ঢাকা, শুক্রবার, ১০ অক্টোবর ২০২৫, ২৫ আশ্বিন ১৪৩২

বিনিয়োগকারীদের স্বস্তি ফেরাবে বিএসইসি’র নতুন নিয়ম

মোবারক হোসেন
মোবারক হোসেন

সিনিয়র রিপোর্টার

২০২৫ অক্টোবর ১০ ১২:৩৭:৪৭

বিনিয়োগকারীদের স্বস্তি ফেরাবে বিএসইসি’র নতুন নিয়ম

মোবারক হোসেন: শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারীদের অভিযোগের চাপ শীঘ্রই কিছুটা কমতে পারে, কারণ সিকিউরিটিজ নিয়ন্ত্রক সংস্থা দেশের দুটি স্টক এক্সচেঞ্জের জন্য নতুন বিরোধ নিষ্পত্তি প্রবিধানমালা অনুমোদন করেছে।

মঙ্গলবার (০৭ অক্টোবর) বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) তাদের এক বৈঠকে 'ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (বিরোধ নিষ্পত্তি) প্রবিধানমালা, ২০২৫' এবং 'চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (বিরোধ নিষ্পত্তি) প্রবিধানমালা, ২০২৫' অনুমোদন করেছে।

বিএসইসি সূত্র জানিয়েছে, এই পদক্ষেপের লক্ষ্য হলো সালিশ প্রক্রিয়াকে দ্রুত করা, ব্রোকার এবং তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে অভিযোগের সংখ্যা কমানো এবং কমিশনের প্রয়োগ সংক্রান্ত কাজের চাপ হ্রাস করা।

বিনিয়োগকারীরা ডুয়া নিউজকে জানিয়েছেন, ব্রোকারেজ হাউজ ও তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর সঙ্গে তাদের প্রায়শই ছোটখাটো সমস্যা হয়, কিন্তু ভয় বা অসুবিধার কারণে তারা অভিযোগ দায়ের করতে দ্বিধা করেন। এমনকি অভিযোগ দায়ের করলেও, সেগুলোর সমাধান হতে অনেক সময় লেগে যায় বা দীর্ঘদিন ঝুলে থাকে। তারা আশা করছেন, নতুন এই ব্যবস্থাটি এই ধরনের সমস্যাগুলো উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস করবে।

নতুন আইনে কী পরিবর্তন আসছে?

নতুন প্রবিধানমালা অনুযায়ী, প্রতিটি স্টক এক্সচেঞ্জ একটি করে সালিশ প্যানেল (বিরোধ নিষ্পত্তি বোর্ড) গঠন করবে এবং একজন রেজিস্ট্রার নিয়োগ দেবে। রেজিস্ট্রার হবেন এক্সচেঞ্জের নিয়ন্ত্রণমূলক বিভাগের একজন ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (ডিজিএম) বা তার উচ্চ পদমর্যাদার কর্মকর্তা।

সালিশ প্যানেলে অবসরপ্রাপ্ত বিচারক, আইনজীবী এবং অভিজ্ঞ শেয়ারবাজার পেশাদাররা থাকবেন। বিনিয়োগকারীরা রেজিস্ট্রারকে একটি নির্ধারিত ফর্মে অভিযোগ দাখিল করতে পারবেন। এরপর রেজিস্ট্রার অভিযোগকারী এবং উত্তরদাতা—যেমন কোনো ব্রোকার বা তালিকাভুক্ত কোম্পানি—উভয় পক্ষের মধ্যে একটি বন্ধুত্বপূর্ণ নিষ্পত্তিতে পৌঁছানোর জন্য আলোচনার সুবিধা দেবেন।

