ঢাকা, শনিবার, ১ নভেম্বর ২০২৫, ১৭ কার্তিক ১৪৩২

তীব্র অর্থ সংকটে গাজাবাসী

২০২৫ নভেম্বর ০১ ১৬:৩০:৫৪

তীব্র অর্থ সংকটে গাজাবাসী

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: গাজায় ইসরায়েলি বিমান হামলা ও অবরোধের চরম পরিস্থিতি কিছুটা হলেও শিথিল হয়েছে, তবে যুদ্ধবিরতির মধ্যেও মানুষের জীবন স্বাভাবিক হয়নি। ঘরবাড়ি, স্কুল ও হাসপাতালের ধ্বংসস্তূপের পাশাপাশি নতুন সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে গাজার সাধারণ মানুষ নগদ অর্থের তীব্র সংকট।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুদ্ধবিরতির ছয় দিন পর ১৬ অক্টোবর গাজার ব্যাংকগুলো ধীরে ধীরে খুলতে শুরু করে। কিন্তু ব্যাংকের সামনে দীর্ঘ সারি গড়লেও অধিকাংশ মানুষ হতাশ হয়ে ফিরছেন খালি হাতে।

৬১ বছর বয়সী ছয় সন্তানের জনক ওয়েল আবু ফারেস ব্যাংক অব প্যালেস্টাইনের সামনে দাঁড়িয়ে বলেন, “ব্যাংকে কোনো নগদ নেই। কেবল কাগজপত্রে স্বাক্ষর করে ফিরে আসতে হয়।”

গাজায় দৈনন্দিন লেনদেনের জন্য নগদ অর্থ অপরিহার্য। বাজারে খাবার কেনা, বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ সবই নগদে করা হয়। কিন্তু ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ব্যাংকনোট প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে ইসরায়েল।

গাজার অর্থনীতিবিদ মোহাম্মদ আবু জয়্যাব বলেন, “ব্যাংক খোলা, এসি চলছে, কিন্তু ভেতরে কোনো নগদ লেনদেন হয় না। কেউ টাকা জমা দিতে বা তুলতেও পারে না। মানুষ এখন কিছু লোভী ব্যবসায়ীর কাছে যায়, যারা ২০ থেকে ৪০ শতাংশ ফি কেটে নগদ প্রদান করে।”

সাত সন্তানের মা ইমান আল-জাবারি স্মৃতিচারণ করে বলেন, “একসময় ব্যাংকে লেনদেন এক ঘণ্টার মধ্যে শেষ হতো। এখন দুই-তিন দিন ধরে আসা-যাওয়া করতে হয়। শেষমেশ ৪০০–৫০০ শেকেল পাই। এই টাকায় এখন কী কিনা যায়?”

নগদ সংকটের প্রভাব মানুষকে জীবিকার জন্য কঠোর সংগ্রামে বাধ্য করছে। ৪০ বছর বয়সী মানাল আল-সাইদি ক্ষতিগ্রস্ত ব্যাংক নোট মেরামত করে পরিবারের জন্য খাবার জোগাড় করেন। তিনি বলেন, “দৈনিক ২০–৩০ শেকেল আয় করি, তাতেই রুটি, মটরশুঁটি আর ফল কিনি। জীবিকা চলাচলের মাত্র।”

অনেকে এখন ডিম বা চিনি কেনার মতো ছোট কেনাকাটাও ব্যাংক অ্যাপের মাধ্যমে করছেন, কিন্তু বিক্রেতারা অতিরিক্ত ফি নেন।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ২০ দফা শান্তি পরিকল্পনায় গাজায় নগদ অর্থের প্রবাহ সম্পর্কে কোনো উল্লেখ নেই। পুনর্গঠন ও নিরাপত্তার বিস্তারিত নির্ধারণ ভবিষ্যতের জন্য রাখা হয়েছে।

ফলে যাদের ঘরবাড়ি, চাকরি ও আত্মীয় হারিয়ে গেছে, যারা সঞ্চয় খরচ করে ফেলেছেন বা জিনিসপত্র বিক্রি করে খাবার ও ওষুধ কিনছেন, তাদের জীবন কঠিন হয়ে উঠছে। অনেকেই এখন পণ্য বিনিময় করে দিন কাটাচ্ছেন।

৫৩ বছর বয়সী ব্যবসায়ী সামির নামরুতি হাতে প্রায় ছেঁড়া একটি নোট দেখিয়ে বলেন, “নোটটা কেমন দেখাচ্ছে তা গুরুত্বপূর্ণ নয়। যতক্ষণ সিরিয়াল নম্বর আছে, সেটাই আমার কাছে টাকা।”

ইএইচপি

পাঠকের মতামত:

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

সর্বোচ্চ পঠিত