ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২০ নভেম্বর ২০২৫, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩২

হাসিনাকে ভারত কী দেবে? পর্দার আড়ালের চুক্তি নিয়ে চাঞ্চল্য

২০২৫ নভেম্বর ২০ ১৭:৪৫:৫৭

হাসিনাকে ভারত কী দেবে? পর্দার আড়ালের চুক্তি নিয়ে চাঞ্চল্য

নিজস্ব প্রতিবেদক :বাংলাদেশে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ড ঘোষণার পর বিষয়টি শুধু দেশের রাজনীতিতেই নয়, বাংলাদেশ–ভারত সম্পর্কের ভবিষ্যৎ দিকনির্দেশনাতেও বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে করছেন নানা মহলের পর্যবেক্ষকরা।

বিশেষ করে আগামী তিন মাসের মধ্যে যে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে, সেই নির্বাচনের পর ক্ষমতায় আসা নতুন সরকার কীভাবে ‘শেখ হাসিনা ইস্যু’ মোকাবিলা করবে—সেদিকে কৌতূহল বাড়ছে।

গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক এমনিতেই টানাপোড়েনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। নতুন করে শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ডের রায় ঘোষণা হওয়ায় দুই দেশের সম্পর্ক কোন পথে এগোবে, তা নিয়ে জল্পনা আরও ঘনীভূত হয়েছে।

রায় ঘোষণার পরপরই বাংলাদেশ সরকার ঘোষণা দেয় যে তারা ভারত সরকারকে পুনরায় ‘নোট ভারবাল’ পাঠিয়ে শেখ হাসিনাকে প্রত্যর্পণের অনুরোধ জানাবে।

যদিও এর আগে একই অনুরোধ করা হলেও ভারত কখনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানায়নি। ভারত সরকার এখন পর্যন্ত বলছে, “বিশেষ পরিস্থিতিতে নিরাপত্তাজনিত কারণে” শেখ হাসিনাকে সাময়িক আশ্রয় দেওয়া হয়েছে।

এদিকে শেখ হাসিনার মামলার রায় ঘোষণার ঠিক পরদিনই দিল্লিতে ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভালের সঙ্গে বৈঠক করেন বাংলাদেশের নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান। তবে আলোচনায় শেখ হাসিনার প্রসঙ্গ ছিল কি না—তা এখনো জানানো হয়নি।

বিশ্লেষকদের মতে, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক যেখানে ইতোমধ্যেই নাজুক, সেখানে শেখ হাসিনাকে প্রত্যর্পণ করার মতো সংবেদনশীল বিষয়ে ভারতের সাড়া দেওয়ার সম্ভাবনা কার্যত নেই। ট্রাইব্যুনালের রায়ে মৃত্যুদণ্ড হওয়ায় ‘মৃত্যুহুমকি’ যুক্তি দিয়ে ভারত প্রত্যর্পণ প্রত্যাখ্যান করতে পারে বলেও তারা মনে করেন।

বাংলাদেশ–ভারত প্রত্যর্পণ চুক্তিতে এমন একাধিক ধারা রয়েছে, যেখানে মানবাধিকার ঝুঁকি বা মৃত্যুদণ্ডের আশঙ্কা থাকলে প্রত্যর্পণ না করার সুযোগ থাকে। বিশ্লেষকদের মতে, ঠিক এই যুক্তিই ভারতের প্রধান অবস্থান হয়ে উঠবে।

অন্যদিকে দুই দেশের সম্পর্ক গত এক বছরে নানা কারণে উত্তপ্ত হয়েছে। শেখ হাসিনা ভারতে অবস্থানকালে সংবাদমাধ্যমে যেসব বক্তব্য দিয়েছেন, তাতে অসন্তুষ্টি প্রকাশ করলেও সেগুলোর প্রভাব কাটিয়ে উঠতে পারেনি মি. ইউনূসের সরকার।