যদি কোনো নিষ্পত্তি না হয়, তবে বিষয়টি সালিশ প্যানেলের কাছে পাঠানো হবে। প্রতিটি পক্ষ অনুমোদিত তালিকা থেকে নিজস্ব সালিশকারী নির্বাচন করবে এবং সাক্ষ্য গ্রহণ ও প্রাসঙ্গিক নথি পর্যালোচনার পর সালিশকারীরা রায় প্রদান করবেন। রায়টি সর্বসম্মতিক্রমে বা সংখ্যাগরিষ্ঠের সিদ্ধান্তে দেওয়া যেতে পারে, যেখানে সংখ্যাগরিষ্ঠের মতামত চূড়ান্ত বলে বিবেচিত হবে। প্রয়োজনে যেকোনো পক্ষ—বিনিয়োগকারী, ব্রোকার বা কোম্পানি—বিএসইসি বা আদালতে আপিল করতে পারবে।

এখন বিনিয়োগকারীরা বিএসইসি-এর অনলাইন অভিযোগ মডিউল এবং সংশ্লিষ্ট স্টক এক্সচেঞ্জের সালিশ ইউনিট—উভয় মাধ্যমে অভিযোগ দায়ের করতে পারবেন। ছোটখাটো বিরোধগুলো নিষ্পত্তির জন্য সংশ্লিষ্ট এক্সচেঞ্জে পাঠানো হবে, যা এক্সচেঞ্জগুলোর সালিশ বিভাগকে শক্তিশালী করবে বলে আশা করা হচ্ছে। এই ব্যবস্থা এক্সচেঞ্জগুলোকে বিনিয়োগকারীদের সমস্যাগুলো আরও ভালোভাবে বুঝতে এবং সেই অনুযায়ী তাদের অভ্যন্তরীণ পরিচালন কাঠামো উন্নত করতে সাহায্য করবে।

দীর্ঘদিনের প্রয়োজনীয় আইনি পরিবর্তন

স্টক এক্সচেঞ্জের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এই ধরনের বিরোধ নিষ্পত্তি প্রক্রিয়া চালু করার উদ্যোগ ২০১৯ সাল থেকেই ঝুলে ছিল। সরকারি গেজেটে প্রকাশের পরই এই প্রবিধানমালা কার্যকর হবে।

বিএসইসি-এর মুখপাত্র মো. আবুল কালাম এ বিষয়ে গণমাধ্যমকে বলেন, "সালিশ প্যানেলগুলো কার্যকর হলে, অনেক বিনিয়োগকারী অভিযোগ প্রাথমিক পর্যায়েই নিষ্পত্তি হয়ে যাবে, যার ফলে কমিশনের উপর চাপ কমবে।" তিনি আরও যোগ করেন, বিএসইসি-কে বর্তমানে বিপুল সংখ্যক অভিযোগ তদন্ত এবং শুনানির ব্যবস্থা করতে হয়। "এই প্রবিধানগুলো যদি আগে চালু থাকত, তবে অনেক বিরোধ এক্সচেঞ্জ স্তরেই নিষ্পত্তি করা যেত," তিনি মন্তব্য করেন।

তার মতে, এই ধরনের প্রক্রিয়া আগে থাকলে অসাধু ব্রোকারদের দ্বারা বিনিয়োগকারীদের ক্যাশ তছরুপের অনেক ঘটনা প্রতিরোধ করা যেত। তিনি আরও উল্লেখ করেন যে, সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিন্যান্স, ১৯৬৯ অনুযায়ী, বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য স্টক এক্সচেঞ্জগুলোর নিজস্ব প্রবিধান প্রণয়নের ক্ষমতা রয়েছে। অতএব, সালিশ প্যানেলগুলোর রায়ের একটি শক্তিশালী আইনি ভিত্তি থাকবে।

এএসএম/

শেয়ারবাজারের বিশ্লেষণ ও ইনসাইড স্টোরি পেতে আমাদের পেজ ফলো করুন।

পাঠকের মতামত:

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

সর্বোচ্চ পঠিত

আজকের (১০ অক্টোবর) মুদ্রা বিনিময় হার

আজকের (১০ অক্টোবর) মুদ্রা বিনিময় হার

ডুয়া ডেস্ক: বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণের সঙ্গে সঙ্গে বিদেশি মুদ্রার সঙ্গে টাকার বিনিময় হারও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। প্রতিদিনের লেনদেনে ব্যবসায়ী... বিস্তারিত