ঢাকা, সোমবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৫, ২৭ আশ্বিন ১৪৩২

বিস্ফোরক অভিযোগে পদত্যাগ করলেন এসআইবিএল উদ্যোক্তা পরিচালক

২০২৫ অক্টোবর ১২ ১৯:২০:২৮

বিস্ফোরক অভিযোগে পদত্যাগ করলেন এসআইবিএল উদ্যোক্তা পরিচালক

নিজস্ব প্রতিবেদক: শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের (এসআইবিএল) অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ও উদ্যোক্তা পরিচালক মেজর ডা. মো. রেজাউল হক (অব.) পরিচালনা পর্ষদ থেকে পদত্যাগ করেছেন। তিনি ব্যাংকের স্বতন্ত্র পরিচালকদের অযোগ্যতা, দুর্নীতি এবং সার্বিক ব্যবস্থাপনার ব্যর্থতার অভিযোগ তুলে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

রোববার (১২ অক্টোবর) ব্যাংকের চেয়ারম্যান বরাবর পাঠানো এক পদত্যাগপত্রে রেজাউল হক জানান, ২০১৩ সালের ৩০ জুন থেকে ২০১৭ সালের ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত তিনি ব্যাংকের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তাঁর নেতৃত্বে ২০১৬ সালে ব্যাংকটি শেয়ারহোল্ডারদের ২০ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড দেয়। তবে ২০১৭ সালের ৩০ অক্টোবর রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার হস্তক্ষেপে তাঁকে ‘অস্ত্রের মুখে পদত্যাগে বাধ্য করা হয়েছিল’ বলেও অভিযোগ করেন তিনি।

রেজাউল হক তাঁর চিঠিতে দাবি করেন, একটি প্রভাবশালী গ্রুপ রাষ্ট্রীয় সহায়তায় ব্যাংকটির নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর থেকে গত সাত বছরে (২০১৭–২০২৪) ব্যাংকটিতে ব্যাপক দুর্নীতি ও লুটপাট হয়েছে। এতে ব্যাংকটি প্রায় ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছে।

তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর উদ্যোক্তারা আশা করেছিলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক প্রকৃত উদ্যোক্তাদের হাতে ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ ফিরিয়ে দেবে। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের সঙ্গে সরাসরি প্রস্তাবনা দেওয়ার পরও তার পরিবর্তে কিছু স্বতন্ত্র পরিচালকের সমন্বয়ে নতুন পর্ষদ গঠন করা হয়— যা তাঁর মতে ছিল ‘সম্পূর্ণ অকার্যকর’।

রেজাউল হক অভিযোগ করেন, এই পর্ষদের সদস্যরা ব্যাংক কোম্পানি আইনের আলোকে উদ্যোক্তা বা শেয়ারহোল্ডার নন, তবুও তারা ব্যাংক পরিচালনায় সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। ফলে গত এক বছরেরও বেশি সময় ধরে বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক সহায়তা সত্ত্বেও ব্যাংকটি ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি।

তিনি আরও অভিযোগ করেন, স্বতন্ত্র পরিচালকরা দৈনিক অফিসে উপস্থিতি ও সম্মানী নেওয়া ছাড়া ব্যাংকের কার্যক্রম উন্নয়নে কোনো বাস্তব পদক্ষেপ নেননি। এমনকি বাংলাদেশ ব্যাংক যখন ব্যাংক মার্জার সংক্রান্ত শুনানির আয়োজন করে, তখনও তাঁকে না জানিয়ে স্বতন্ত্র পরিচালকেরা সেখানে অংশ নেন।

রেজাউল হক প্রশ্ন তোলেন, “উদ্যোক্তা না হয়েও তারা কীভাবে এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়?” তিনি বলেন, “ব্যাংকের হাজার হাজার আমানতকারী, শেয়ারহোল্ডার এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীর ভবিষ্যৎ আজ অনিশ্চিত। এই অবস্থায় গভীর দুঃখের সঙ্গে আমি পরিচালক পদ থেকে পদত্যাগ করছি।”

এদিকে, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক বর্তমানে শরিয়াহভিত্তিক পাঁচ ব্যাংকের একীভূতকরণ প্রক্রিয়ার অন্তর্ভুক্ত। অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ ইতিমধ্যে এই প্রস্তাব অনুমোদন করেছে। একীভূত হতে যাওয়া অন্যান্য ব্যাংক হলো— ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক এবং এক্সিম ব্যাংক।

নতুন ব্যাংকের জন্য দুটি নাম প্রস্তাব করা হয়েছে— ‘ইউনাইটেড ইসলামিক ব্যাংক’ এবং ‘সম্মিলিত ইসলামিক ব্যাংক’। ব্যাংকটি বাণিজ্যিকভাবে এবং পেশাদারিত্বের ভিত্তিতে পরিচালিত হবে।

প্রাথমিকভাবে নতুন ব্যাংকের অনুমোদিত মূলধন নির্ধারণ করা হয়েছে ৪০ হাজার কোটি টাকা এবং পরিশোধিত মূলধন হবে ৩৫ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকার দেবে ২০ হাজার কোটি টাকা— যার অর্ধেক নগদ এবং বাকি অর্ধেক সুকুক বন্ডের মাধ্যমে।

এএসএম/

শেয়ারবাজারের বিশ্লেষণ ও ইনসাইড স্টোরি পেতে আমাদের পেজ ফলো করুন।

পাঠকের মতামত:

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

সর্বোচ্চ পঠিত