ভারতের পক্ষ থেকে বাংলাদেশি নাগরিকদের ভিসা সীমিত করে রক্ষণশীল নীতি নেওয়া হয়; পর্যটন ভিসা বন্ধ, মেডিকেল ভিসাও অল্প সংখ্যক দেওয়া—এ সবই সম্পর্কের টানাপোড়েন বাড়িয়েছে।

এর পাশাপাশি বাংলাদেশের কিছু রাজনৈতিক নেতার ভারতবিরোধী বক্তব্য, আগরতলায় বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনে হামলা, পাকিস্তানের সঙ্গে উষ্ণ সম্পর্ক—এসবকিছু নিয়েই উদ্বেগ বাড়ছে ভারতের ভেতরেও।

বিশ্লেষকরা বলছেন, নির্বাচন পরবর্তী সরকার কোন দল গঠন করবে, তাদের নীতি কী হবে—এসবই দুই দেশের সম্পর্ক নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। নতুন সরকার চাইলে ‘শেখ হাসিনা ইস্যু’কে পেছনে রেখে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক স্বাভাবিক করার পথে হাঁটতে পারে, আবার চাইলে এই ইস্যুকেই সামনে টেনে নিয়ে ভারতের ওপর চাপ বাড়াতে পারে।

সাবেক কূটনীতিক হুমায়ুন কবির মনে করেন, সম্পর্ক কোন দিকে যাবে তা নির্ভর করবে তিন বিষয়ের ওপর—১) নতুন সরকার কেমন হবে,২) ভারত তাদের সঙ্গে কেমন সম্পর্ক চায়,৩) আওয়ামী লীগ রাজনীতিতে কতটা সক্রিয় থাকে এবং শেখ হাসিনাকে কেন্দ্র করে কতটা চাপ সৃষ্টি করে।

ভারতীয় বিশ্লেষক শ্রীরাধা দত্তের মতে, আগামী সরকারের সময়েও বাংলাদেশ সম্ভবত শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণ দাবি জানিয়ে যাবে। তবে তিনি মনে করেন, এই ইস্যুকে কেন্দ্র করে সম্পর্কটিকে জটিল করে রাখা হলে দু’পক্ষই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বরং ইস্যুটি আলাদা রেখে নিরাপত্তা, বাণিজ্য, সীমান্ত পরিস্থিতি ও আঞ্চলিক কৌশলগত সহযোগিতার মতো গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে কাজ করলে দুই দেশের সম্পর্ক সহজ হবে।

সব মিলিয়ে বলা যায়, বাংলাদেশে যেই সরকারই ক্ষমতায় আসুক, দুই দেশের সম্পর্কের কেন্দ্রে থাকা সবচেয়ে জটিল ইস্যুটি হবে শেখ হাসিনা। তবে সম্পর্কের ভবিষ্যৎ নির্ভর করবে দুই দেশের কূটনৈতিক নমনীয়তা, রাজনৈতিক স্থিতি এবং বাস্তব পরিস্থিতি মোকাবিলার সক্ষমতার ওপর।

ডুয়া/নয়ন

পাঠকের মতামত:

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

সর্বোচ্চ পঠিত

ইন্টারডিসিপ্লিনারি সায়েন্স র‍্যাংকিংয়ে দক্ষিণ এশিয়ায় শীর্ষে ঢাবি, বিশ্বে ৫২তম

ইন্টারডিসিপ্লিনারি সায়েন্স র‍্যাংকিংয়ে দক্ষিণ এশিয়ায় শীর্ষে ঢাবি, বিশ্বে ৫২তম

ইনজামামুল হক পার্থ: দ্বিতীয়বারের মতো টাইমস হায়ার এডুকেশন (টিএইচই) ইন্টারডিসিপ্লিনারি সায়েন্স র‍্যাংকিং প্রকাশিত হয়েছে। ২০২৬ সালে বাংলাদেশের ১২টি সরকারি ও... বিস্তারিত