ঢাকা, বুধবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৫, ৩০ আশ্বিন ১৪৩২

৮১ পয়েন্টের ধসে ছিন্নভিন্ন ২৩ স্বল্প মূলধনী কোম্পানিও

মোবারক হোসেন
মোবারক হোসেন

রিপোর্টার

২০২৫ অক্টোবর ১৫ ১৮:২২:০৩

৮১ পয়েন্টের ধসে ছিন্নভিন্ন ২৩ স্বল্প মূলধনী কোম্পানিও

মোবারক হোসেন: শেয়ারবাজারে আজ যেন রক্তের হোলি খেলা। ডিএসই-এর প্রধান সূচক এক দিনেই প্রায় ৮১ পয়েন্ট কমে যাওয়ায় বাজারে নেমেছে মহাবিপর্যয়। এই তীব্র পতনের সবচেয়ে কড়া আঘাতটি লেগেছে স্বল্প পরিশোধিত মূলধনের কোম্পানিগুলোর উপর। যাদের পরিশোধিত মূলধন ১০ কোটি টাকার নিচে, এমন ২৩টি কোম্পানির শেয়ারের দরে দেখা দিয়েছে বড় ঝাঁকুনি। বাজারের এই রক্তক্ষরণে কেবল জিলবাংলা সুগার মিল কিছুটা ইতিবাচক প্রবণতা ধরে রাখতে পেরেছে, যা সামগ্রিক হতাশার মাঝে এক বিরল ব্যতিক্রম।

বাজার সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শেয়ারবাজারে সাধারণত একটি রেওয়াজ প্রচলিত আছে—বড় ধরনের পতনের দিনে তুলনামূলকভাবে স্বল্প মূলধনী কোম্পানিগুলোর শেয়ারদর শক্ত অবস্থানে থাকে বা কম প্রভাবিত হয়। কারণ, এসব কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন কম হওয়ায় বাজারে শেয়ারের সরবরাহ (ফ্লোটিং শেয়ার) কম থাকে। কিন্তু আজকের ৮১ পয়েন্টের বিশাল পতনে এই রেওয়াজও ভেঙ্গে গেছে। কাঠামোগতভাবে ভঙ্গুর এই ২৩টি স্বল্প মূলধনী কোম্পানির শেয়ারেও আজ তীব্র ঝাঁকুনি লেগেছে। প্যানিক সেল বা বিক্রির চাপে এদের দরেও বড় ধরনের পতন ঘটেছে, যা কার্যত অপ্রতিরোধ্য ছিল। এটি বাজারের দুর্বল আস্থারই প্রতীক, যেখানে বড় পতনের ধাক্কা এই ছোট কোম্পানিগুলোকেও দ্বিগুণ গতিতে তলানীতে নামিয়ে এনে এক ধরনের দুষ্টচক্র সৃষ্টি করেছে।

আজকের ধসে দেশের টেক্সটাইল, খাদ্য, ফার্মাসিউটিক্যালস এবং ইঞ্জিনিয়ারিং খাতের দুর্বল মূলধনের কোম্পানিগুলো সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আম্বি ফার্মা, এগ্রিকালচারাল মার্কেটিং (প্রাণ), এপেক্স ফুডস, এপেক্স স্পিনিং, আরামিট লিমিটেড, আজিজ পাইপস, বাঙ্গাস, বাংলাদেশ অটোগারস, ইস্টার্ন লুুব্রিকেন্টস, জি কিউ বল পেন, হামি ইন্ডাস্ট্রিজ, জুট স্পিনার্স, কে অ্যান্ড কিউ, লাইব্রা ইনফিউশনস, মনো এগ্রো, নর্দার্ন জুট, রহিম টেক্সটাইল, রেকিট বেনকিজার, শ্যামপুর সুগার এবং স্ট্যান্ডার্ড সিরামিকসসহ বাকি সবকটি কোম্পানির শেয়ার দর আজ পতনের শিকার হয়েছে। বিনিয়োগকারীদের চোখের সামনে তাদের বিনিয়োগের মূল্য দ্রুত কমতে থাকায় নেমে এসেছে তীব্র হতাশা।

এই তালিকাটিতে কিছু পরিচিত শক্তিশালী কোম্পানি (যেমন: এএমসিএল-প্রাণ, রেকিট বেনকিজার) থাকলেও, তাদের স্বল্প পরিশোধিত মূলধনের কারণেই আজকের বাজারের ধাক্কা সামলাতে পারেনি।

তবে এই ব্যাপক পতনের মধ্যেও ব্যতিক্রম হিসেবে সামান্য হলেও আশার আলো দেখিয়েছে জিলবাংলা সুগার মিলস লিমিটেড। কোম্পানিটি আজ কিছুটা ইতিবাচক প্রবণতায় লেনদেন শেষ করেছে। তবে এটি সামগ্রিক বাজারের চিত্র নয়, বরং বাজারের এই চরম নেতিবাচকতার বিপরীতে একটি বিচ্ছিন্ন উদাহরণ মাত্র।

এই বিশাল দরপতনের মুখে বাজারের স্থিতিশীলতা ফেরাতে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। বিনিয়োগকারী এবং বাজার সংশ্লিষ্ট মহলের প্রধান দাবি হলো—নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে অবিলম্বে এই বড় পতনের মূল কারণগুলো খুঁজে বের করতে হবে। পাশাপাশি, কোন কোন ব্রোকারেজ হাউজ থেকে অস্বাভাবিক এবং প্যানিক সেলিং হয়েছে, তা চিহ্নিত করার জন্য বিশেষ উদ্যোগ নিতে হবে। যারা আতঙ্ক সৃষ্টি করে বাজারকে আরও দুর্বল করছে, সেই চিহ্নিত হাউজগুলোর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এমন পদক্ষেপের মাধ্যমেই কেবল বাজারে শৃঙ্খলা এবং বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরিয়ে আনা সম্ভব বলে মনে করেন ক্ষতিগ্রস্ত সাধারণ বিনিয়োগকারীরা।

এএসএম/

শেয়ারবাজারের বিশ্লেষণ ও ইনসাইড স্টোরি পেতে আমাদের পেজ ফলো করুন।

পাঠকের মতামত:

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

সর্বোচ্চ পঠিত