগ দেন; তবে স্থানীয়রা অভিযোগ করেন তিনি দীর্ঘদিন রাজনৈতিকভাবে সক্রিয় ছিলেন না। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট সহিংসতার ঘটনায় তার বাড়ি ও ব্যবসায় হামলার পরই তিনি আবার প্রকাশ্যে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে ফিরেন।

অন্যদিকে ভারতের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠ যোগাযোগের অভিযোগও সামনে আসে। সাংবাদিক সায়ের দাবি করেছেন ২০১৩ সাল থেকে কৃষ্ণ নন্দী অন্তত ২২ বার ভারত সফর করেছেন এবং শিপন কুমার বসুর সঙ্গে তার তোলা ছবিগুলো এআই-জেনারেটেড নয় বলে ফরেনসিক বিশ্লেষণে প্রমাণ মিলেছে। এমনকি একটি বৈঠকে ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা আইবি-র এক কর্মকর্তা থাকার কথাও উল্লেখ করেছেন তিনি।

অভিযোগের জবাবে কৃষ্ণ নন্দী বলেন, “যে ছবিগুলো ছড়ানো হয়েছে সেগুলো জাল। ওই ব্যক্তিকে আমি চিনি না। এআই-জেনারেটেড ছবি ছড়িয়ে আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার করা হচ্ছে।”

তার রাজনৈতিক অতীত নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। স্থানীয় আওয়ামী লীগ বলছে, তিনি ছিলেন সাবেক মন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দের ঘনিষ্ঠ। সেই সূত্রে তার পুরোনো কিছু ছবি এখন সামাজিক মাধ্যমে ঘুরছে। অনেকেই বলছেন, আওয়ামী লীগের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা থেকেই ক্ষুব্ধ জনতা তার ব্যবসায় হামলা করেছিল, আর এখন তিনি ‘নিজেকে বাঁচাতে’ জামায়াতের আশ্রয় নিয়েছেন। তবে তিনি এসব অভিযোগ অস্বীকার করেন।

খুলনা-১ আসনটি দেশের অন্যতম বড় হিন্দু অধ্যুষিত এলাকা। এখানে প্রায় ৪৩ শতাংশ ভোটার হিন্দু সম্প্রদায়ের, খ্রিষ্টান আছেন ২ শতাংশের বেশি। স্বাধীনতার পর থেকে এ আসনে সংখ্যালঘু প্রার্থীরাই সংখ্যাগরিষ্ঠবার বিজয়ী হয়েছেন। সেই বাস্তবতায় জামায়াত এবার প্রথমবারের মতো সংখ্যালঘু প্রার্থী দেওয়ায় বিস্ময়ের সঙ্গে কৌতূহলও তৈরি হয়েছে।

জামায়াতের মাওলানা আবু ইউসুফ মনোনয়ন হারালেও তিনি বলেছেন, “দলের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত, আমি কৃষ্ণ নন্দীর পক্ষে প্রচার করছি।” অন্যদিকে বিএনপির প্রার্থী আমীর এজাজ খানও শক্ত অবস্থানে রয়েছেন, যার ফলে ত্রিমুখী প্রতিদ্বন্দ্বিতার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।

শেষ পর্যন্ত, এলাকার রাজনৈতিক ইতিহাস, সংখ্যালঘু আধিপত্য, প্রার্থীদের বিতর্কিত অতীত এবং ভাইরাল ছবির আলোচনায় খুলনা-১ আসনটি এখন জাতীয় পর্যায়ের নজরকাড়া কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। কৃষ্ণ নন্দী কতটা রাজনৈতিক লড়াই টিকিয়ে রাখতে পারবেন তা নিয়ে ভোটারদের মধ্যে জোর আলোচনা; আর পুরো এলাকা তাকিয়ে আছে তার আসল পরীক্ষা নির্বাচনের মাঠে কীভাবে দেন, সেই উত্তরের দিকে।

ইএইচপি

পাঠকের মতামত:

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

সর্বোচ্চ পঠিত